এক যাযাবরের বিশ্বজয়ের গল্প
প্রায় ৮০০ বছর আগে, এশিয়ার বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে জন্ম নিয়েছিল এক শিশু। নাম ছিল তেমুজিন। পরে পৃথিবী তাকে চিনেছে চেঙ্গিস খান নামে। তিনি কোনো রাজপরিবারে জন্মাননি, পাননি শক্তিশালী কোনো উত্তরাধিকার। ছিলেন একজন সাধারণ মঙ্গোল যাযাবরের সন্তান। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিই গড়ে তুলেছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যগুলোর একটি।
তেমুজিনের শৈশব মোটেও সুখের ছিল না। ছোট বয়সেই শত্রুরা তার বাবাকে হত্যা করে। পরিবার পড়ে যায় চরম অনিশ্চয়তায়। খাবার, আশ্রয় - সব কিছুর অভাব ছিল। সমাজের অবহেলা আর দারিদ্র্যের মধ্যেই বড় হতে থাকে সে। এই কঠিন সময়ই তাকে ভেতর থেকে শক্ত করে তোলে।
ছোটবেলা থেকেই তাকে শিখতে হয়েছে টিকে থাকার লড়াই। লেখাপড়া করার সুযোগ তার হয়নি। তবে সে শিখেছিল মানুষকে বোঝা, পরিস্থিতি বিচার করা আর সুযোগ কাজে লাগানো। ধীরে ধীরে সে একজন যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত হতে শুরু করে।
তরুণ বয়সে তাকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। পরিবার ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সে এমন কিছু কাজ করেছে, যা নিয়ে আজও বিতর্ক আছে। এসব ঘটনাই তার চরিত্রে কঠোরতা এনে দেয়। কিন্তু একই সঙ্গে গড়ে ওঠে একজন দৃঢ় নেতা, যে পিছিয়ে যেতে জানে না।
বছরের পর বছর যুদ্ধ, জো
প্রায় ৮০০ বছর আগে, এশিয়ার বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে জন্ম নিয়েছিল এক শিশু। নাম ছিল তেমুজিন। পরে পৃথিবী তাকে চিনেছে চেঙ্গিস খান নামে। তিনি কোনো রাজপরিবারে জন্মাননি, পাননি শক্তিশালী কোনো উত্তরাধিকার। ছিলেন একজন সাধারণ মঙ্গোল যাযাবরের সন্তান। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিই গড়ে তুলেছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যগুলোর একটি।
তেমুজিনের শৈশব মোটেও সুখের ছিল না। ছোট বয়সেই শত্রুরা তার বাবাকে হত্যা করে। পরিবার পড়ে যায় চরম অনিশ্চয়তায়। খাবার, আশ্রয় - সব কিছুর অভাব ছিল। সমাজের অবহেলা আর দারিদ্র্যের মধ্যেই বড় হতে থাকে সে। এই কঠিন সময়ই তাকে ভেতর থেকে শক্ত করে তোলে।
ছোটবেলা থেকেই তাকে শিখতে হয়েছে টিকে থাকার লড়াই। লেখাপড়া করার সুযোগ তার হয়নি। তবে সে শিখেছিল মানুষকে বোঝা, পরিস্থিতি বিচার করা আর সুযোগ কাজে লাগানো। ধীরে ধীরে সে একজন যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত হতে শুরু করে।
তরুণ বয়সে তাকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। পরিবার ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সে এমন কিছু কাজ করেছে, যা নিয়ে আজও বিতর্ক আছে। এসব ঘটনাই তার চরিত্রে কঠোরতা এনে দেয়। কিন্তু একই সঙ্গে গড়ে ওঠে একজন দৃঢ় নেতা, যে পিছিয়ে যেতে জানে না।
বছরের পর বছর যুদ্ধ, জোট গড়া আর বিশ্বাসঘাতকতার ভেতর দিয়ে তেমুজিন একসময় মঙ্গোল গোত্রগুলোকে একত্র করেন। তখনই তিনি পান নতুন পরিচয় - চেঙ্গিস খান। এই নামের সঙ্গে জড়িয়ে যায় শাসন আর ক্ষমতা।
চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে মঙ্গোল সেনাবাহিনী একের পর এক অঞ্চল জয় করতে থাকে। চীন, মধ্য এশিয়া, ইরান, রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের বিশাল অংশ তার নিয়ন্ত্রণে আসে। তার সাম্রাজ্য এত বড় ছিল যে আয়তনে তা অনেক মহাদেশের সঙ্গে তুলনা করা হয়।
তিনি নিজে সামনে থেকে যুদ্ধ করতেন না সবসময়, কিন্তু যুদ্ধের কৌশলে ছিলেন অসাধারণ। সৈন্যদের শৃঙ্খলা, দ্রুত আক্রমণ আর ভয় সৃষ্টি করার কৌশল তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছিল। শত্রুরা তার নাম শুনেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ত।
তবে এই বিশ্বজয়ের পথে ছিল ভয়ংকর নিষ্ঠুরতা। বহু শহর ধ্বংস হয়েছে, অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এসব কারণে চেঙ্গিস খান ইতিহাসে সবচেয়ে কঠোর শাসকদের একজন হিসেবে পরিচিত। আবার একই মানুষ কখনো কখনো আশ্চর্য রকমের উদারতাও দেখিয়েছেন। এক কৃষকের কষ্ট দেখে তার কর মাফ করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ইতিহাসে আছে।
তার জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল ভারত সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছানো। তিনি সিন্ধু নদীর তীরে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারত আক্রমণ করেননি। প্রচণ্ড গরম, ঘোড়া ও খাদ্যের অভাব, সৈন্যদের অসুস্থতা- সব মিলিয়ে তিনি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবেই ভারত তার সরাসরি আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়।
জীবনের শেষ দিকে চেঙ্গিস খান অসুস্থ হয়ে পড়েন। মৃত্যুশয্যায় তিনি তার সন্তানদের ডেকে বলেন, জীবন ছোট, কিন্তু ঐক্য থাকলে সাম্রাজ্য টিকে থাকবে। তিনি তাদের সবচেয়ে বড় শিক্ষা দিয়েছিলেন - ভাইয়ে ভাইয়ে বিভেদ হলে সব শেষ হয়ে যাবে।
১২২৭ সালে এই যাযাবর বিজেতার মৃত্যু হয়। তিনি চলে যান, কিন্তু রেখে যান এক বিশাল সাম্রাজ্য এবং এক জটিল উত্তরাধিকার।
চেঙ্গিস খান ছিলেন একদিকে নিষ্ঠুর, অন্যদিকে অসাধারণ সংগঠক ও নেতা। দারিদ্র্য আর অবহেলা থেকে উঠে এসে বিশ্বজয় - তার জীবন প্রমাণ করে, ইতিহাস অনেক সময় গড়ে ওঠে সবচেয়ে কঠিন বাস্তবতা থেকে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা