একীভূতের নামে বঙ্গবন্ধু পরিষদে নয়া বিভাজন

3 months ago 23

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আওয়ামীপন্থি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ ও ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিট’-কে একীভূত করতে নতুন একটি আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছে কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের লক্ষ্যে গত ২ জুন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক তিনমাস মেয়াদি এ কমিটির অনুমোদন দেন।

অভিযোগ উঠেছে, নতুন এই আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে সংগঠন দুটিকে একীভূত করার কথা বলা হলেও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে নতুন করে বিভাজন তৈরি হয়েছে। একটি পক্ষের শিক্ষকদের কমিটিভুক্ত করায় অন্য পক্ষের শিক্ষক-কর্মকর্তারা একে ‘লুকোচুরির কমিটি’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন। এ নিয়ে শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তার সই সম্বলিত একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে কেন্দ্র থেকে ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’-এর কমিটি দেওয়ার পর শিক্ষকদের একটি পক্ষ একে অগণতান্ত্রিক দাবি করে ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিট’ নামের আরেকটি সংগঠন তৈরি করে। এরপর থেকে পৃথকভাবে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল সংগঠন দুটি। শিক্ষক ইউনিট গঠনের পর কেন্দ্র থেকে এ সংগঠনের অনুমোদন নেই জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়।

কেন্দ্রঘোষিত বঙ্গবন্ধু পরিষদের কমিটিতে আইসিটি বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানকে সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল আরফিনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরবর্তী সময়ে অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পেলে ১ নম্বর সহসভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান প্রশাসনপন্থি ও শিক্ষক ইউনিটের নেতারা সাবেক প্রশাসনপন্থি হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। তবে উপাচার্যের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানকে কেন্দ্র করে শিক্ষক রাজনীতির মেরুকরণ হলে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাহবুবুল আরফিন ও সহসভাপতি অধ্যাপক মামুনুর রহমান বর্তমানে উপাচার্যবিরোধী অবস্থানে রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে অবস্থান করায় মামুনুর রহমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আরফিনকে নিয়ে শিক্ষক ইউনিটের সঙ্গে বসে একীভূতের জন্য কেন্দ্রে আবেদন করেন। তারা প্রশাসনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া ৩১ জন শিক্ষককে নিয়ে একটি খসড়া কমিটি কেন্দ্রে উপস্থাপন করেন। এসময় দুই সংগঠন মিটিংয়ের মাধ্যমে একীভূত হয়েছে দাবি করলে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন। পূর্বের কেন্দ্রঘোষিত বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানসহ অন্য নেতারা নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে জানতেন না বলে জানান।

আহ্বায়ক কমিটি মেনে না নেওয়া শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দাবি, কেন্দ্রকে ‘ভুল বুঝিয়ে লুকোচুরি করে’ এ কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। সব সদস্যের মতামত না নিয়ে কয়েকজন মিলে বসে এ কমিটি করেছেন। ফলে তারা এ আহ্বায়ক কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

কমিটি স্থগিতের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রে দেওয়া চিঠিতে তারা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন কমিটি দেখে আমরা হতবাক হয়েছি। আমরা শিক্ষক -কর্মকর্তারা এ বিষয়ে আদৌও অবগত নই। অনতিবিলম্বে এ কমিটি স্থগিত করে ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের অনুরোধ জানান তারা।

এদিকে, শিক্ষক ইউনিটের আদলে নতুন আহ্বায়ক কমিটি করায় এতে কোনো কর্মকর্তাকে রাখা হয়নি। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য পৃথক সংগঠনের লক্ষ্যে এ কমিটি করা হয়েছে বলে জানান কমিটিতে পদপ্রাপ্ত নেতারা। এতে কর্মকর্তাদের জন্য কেন্দ্র থেকে আলাদা কমিটির অনুমোদন দিলে কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ বিভক্তির ফলে বঙ্গবন্ধু পরিষদ নিয়ে তারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়তে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে।

কেন্দ্রঘোষিত বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহসভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সাত-আটজন মিলে কেন্দ্রীয় কমিটিকে ভুল বুঝিয়ে এ কমিটি গঠন করেছেন। দুই গ্রুপের সব সদস্য বসে কমিটির কথা বললেও আদতে এ ধরনের কোনো সভা হয়নি। তাদের উদ্দেশ্য অশুভ। তারা ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার বানানোর জন্য বঙ্গবন্ধু পরিষদের পদবি ব্যবহার করতে চান।’

তিনি বলেন, এই কমিটি করে আরও বিভাজন করা হয়েছে। সাধারণ সদস্যরা এই কমিটি মানেন না। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি দেশে ফিরলে আমরা তাকে নিয়ে বসবো।

নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘আহ্বায়ক কমিটি গঠন কখনোই সবাইকে নিয়ে বসে হয় না। দুই সংগঠনের নেতারা বসে এই কমিটির সুপারিশ করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে বঙ্গবন্ধু পরিষদে ২৫২ জন শিক্ষক সদস্য আছেন। তিনমাসের মধ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সম্মেলন ও নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সার্বজনীন কমিটি গঠন করা হবে। তখন কারও মনে কষ্ট ও অভিযোগ থাকবে না। দীর্ঘদিন ধরে যে জটিলতা ছিল এর মধ্যদিয়ে সেটি অবসান হবে ও আদর্শিক কার্যক্রম বেগবান হবে।’

কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ‘আহ্বায়ক কমিটি তিনমাস মেয়াদি। এরমধ্যে যদি নির্বাচন করতে না পারে তাহলে এটি ব্যর্থ কমিটি হিসেবে বিবেচিত হবে। তখন আমরা নতুন কমিটি করবো।’

তিনি আরও বলেন, সভাপতি দেশের বাইরে আছেন। আমার কাছে যেটা ভালো মনে হয়েছিল করেছি। এরপরও যদি কারও আপত্তি থাকে সভাপতি দেশে এলে তাকে সঙ্গে নিয়ে বসা যাবে।

কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফীন সিদ্দিক বলেন, আমি দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তেমন জানা নেই। সাধারণ সম্পাদক এককভাবে অস্থায়ী কমিটি করতে পারেন। যেটা হয়েছে সেটা অস্থায়ী কমিটি। কমিটি নিয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে। আমরা বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছি।

এসআর/জিকেএস

Read Entire Article