এক সেতুর অভাবে দুর্ভোগে তিন উপজেলার মানুষ

3 hours ago 5
সরকার আসে সরকার যায়, তবুও ভাগ্য বদল হয় না সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর ও দিরাই উপজেলার মিলনস্থল চণ্ডিডহর নামক এলাকার আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের লাখো মানুষের। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে অবকাঠামোগত উন্নয়নে দেশের চিত্র আমূল পাল্টে গেলেও ভাগ্য বদল হয়নি চণ্ডিডহর পাড়ের বাসিন্দাদের।  একটি সেতুর অভাবে সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব দিকে পিছিয়ে আছেন শান্তিগঞ্জ উপজেলাসহ তিন উপজেলার অন্তত ৫ লক্ষাধিক মানুষ। স্বাধীনতার পর থেকে এই তিন উপজেলার মানুষ বিভিন্ন সময়ে ৫ জন প্রভাবশালী মন্ত্রী পেলেও চণ্ডিডহর ব্রিজ বাস্তবায়নে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে পারেননি কেউই। ফলে আক্ষেপের সুরে এই এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ‘রাজা আসে রাজা যায়, আমাদের আর দুর্দশা ফুরোয় না।’ জানা যায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম পাইকাপন, জগন্নাথপুর উপজেলার তেলিকোনা এলাকা ও দিরাই উপজেলার হোসেনপুর বাজারকে পৃথক করেছে মহাসিং নদী, ডাউকা নদী ও খামারখাল নদীর মোহনা। তিন উপজেলাকে পৃথক করা এই মোহনাকে চণ্ডিডহর নামে অভিহিত করেন স্থানীয়রা।  সরেজমিন চণ্ডিডহরে দেখা যায়, হোসেনপুর বাজার থেকে প্রতিদিন স্টিলের একটি ট্রলার যাত্রীবোঝাই করে নদী পারাপারের জন্য ছেড়ে যায়। প্রথমে পাইকাপন পাড়ে যাত্রী ওঠানামার কাজ শেষ করে পরে জগন্নাথপুরের তেলিকোনার পাড়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় যাত্রীবোঝাই ট্রলারটি। একইভাবে তেলিকোনা পাড় থেকে যাত্রী নিয়ে পাইকাপন পাড়ে যাত্রীর ওঠানামার কাজ শেষে হোসেনপর বাজার পাড়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।  জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন তিন উপজেলার শত শত স্কুল-মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী, হোসেনপুর বাজারে আসা ক্রেতা ও ব্যবসায়ীসহ অসংখ্য মানুষ চণ্ডিডহর পার হন এই নৌকায় চড়ে। এ ছাড়াও ফেরি করা ওই ট্রলারেই পারাপার হয় অসংখ্য নৌকা। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।  শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাইকাপন গ্রামের বাসিন্দা ও আলহাজ আব্দুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবাইয়া বেগম, মাহবুবা আক্তার ও রুবেল জানান, প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে করে চণ্ডিডহর পার হতে হয়। অনেক সময় নৌকা ডুবে যায়। এ ছাড়া পারাপারে বিলম্বের কারণে অনেক সময় নির্ধারিত সময়ে ক্লাসে বা পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে পারি না। এতে স্যারদের বকা শোনার পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার চরম ব্যাঘাত ঘটছে।  ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান জীবান বলেন, চণ্ডিডহরে ব্রিজ না থাকায় আমরা সিলেট-সুনামগঞ্জের সঙ্গে সড়কপথে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করতে পারি না। ফলে সিলেট বা অন্য কোনো জায়গা থেকে নিত্যপণ্যের জিনিস আমরা যে দামে কিনে আনি তার সঙ্গে বহন খরচ যোগ করে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে যায়। এতে আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হই তেমনই ক্রেতারাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। স্থানীয় মজু মিয়া, সেলাল মিয়া ও রওশন আলী বলেন, 'যুগ যুগ ধরে আমরা তিন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ দাবি করে আসছি চণ্ডিডহরে একটি সেতু নির্মাণ করার জন্য। একটি সেতুর অভাবে আমরা কতটা দুর্দশায় আছি, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে শত শত মানুষ পারাপার করেন। অনেক সময় নৌকা ডুবে যায়। আবার ইমার্জেন্সি রোগী পারাপারেও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কিছুদিন আগেও এক ডেলিভারি রোগীকে সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারায় পথেই শিশুটি মারা যায়।  হতাশা প্রকাশ করে তারা বলেন, ভোটের সময় এলেই কেবল নেতারা আমাদের ভোটের আশ্বাস দেন। কিন্তু আমাদের কাঙ্ক্ষিত ব্রিজ আর বাস্তবায়ন হয় না। বিভিন্ন সময় সরকারি দপ্তরের লোক এসে মাটি পরীক্ষা, ব্রিজের মেজারমেন্টের কাজ করে যান। শুনেছি অনেক বড় বাজেটে সেতুটি করা হবে। কিন্তু আমরা এখনো দৃশ্যমান কোনো কাজ দেখতে পারছি না। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের দাবি, অতি দ্রুত আমাদের দুর্দশার কথা চিন্তা করে চণ্ডিডহর সেতুর অনুমোদন দেওয়া হোক। সুনামগঞ্জ জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, আগের সরকারের সময় ৬১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুসহ দিরাইয়ের জগদল ইউনিয়নের সড়কে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে, এখনো অনুমোদন পাইনি। প্রকল্প পাস হলে আমরা কাজ করতে পারতাম।
Read Entire Article