একসঙ্গে ৩৩ চুলায় পিঠা তৈরি, মাসে আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকা

2 weeks ago 16

পাশাপাশি দোকানে একসঙ্গে দাউ দাউ করে জ্বলছে ৩৩টি চুলার আগুন। কিছুক্ষণ পরপর চুলার ওপর ঢেকে থাকা কড়াইয়ের ঢাকনা তুলে চেক করে দেখছেন পিঠা শক্ত হয়েছে কি না। দম ফেলার ফুরসত নেই।

এমনই ছয়জন নারী-পুরুষ চিতই পিঠা বিক্রেতার দেখা মিলেছে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। এই ছয়জনের ১২টি হাত প্রতিদিনই ব্যস্ত থাকে টানা ৬-৭ ঘণ্টা। গড়ে প্রতি দোকানে বিক্রি হয় ৪০০ পিস চিতই পিঠা।

শিমরাইল-আদমজী-চাষাঢ়া সড়কের দুই নম্বর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পাশাপাশি তিনটি চিতই পিঠার দোকানে রাত হলেই সিরিয়াল পড়ে ক্রেতাদের। মুখরোচক এই খাবারে আগ্রহীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতেও দেখা যায়।

একসঙ্গে ৩৩ চুলায় পিঠা তৈরি, মাসে আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকা

আলাপকালে জানা যায়, তিন দোকানে প্রতিমাসে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার মতো পিঠা বিক্রি হয়। বিক্রির প্রতিযোগিতার ব্যবধান অনেকটা সমানে সমান বলে জানান তারা। দোকানিদের ভাষ্যমতে, বিকেল ৪টায় পিঠার দোকান খোলা হয়। চলে রাত ১১টা পর্যন্ত।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পাশাপাশি তিনটি দোকানের প্রতিটিতে একজন করে নারী-পুরুষ পিঠা বানানোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিন দোকানে যে ছয়জন নারী-পুরুষ রয়েছেন, তারা মিলেমিশে ভাগাভাগি করে কাজ করছেন। সম্পর্কে তারা স্বামী-স্ত্রী। প্রতিটি ভাসমান দোকানে ১১টি করে চুলা বসানো রয়েছে। আর সে চুলার ওপরে বসানো কড়াইয়ে একের পর এক পিঠা বানানো হচ্ছে। তবে, এটা কোনো মৌসুমি ব্যবসা নয়, বছরজুড়েই পিঠা বিক্রি করেন তারা। তবে শীত মৌসুমে আইটেম হিসেবে যুক্ত হয় ভাপা পিঠা।

একসঙ্গে ৩৩ চুলায় পিঠা তৈরি, মাসে আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকা

দোকানিদের ভাষ্যমতে, প্রতিদিন গড়ে তাদের ৪০০ পিস চিতই পিঠা বিক্রি হয়। প্রতিপিসের দাম টাকা। অর্থাৎ মাসে চিতই পিঠা বিক্রি হয় সোয়া এক লাখ টাকার। শীত মৌসুমে ভাপা পিঠার ক্রেতাও যথেষ্ট রয়েছে। প্রতিদিন অন্তত ৪০-৫০ পিস বিক্রি হয় হয় ভাপা পিঠা। প্রতিপিসের মূল্য ২০ টাকা।

দীর্ঘ ৪ বছর ৩ মাস ধরে এখানে পিঠা বিক্রি করছে আশা লতা ও তার স্বামী মনিন্দ্র। গোপালগঞ্জের বাসিন্দা তারা। ঢাকাঘেঁষা সিদ্ধিরগঞ্জ এসেই পিঠা বিক্রি শুরু করেন। বর্তমানে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ধনকুন্ডা এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছেন। তাদের দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। ছেলেরা গার্মেন্টসে চাকরি করেন।

একসঙ্গে ৩৩ চুলায় পিঠা তৈরি, মাসে আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকা

আশা লতা বলেন, প্রচন্ড গরমেও পিঠা বানান তিনি। ফলে প্রতিদিন দোকান গুছিয়ে বাসায় গিয়ে ফ্যানের নিচে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা লাগে।

তার স্বামী মনিন্দ্র জানান, এই ব্যবসায় তারা স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার ভাষ্য, এখানকার প্রতিটি দোকানে গড়ে সমান বিক্রি হয়। তার দোকানে দিনে অন্তত ৪০০ পিস চিতই পিঠা বিক্রি হয়।

একসঙ্গে ৩৩ চুলায় পিঠা তৈরি, মাসে আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকা

পাশের দুই দোকানি সম্পর্কে ফুপাতো ভাই। ৩৬ বছর বয়সী আব্দুল মান্নান। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে চিতই পিঠা বিক্রি করছেন। স্ত্রী জাবেদার সহযোগিতায় এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বেশ সুখেই আছেন তারা।

সুনামগঞ্জের আরেক পিঠা ব্যবসায়ী জালাল (৩৭)। স্ত্রীর সহযোগিতায় ছয় বছর ধরে তিনিও এখানে পিঠা বিক্রি করেন। পরিবারে তিন সন্তান। ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছেন।

মো. আকাশ/এসআর/এমএস

Read Entire Article