জন্ম থেকে বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। বাবা-মা বেঁচে নেই। ট্রেন দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন এক হাত ও এক পা। এতকিছুর পরও ছাড় দেয়নি জীবনের নির্মমতা। এখন দুটি কিডনিই নষ্ট ২৫ বছর বয়সী রিনার। তবে হারতে রাজি নন জীবনযুদ্ধে লড়ে যাওয়া এই তরুণী।
বর্তমানে রিনা বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে এবং চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। অর্থের অভাবে তার চিকিৎসা প্রায় থমকে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার পুটিয়াখালী গ্রামের রিনা শুধু একজন বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধীই নয়, তার জীবন নানা দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে কেটেছে। ছোটবেলায় খুলনায় রেললাইনে খেলতে গিয়ে ট্রেনের হর্ন শুনতে না পেয়ে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ডান হাত ও ডান পা হারায়। এরপরও সে জীবন সংগ্রামে টিকে ছিল। কিন্তু এখন তার কিডনি নষ্ট হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।
এলাকাবাসী জানান, রিনার দুঃখের শুরু ছোটবেলা থেকেই। ২০১০ সালে বাবা মোজাম্মেল হককে হারানোর পর রিনা ও তার বড় বোন শিরিন মায়ের সঙ্গে রাজাপুরের পুটিয়াখালী গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। তাদের মা জয়নব বিবি ভিক্ষা করে সংসার চালাতেন। কিন্তু এক বছরের মাথায় মাও মারা যান। এরপর দুই বোন অর্ধাহারে-অনাহারে একটি ঝুপড়ি ঘরে কোনোমতে দিন কাটাতেন। ঝড়-বৃষ্টি এলে সেই ঘরে পানি ঢুকতো, তখন তাদের আশ্রয় নিতে হতো প্রতিবেশীর বাড়িতে।
জানা যায়, রিনার এই করুণ অবস্থা দেখে স্থানীয় কলেজছাত্র মেহেদী হাসান এবং সমাজসেবক সাহাদাত হোসেন তাদের পাশে দাঁড়ান। তাদের উদ্যোগে জেলা প্রশাসন থেকে ঢেউটিন ও নগদ টাকা দেওয়া হয়, যা দিয়ে তাদের ঘর মেরামত করা হয়েছিল। সমাজের বিভিন্ন মানুষের সহায়তায় রিনার জন্য একটি তহবিল গঠন করা হয় এবং সেই তহবিল থেকে তাকে একটি কৃত্রিম পা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই পা বেশিদিন টেকেনি। আবারো এক দানশীল ব্যক্তির সাহায্যে তিনি একটি কৃত্রিম পা পান।
আরও পড়ুন-
যাত্রীকে খুঁজে ১০ ভরি সোনার গয়না ফিরিয়ে দিলেন অটোরিকশা চালক
ভ্যান হারিয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খেয়ে দিন কাটছে আরিফের
ছেলেকে নিজের কিডনি দিতে চান মা, বাধা প্রতিস্থাপন খরচ
কলেজছাত্র মেহেদী হাসান বলেন, রিনার এই পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই। তিনি সমাজের বিত্তবান মানুষদের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন যেন তারা রিনার পাশে দাঁড়ান।
তিনি বলেন, ইশারায় রিনা বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি ভালো নেই। তার চোখের ভাষা বলে দেয়, শরীর আর মনের এই কষ্ট নিয়েও তার বেঁচে থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, রিনা খুব অসহায় অবস্থায় আছেন। তিনি প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও তা দিয়ে তার খাবারের খরচও চলে না।
মো. আতিকুর রহমান/কেএইচকে/এফএ/এএসএম