এআই ধনীদের আরও ধনী করবে, শ্রমিকরা হবে বেকার: জিওফ্রে হিন্টন

3 hours ago 3

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অন্যতম জনক হিসেবে পরিচিত জিওফ্রে হিন্টন সতর্ক করে বলেছেন, এই প্রযুক্তির উত্থান বিশ্বজুড়ে কোম্পানিগুলোকে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি মুনাফা এনে দেবে, আর তার খেসারত দিতে হবে শ্রমিকদের। বিপুলসংখ্যক মানুষের চাকরি হারানোর ফলে ভয়াবহ বেকারত্ব তৈরি হবে।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ধনীরা এআই ব্যবহার করে শ্রমিকদের প্রতিস্থাপন করবে। এর ফলে ব্যাপক বেকারত্ব তৈরি হবে ও কোম্পানির মুনাফা হু-হু করে বাড়বে। কয়েকজন আরও ধনী হবে, আর অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়বে। এর দায় এআইয়ের নয় বরং পুঁজিবাদী ব্যবস্থার।

হিন্টন, যিনি গত বছর নোবেল পুরস্কার জয় করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন যে নিয়ন্ত্রণহীন এআই বিশ্ব অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে। তার ভাষ্য, এখন আমরা এমন এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে কিছু অসাধারণ ঘটছে। কিন্তু সেটি ভালোও হতে পারে, আবার ভয়াবহও হতে পারে। আমরা জানি না সামনে কী ঘটবে, আর যারা দাবি করছে তারা জানে, তারা আসলে হাস্যকর কথা বলছে, বলেন তিনি।

হিন্টনের মতে, ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি অনুমান করা সম্ভব হলেও বর্তমান অবস্থা আর আগের মতো থাকবে না। তিনি আরও মনে করিয়ে দেন, আগে থেকেই তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, যদি এআই চ্যাটবটগুলো নিজস্ব ভাষা বিকাশে সক্ষম হয়, তবে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। তিনি বলেন, এআই এরই মধ্যে প্রমাণ করেছে যে এটি ভয়ংকর চিন্তাভাবনা করতে পারে, আর একসময় এমন ভাবনাও তৈরি করতে পারে, যা মানুষের পক্ষে বোঝা বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

হিন্টনের সতর্কবার্তার পাশাপাশি আরেক বিশেষজ্ঞও ভয়াবহ পূর্বাভাস দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের লুইভিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান অধ্যাপক রোমান ইয়ামপলস্কি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যেই এআই প্রযুক্তি ৯৯ শতাংশ মানুষকে বেকার করে দিতে পারে। তার মতে, কেবল সাধারণ শ্রমিকই নয়, কোডার বা প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরিও এর কবল থেকে রক্ষা পাবে না।

তিনি বলেন, আমরা এমন এক পৃথিবীর দিকে যাচ্ছি যেখানে আগে কখনো দেখা যায়নি এমন মাত্রায় বেকারত্ব দেখা দেবে। এটি ১০ শতাংশ বেকারত্বের মতো ভয়ংকর নয়, বরং ৯৯ শতাংশ। ইয়ামপলস্কির অনুমান, মানবসদৃশ বুদ্ধিমত্তা বা কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা (এজিআই) ২০২৭ সালের মধ্যেই হাজির হতে পারে।

তার মতে, একবার সব চাকরি স্বয়ংক্রিয় হয়ে গেলে, কোনো বিকল্প পরিকল্পনা বা পুনঃপ্রশিক্ষণও কার্যকর হবে না। কারণ চাকরি মানুষকে শুধু আয়ই দেয় না, পাশাপাশি দেয় সামাজিক কাঠামো, মর্যাদা ও সম্প্রদায়ের অনুভূতি। আর কর্মসংস্থান হারিয়ে গেলে সমাজকে বৃহৎ পরিসরে এই চারটি বিষয় নতুনভাবে তৈরি করতে হবে।

সূত্র: ফিনান্সিয়াল টাইমস

এসএএইচ

Read Entire Article