একটি বুলেটের কাছে বন্দি সালমানের জীবন

2 weeks ago 14

মেরুদণ্ডে বুলেটের যন্ত্রণা নিয়ে দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত মুহাম্মদ সালমান।

গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হন তিনি। এরপর থেকে সালমান শারীরিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে নিরন্তর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

একটি বুলেটের কাছে সালমানের ভাগ্য এখন ঝুলে আছে। জীবন মৃত্যুর এই লড়াই থেকে মুক্তি দিতে কোনো চিকিৎসকই এখন পর্যন্ত তার মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচার করতে রাজি হননি। ফলে তার বাবা-মা এখন চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।

সালমানের বাবা মুহাম্মদ রবি বলেন, আমরা সম্ভাব্য সব চিকিৎসক এবং হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো পথ খুঁজে পাইনি। আমাদের ছেলে তার শরীরের বেশিরভাগ অংশে চব্বিশ ঘণ্টাই তীব্র ব্যথায় ভুগছে।

তিনি জানান, গুলিটি খাদ্যনালি এবং অন্ত্রের মধ্য দিয়ে মারাত্মকভাবে তার মেরুদণ্ডে বিদ্ধ হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা গত ৫ আগস্ট চার ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করেও গুলি বের করতে পারেননি।

বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজের দর্শন বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র মুহাম্মদ সালমান (২১) প্রথম থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি মহানগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানার অন্তর্গত বাশারী এলাকার বাসিন্দা।

আলুপট্টিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গুলিতে সালমান আহত হন। আন্দোলনের সহযোদ্ধারা তাকে দ্রুত রামেক হাসপাতালে নিয়ে যান এবং বিকেলে তাকে সেখানে ভর্তি করেন।

বিক্ষোভে যোগদান ছাড়াও, তিনি তার বন্ধুদের আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করতেন এবং ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও তিনি ব্যাপক প্রচারণা চালাতেন।

সালমানের শৈশবের অন্যতম বন্ধু ও সহপাঠী আহমেদ নূর বলেন, অন্যান্য দিনের মতো ৫ আগস্ট সকালে সালমান তার বন্ধুদের ডেকে তালাইমারী ক্রসিংয়ে জড়ো করেন। সেখানে তিনি নিজের টাকায় বন্ধুদের জন্য জাতীয় পতাকা কিনে আনেন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের জারি করা কারফিউ ভেঙে আলুপট্টির দিকে যাত্রা শুরু করেন।

আলুপট্টিতে যাওয়ার পথে রাস্তার পাশের ১৭ তলা ভবন স্বচ্ছ টাওয়ারের ওপর থেকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের লোকজন ছাত্রদের মিছিলে স্নাইপার হামলা চালায়। এ সময় সালমানসহ তার অনেক সহপাঠী পেটের বাম পাশে গুলিবিদ্ধ হন। সেসময় নগরীর রাস্তায় তীব্র ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।

সালমান বলেন, জানি না আমি আর কোনোদিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবো কি না। আমি এবং আমার পরিবারের সকল সদস্য এখনো এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগের মধ্যে রয়েছি।

তিনি বলেন, রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা মারাত্মকভাবে ছিঁড়ে যাওয়া আমার অন্ত্রটি মেরামত করেছেন। কিন্তু বুলেটটি আমার মেরুদণ্ডে রয়ে গেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন হলেও গুলিবিদ্ধ ছাত্র সালমান এখনো উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।

সালমানের মা শিখা বেগম শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, যারা আওয়ামী ও যুবলীগের লোকজনকে মানুষ হত্যার নির্দেশ দিয়েছে এবং গণহত্যার জন্য দায়ী তাদের যথাযথ বিচারের আওতায় আনা উচিত।

Read Entire Article