এস ইসলাম (লন্ডন থেকে)
লন্ডনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে সুবিশাল রিচমন্ড পার্কের ভেতরে লুকিয়ে আছে এক ভূ-স্বর্গ— ইসাবেলা প্লান্টেশন। বসন্তের এক পড়ন্ত বিকেলে যাত্রা করি। প্রথমে ডিস্ট্রিক্ট লাইনে ইস্টহাম হতে পাটনী স্টেশন। ওখান হতে ৮৫ নম্বর বাসে করে ওয়ারেন্ট রোড কোম্বি বাস স্টেশন। বাস স্টেশনে নেমে বড় রাস্তাটি পার হয়ে বেশ কিছুদূর হাঁটার পর রিচমন্ড পার্কের গেট। পনেরো বিশ মিনিট ঘন বিস্তীর্ণ ফার্নের মাঠ পেরিয়ে ইসাবেলা প্লান্টেশনের গেট।
অত্যন্ত সাদা মাটা গেট। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই এর ভেতর প্রকৃতির কি অপরূপ সৌন্দর্য লোকায়িত। গেটের ভেতর ঢুকতেই মনে হলো এ যেন ফুলের সমুদ্র। চারপাশে অসংখ্য আজালিয়া আর রোডোডেনড্রন ফুলে ভরে গেছে। গোলাপি, লাল, সাদা, বেগুনি— এত রঙ একসাথে দেখার অভিজ্ঞতা বিরল। বাতাসে মিশে আছে এক অদ্ভুত মিষ্টি সুগন্ধ, যা প্রতিটি শ্বাসে এনে দিচ্ছে বসন্তের আমেজ।
কোলাহলহীন, শান্ত সরু পথ ধরে হাঁটছি। হরেক রকমের ফুলের মাঝে নানা দেশি লোকের সমাগম। ইউরোপিয়ান, আফ্রিকান, চাইনিজ, ইন্ডিয়ান, আরবি আবার বাঙালিও।
বাঙালিদের মধ্যে কেউ কেউ বলছে আহ! কি সুন্দর! এ যেন স্বর্গ। নানা জাতির নানা বর্ণের বাচ্চারাও যেন এ ফুলের সমুদ্রে একেকটা ফুল। হাঁটতে হাঁটতে এক সময় পৌঁছে যাই ছোট্ট ঝর্ণাধারা আর স্বচ্ছ পুকুরের পাশে। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। ছোট্ট পুকুরটার স্বচ্ছ ও স্থির জলে প্রতিফলিত হচ্ছিল ফুলের বর্ণিল ছটা। মনে হচ্ছিল যেন চিত্রকরের তুলি দিয়ে আঁকা কোনো জীবন্ত ক্যানভাস। মন না চাইলেও এগিয়ে যাই।
সরু পথের দুধারে এখানে সেখানে আজালিয়া ফুলের গাছ। নুয়ে পড়া ডালে নানান রঙের ফুল। পথে পথে মানুষের হাসি, শিশুদের কৌতূহলী দৌড়ঝাঁপ আর পাখির ডাক মিলেমিশে পুরো পরিবেশটাকে আরও সজীব করে তুলেছিল। বসন্ত যেন একেবারে হৃদয় ভরিয়ে দিয়েছিল সেদিন।
মন না চাইলেও একসময় বিদায় নিতে হয়। আবার সরু রাস্তা ধরে হেঁটে মেইন গেটের দিকে অগ্রসর হই। মেইন গেটের কাছেই একটা মোটামুটি বড় জলাশয়। এ জলাশয়ের তীরে রয়েছে কাশ জাতীয় সবুজ জলজ ঘাস।
কিছু বন্য পাখ-পাখালি আর হাঁস মনের আনন্দে সাঁতার কাটছে। আবার ঘন ফার্নের বনের বুক চিরে সরু রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকি রিচমন্ড পার্কের মধ্যে দিয়ে। মনে মনে ভাবছিলাম যে, রিচমন্ড পার্কে আসলাম অথচ হরিণ দেখা হল না! না, আমাকে নিরাশ হতে হয়নি। আমার থেকে অনতি দূরে একটা হরিণ দেখি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে! আমি দাঁড়িয়ে যাই। হরিণটার সাথে চোখাচোখি হয়। সে নির্ভীক। বেশ কয়েক মিনিটের ভিডিও করি। এক সময় যে গাছের আড়ালে ঘন ঝোপে হারিয়ে যায়। আমিও বাড়ির পথ ধরি।
ইসাবেলা প্লান্টেশন শুধু একটি বাগান নয়, বরং প্রকৃতির এক উজ্জ্বল কবিতা। বসন্তকালে সেখানে গেলে মনে হয়, প্রকৃতি নিজেই নতুন করে জন্ম নেয় রঙের উৎসবে।
এমআরএম/এমএস