রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে একের পর এক সংকটে পড়ছে ইউক্রেন। কখনো আন্তর্জাতিক চাপে, কখনো অভ্যন্তরীণ সমস্যায় দুর্বল হয়ে পড়ছে দেশটি। এবার সংকট দেখা দিয়েছে যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সৈন্য সংগ্রহে।
ইতোমধ্যে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীতে নতুন সৈন্যের অভাব তীব্র হয়ে উঠেছে। যুদ্ধক্ষেত্রের ভয়াবহতা দেখে অনেকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে ভয় পাচ্ছেন, আত্মগোপন করছেন বা দেশ ছাড়ছেন। ফলে সেনা নিয়োগ কর্মকর্তারা কঠোরভাবে নতুন সৈন্য সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এটি ইউক্রেনের জন্য আরও বড় সংকট তৈরি করেছে। খবর দ্য ইকোনমিস্ট।
এর আগে ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে ইউক্রেনের সামরিক কর্মকর্তা ওলেকসান্দ্র সিকালচুক নতুন সৈন্যদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। মাঝরাতে পোলটাভা অঞ্চলের একটি পেট্রোল স্টেশনে গাড়ি থামলে এক ব্যক্তি তার কাছে বন্দুক চাইলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর ওই ব্যক্তি গুলি চালিয়ে তাকে হত্যা করে এবং এক সেনাকে নিয়ে পালিয়ে যায়।
এই ঘটনার পর থেকে ইউক্রেনের সেনা নিয়োগ কর্মকর্তাদের ওপর একের পর এক হামলা হচ্ছে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা দাবি করছে, এগুলো রাশিয়ার অনুপ্রবেশকারীদের কাজ। তবে অনেক সামরিক কর্মকর্তা মনে করছেন, এসব হামলা দেশীয় বিদ্রোহীদের দ্বারা ঘটছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতিতে এখন পূর্ব ফ্রন্টে যুদ্ধ কিছুটা ধীরগতির হলেও রক্তক্ষয়ী লড়াই চলছে। অনেক ইউক্রেনীয় যুবক যুদ্ধে যেতে চাচ্ছেন না। কেউ আত্মগোপন করছেন, কেউ দেশ ছাড়ছেন। ফলে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী নতুন সৈন্য পেতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
দেশটির সেনাদের ৪৬তম ব্রিগেডের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা সেনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে ভুল করেছি। রাজনৈতিক কারণে সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এর ফলে জানুয়ারিতে কুরাখোভো শহর রক্ষায় ব্যর্থ হয় ইউক্রেনীয় বাহিনী। কারণ, সেখানে ইউক্রেনীয় সেনার সংখ্যা রুশ বাহিনীর তুলনায় অনেক কম ছিল।
উল্লেখ্য, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে ৮ লাখ ৮০ হাজার সদস্য রয়েছে, আর রাশিয়ার ইউক্রেন সীমান্তে মোতায়েন রয়েছে ৭ লাখ ২০ হাজার সেনা। কিন্তু বাস্তবে রাশিয়া সেনা নিয়োগে অনেক এগিয়ে।
২০২৪ সালে রাশিয়া ৪ লাখ ৩০ হাজার নতুন সেনা নিয়োগ করেছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরও তাদের সেনাবাহিনী ১ লাখ ৪০ হাজার সৈন্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং চলতি বছরও একই পরিকল্পনা রয়েছে। ইউক্রেনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এই যুদ্ধে রাশিয়ার অন্তত ১০ লাখ সেনা অংশ নিচ্ছে।
এ সংকট নিয়ে ইউক্রেনের সামনে কয়েকটি কঠিন সিদ্ধান্ত রয়েছে। এক সেনা নিয়োগের বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ বছর করা হতে পারে। তবে এটি খুবই অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত হবে এবং সাধারণ মানুষ এতে অসন্তুষ্ট হতে পারে।
দুই সরকার নতুন নিয়োগ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। ১৮-২৪ বছর বয়সীদের জন্য আকর্ষণীয় বোনাস, ভালো বেতন এবং এক বছর পর চাকরি ছাড়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রতি মাসে কমপক্ষে ৪ হাজার নতুন সেনা যোগ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
কিন্তু অনেক সামরিক কর্মকর্তা মনে করেন, শুধু নতুন সেনা নিয়োগ করলেই হবে না, যুদ্ধের কৌশলও বদলাতে হবে। সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রি জাগোরোদনিউক বলেন, শুধু সেনা বাড়িয়ে যুদ্ধ জেতা সম্ভব নয়। আমাদের কৌশল বদলাতে হবে এবং কম সংখ্যক সেনা দিয়েও কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
যুদ্ধ চলতে থাকলে ইউক্রেনকে আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এতে দেশের ভেতরে অস্থিরতা বাড়তে পারে এবং সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর আরও হামলার আশঙ্কা রয়েছে।
এক ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে, কারণ এখনো পর্যন্ত এর চেয়ে ভালো কোনো সমাধান নেই।