উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন স্থগিত করলেন শিক্ষার্থীরা

1 week ago 8

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। পরে উপাচার্যের আশ্বাসে এ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন তারা। 

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে অনশন শুরু করেন তারা। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর শুক্রবার দুপুর একটার দিকে কর্মসূচি স্থগিত করেছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে এবারের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আমরণ অনশন শুরু করেন তিনজন শিক্ষার্থী। এরপর ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনশনে অংশ নেন।

পরে শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান ও আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। একপর্যায়ে তারা আলোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানান। তবে শিক্ষার্থীরা সেটি প্রত্যাখ্যান করেন। 

এ সময় প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ভর্তির যাবতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটা ভর্তি কমিটি আছে। এখানে ইনস্টিটিউট, বিভাগীয় প্রধান, ডিন, সিন্ডিকেট সদস্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রায় ৯০ জন সদস্য আছে। কোটার এই সিদ্ধান্ত ভর্তি কমিটিরই সিদ্ধান্ত। উপাচার্য একা একটা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারেন না। কোনো সিদ্ধান্ত যদি আমরা চাপিয়ে দিই তবে আমরাও ফ্যাসিস্ট প্রশাসনে পরিণত হব। আমরা কোটার যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনার পক্ষে। সবাই মিলে যদি একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারি, সেটি আরও বেশি সুন্দর হয়। আমাদের ছেলেরা যে দাবি করছেন, আমরা তাদের সঙ্গে একমত এবং সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপউপচার্যদ্বয় অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন ও অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম কনক, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান, জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার প্রমুখ। 

উপাচার্য এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ পোষ্য কোটার বিষয়ে কথা বলেন। পরে কোটার বিষয়ে আগের বিজ্ঞপ্তি বাতিল এবং রিভিউ কমিটি গঠনের আশ্বাস দিলে আগামী সোমবার পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করেন শিক্ষর্থীরা। এ সময় জুস এবং বিস্কুট খাইয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব।

শিক্ষার্থীদের পোষ্য কোটা বাতিলের আশ্বাস দিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা বিষয়ে একটি রিভিউ কমিটি হয়েছে। রিভিউ কমিটির সিদ্ধান্তের আগে পোষ্য কোটার বিষয়টি চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে না। এ ছাড়া গতকালকের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিটি আপাতত স্থগিত করা হল। রিভিউ কমিটিতে পোষ্য কোটা পরিবর্তনের একটা সিদ্ধান্ত আসবে বলে উপাচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন।  

অনশনে অংশ নেওয়া রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সদস্য সচিব আমানুল্লাহ খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, বর্তমান যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে (৪ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ) সেটা আপাতত স্থগিত হবে। আগামীকাল তারা একটা রিভিউ কমিটি দেবেন। এই কমিটি আগামী সোমবারের মধ্যে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। যদি সেই সিদ্ধান্ত আমাদের দাবির পক্ষে না যায় তখন আমরা আবার আন্দোলনে বসব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও উপস্থিত শিক্ষার্থীদের প্রতি মর্যাদা রেখে আমরা আপাতত অনশন ভঙ্গ করেছি। দাবি আদায় না হলে আমরা আরও কঠিন কর্মসূচিতে যাব।

Read Entire Article