এক দিনে ৩ শতাধিক ব্যাংক কর্মীকে ছাঁটাই

5 hours ago 1

এক দিনে তিন শতাধিক কর্মীকে ছাঁটাইয়ের নোটিশ ধরিয়ে দিয়েছে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি। টানা ২৪ বছর চাকরিজীবনের শেষ প্রান্তে চলে আসা কর্মীরাও বাদ যাননি এই তালিকা থেকে। আকস্মিক ওই খবরে অনেকেই হতভম্ব হয়ে পড়েছেন। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় তাদের নির্ঘুম রাত কাটছে।

এমনিতেই বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। এমন সময় নতুন করে চাকরি পাওয়া অনেকের জন্য কঠিন মনে করছেন তারা।

দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) বাংলাদেশে খুচরা (রিটেইল) ব্যাংকিং সেবা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় গত ৩০ জুলাই। তার কয়েক দিনের মাথায় একসঙ্গে অব্যাহতির খবর জানিয়ে দেওয়া হয়। 

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এইচএসবিসি ১৯৯৬ সালে ঢাকায় প্রথম শাখা চালু করে। বর্তমানে ঢাকায় ৪টি, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ২টিসহ সারা দেশে সাতটি শাখা-উপশাখা এবং ১১ টি এটিএম বুথ রয়েছে। এ ছাড়া পাঁচটি ‘সিলেকট’ সেন্টারের মাধ্যমে বিশেষ ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছিল। এসব শাখার হিসাবধারীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের আমানত সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। খুচরা ব্যাংকিং সেবার মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত হিসাব, গাড়ির ঋণ, বাড়ি কেনার ঋণ, বিমাসেবা, মেয়াদি বিনিয়োগ, ব্যক্তিগত অর্থায়ন। এর মধ্যে প্রচলিত ও শরিয়াহ দুই ধরনের সেবা রয়েছে। এসব সেবায় এখন নতুন গ্রাহক যুক্ত করা বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংকটি।

২০২৪ সাল শেষে এইচএসবিসি বাংলাদেশের আমানত ছিল ২২ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা এবং ঋণ ও অগ্রিম ছিল ১৮ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। ওই বছর ১ হাজার ৮৬ কোটি টাকা রেকর্ড মুনাফা করেছে।

ব্যাংকের আর্থিক বিবরণীতে বলা হয়েছে, সুদের আয় বৃদ্ধি, আমানতের খরচ কমা এবং বিনিয়োগ থেকে ভালো আয় হওয়ায় রেকর্ড মুনাফা করা সম্ভব হয়েছে। আমানতের ওপর সুদ ২০ শতাংশ কমে হয়েছে ৬১৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া ঋণ থেকে সুদের আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। তারপরও কেনো রিটেইল ব্যাংকিং বন্ধ করা হচ্ছে সে নিয়ে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

রিটেইল ব্যাংকিং সেবা বন্ধ হওয়ায় সাধারণ আমানতকারীরা কিছুটা হয়রানির শিকার হবেন। তবে বড় বিড়ম্বনায় পড়বেন ঋণগ্রহীতা এবং উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। কারণ তাদের বেশ কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে স্টুডেন্ট ফাইল খুলতে হয়, এখন মাঝপথে এসে অন্য কোনো ব্যাংকে স্থানান্তর করা অনেক জটিল এবং বিড়ম্বনা তৈরি করবে। আদৌ এটা বাস্তবসম্মত কি না, তা নিয়ে সন্দেহের কথা জানিয়েছেন অনেকে।

এইচএসবিসি ব্যাংক মহামারি করোনার সময়ে থেকে নানা রকম বিতর্কের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। করোনা-পরবর্তী ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে একসঙ্গে ১১৪টি শাখার বন্ধ করে দেয়। এতে অনেক কর্মী বেকার হয়ে পড়েন। আবার ব্যাংকটির বাংলাদেশের শাখার মাধ্যমে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ উঠেছিল একসময়।

চাকরি হারানোর নোটিশ পাওয়া কর্মীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। তারা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি-দাওয়া নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির বিষয়ে সম্মান দেখাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

ধানমন্ডি শাখায় কর্মরত এক কর্মকর্তা বলেন, সম্ভবত তিন শতাধিক কর্মীকে ছাঁটাইয়ের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের বলা হয়েছে ৩১ মার্চ আপনাদের শেষ কর্মদিবস। চাইলে আগেও রিজাইন দিয়ে চলে যেতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, একেকজনকে একেক রকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে আমরা যেসব বিষয়ে দাবি জানিয়েছি কর্তৃপক্ষ তা মানতে চাচ্ছে না। আমাদের দাবি-দাওয়া আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

এইচএসবিসি ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের নওরিন ইসলাম জানান, বিষয়গুলো ব্যাংকের গোপনীয় তথ্য। এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়ার সুযোগ নেই।

সূত্র : বার্তা২৪

Read Entire Article