একুশে বইমেলায় শব্দনীলের কাব্যগ্রন্থ ‘চালাকচরের ফুলপরী’

4 hours ago 8

অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে শব্দনীলের কাব্যগ্রন্থ ‘চালাকচরের ফুলপরী’। বইটি সম্পূর্ণ নরসিংদীর আঞ্চলিক ভাষায় রচিত, যেখানে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রেম কাহিনি একাধিক কবিতার মাধ্যমে ঘটনাপ্রবাহ ঠিক রেখে তুলে ধরা হয়েছে। প্রচ্ছদ করেছেন সুপ্রসন্ন কুণ্ডু, আর অলংকরণ করেছেন কাজী সুমাইয়া হোসাইন লিমু। বইটির মুদ্রিত মূল্য ২০০ টাকা, যা পাওয়া যাচ্ছে ঘাসফুল প্রকাশনীর ১৮০-১৮১ নম্বর স্টলে।

কবি শব্দনীল জানান, তার শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের প্রথম অংশ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাটায় তিনি নানা আঞ্চলিক ভাষার সংস্পর্শে আসেন। এর ফলে ভাষার প্রতি এক নতুন অনুরাগ জন্ম নেয়। তিনি বলেন, ‘একসময় রংপুরের ভাষা, চট্টগ্রামের ভাষা ও শুদ্ধ ভাষার মিশ্রণে কথা বলতাম। এটাকে বলা যায় আঞ্চলিক ভাষার গুরুচণ্ডালী দোষ। তবে এভাবেই আমি মাটির কাছাকাছি যাওয়া শিখেছি, জারি, সারি, ভাওয়াইয়া গানের ভাষার সুর-তাল-লয়ের প্রেমে পড়েছি।’

শব্দনীল আরও বলেন, ‘আমাদের শহুরে জীবনের আড়ালে এক বিস্ময়কর শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ভাণ্ডার লুকিয়ে আছে। এটিকে খোঁজার নেশা থেকেই আমি আঞ্চলিক ভাষায় লেখালেখি শুরু করি। দেবব্রত সিংহের বাঁকুড়ার ভাষায় লেখা ‘তেজ’ কবিতা, জসীমউদদীনের ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘নূরলদীনের সারা জীবন’—এসব কাব্য আমার ভেতর নাড়া দিয়েছে। মনে হলো, আমাদের শেকড়ের ভাষায় সাহিত্যচর্চা করাটা জরুরি।’

লেখকের ভাষায়, ‘এটি শুধু কবিতার সংকলন নয়, বরং একটি গল্প। এই গল্পটি নরসিংদীর আঞ্চলিক ভাষায় লেখা হলেও এর আবেগ সার্বজনীন। গ্রামীণ জীবনের প্রেম কাহিনির পাশাপাশি বইটিতে নরসিংদীর সংস্কৃতির একটি চিত্রও পাওয়া যাবে। এখানে আঞ্চলিক ভাষার সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটানোর চেষ্টা করেছি পরাবাস্তববাদ বা সুরিয়ালিজমের হাত ধরে।’

তিনি আরও জানান, ‘চালাকচরের ফুলপরী কবিতা সংকলন হলেও এটিকে কাব্যগল্প বা কাব্যনাট্য বলা যায়। এটি বিভিন্ন ধরনের বিচ্ছিন্ন কবিতার সংকলন নয়, বরং একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রেম কাহিনি, যা কবিতার মাধ্যমে এগিয়ে গেছে।’

বইটির ফ্ল্যাপে লেখা— ‘‘উদয় মাগো সোনার বাংলা তরে হাজার সেলাম পুবেতে বন্দনা করলাম’ পুবের বানু সারো একদিকদা উদয় বানু চৌদিকে ফসর উত্তরে বন্দনা করলাম’অ হিমালয় পর্বত তার অ ইয়ালে কাঁপে সয়ালও সংসার পশ্চিমে বন্দনা করলাম’অ মৌক্কা বানু সারো মুসলমান’অ পড়ে নুমাজ আল্লাহু আকবার দক্ষিণে বন্দনা করলাম’অ কালী দশায় সে সায়রে বাণিজ্য করে চান সওদাগর চারকোনা বন্দনা করলাম’অ আসর হইলো স্থির নরসিংহদীর বন্দনা করালাম’অ জেলা হয় নসন্দী নরসিংদীর বন্দনা করলাম’অ থানা হয় শিপপুর পোস্টঅফিস নৌকাঘাটা ছুটাবন্দর ঠিকানা বন্দনা ছাড়িয়া এবার কিসসায় দিলাম মন চালাকচরের ফুলপরী তুই বুইত্যাই আপন’’

‘চালাকচরের ফুলপরী’ শুধু একটি কাব্যগ্রন্থ নয়, এটি নরসিংদীর আঞ্চলিক সংস্কৃতি, প্রেম, জীবনের গল্পের প্রতিচ্ছবি। আঞ্চলিক ভাষার স্বাদ নিতে এবং শেকড়ের সন্ধানে আগ্রহী পাঠকদের জন্য এটি হতে পারে এক অনন্য সংযোজন।

Read Entire Article