দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এক কার্যদিবস দাপট দেখানোর পরই দেশের শেয়ারবাজারে বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের ঢালাও দরপতন হয়েছে। অধিকাংশ বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম কমায় অন্যান্য খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে কমেছে মূল্যসূচক। তবে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (১৭ মার্চ) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন বেড়ে ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় কমেছে সবকটি মূল্যসূচক। এর মাধ্যমে বাজারটিতে টানা দুই কার্যদিবস মূল্যসূচক কমলো।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় রয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। এতে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর বাজারটিতে দরপতন হলো।
এর আগে গতকাল রোববার অধিকাংশ বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়লেও অন্য খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমে। ফলে ডিএসইতে সবকটি মূল্যসূচকের পতন হয়। এ পরিস্থিতিতে সোমবার ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে।
আরও পড়ুন
- পতনে শেয়ারবাজার, দাপট দেখালো বিমা
- টানা চার কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকলো শেয়ারবাজার
- জেমকন গ্রুপের ৬০ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ
কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে একের পর এক বিমা কোম্পানি দাম কমার তালিকায় চলে আসে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এই দরপতনের ধারা অব্যাহত থাকে। যার প্রভাব পড়ে অন্য খাতেও। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে ডিএসইতে লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৯৭টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২২১টির। আর ৭৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অপরদিকে বিমা খাতের ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৫টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫২টির। বাকি একটির শেয়ার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ভালো কোম্পানি বা ‘এ’ গ্রুপের ২২০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৪৮টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ১২৯টির এবং ৪৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের বা ‘বি’ গ্রুপের ২৮টি কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়েছে। আর কমেছে ৪৫টি এবং ৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৯টির দাম বেড়েছে। অন্যদিকে ১০টির কমেছে এবং ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর পচা বা ‘জেড’ গ্রুপের ৯৩টি কোম্পানির মধ্যে ২১টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ৪৭টির এবং ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সব গ্রুপের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দাম কমায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২০৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৬১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৮৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫০৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৪৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৫৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে শাহিনপুকুর সিরামিকের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ২৪ কোটি ৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৫০ লাখ টাকার। ১৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ইনফিউশন, ফু-ওয়াং সিরামিক, ফু-ওয়াং ফুড, বসুন্ধরা পেপার, বিচ হ্যাচারি, ইন্ট্রাকো রি-ফুয়েলিং স্টেশন এবং বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৮৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৯টির এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এমএএস/ইএ