জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবীর (পল্লব)।
মঙ্গলবার (১১ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আদালতে মামলার পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, অ্যাডভোকেট নাঈম সরদার ও ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার।
এর আগে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলা করা হয়। বুধবার (৫ জুন) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ মামলা হয়।
এর আগে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া রায় ও আদেশ না মানায় ১৯ মে মেইলে এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ম্মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির ও ব্যারিস্টার মো. কাউছার এ নোটিশ পাঠান।
গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজনসহ অন্যান্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কাছ থেকে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ট্যাক্স ও ভ্যাট আদায়ের নির্দেশ প্রতিপালন করে উচ্চ আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল না করায় এনবিআর চেয়ারম্যানকে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল।
কিন্তু কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আদালত অবমাননার মামলা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এর শুনানি হয়।
নোটিশে বলা হয়েছিল, হাইকোর্টের রায়ে প্রদত্ত নির্দেশনা ১০ দিনের মধ্যে প্রতিপালন না করলে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে হাইকোর্টে মামলা হবে। তারই ধারাবাহিকতায় আবেদনটি করা হয়।
এনবিআরের চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ করে বলা হয়, আপনি সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ পেয়েছেন এবং আদালতের আদেশ সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত। আদালতের আদেশ মেনে চলতে আপনি বাধ্য। কিন্তু এখনো দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ আমলে নেননি। আদালতের আদেশ গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে ইচ্ছাকৃতভাবে অবহেলা এবং অবমাননার জন্য আপনাকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির জাগো নিউজকে বলেন, ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে প্রতি ছয় মাস অন্তর গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, অ্যামাজনসহ অন্যান্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, ডোমেইন বিক্রি, লাইসেন্স ফিসহ সব ধরনের লেনদেন থেকে মূসক, টার্নওভার কর ও সম্পূরক শুল্ক, ধারা ১৫ এর অধীন আরোপিত মূল্য সংযোজন কর এবং আয়কর প্রদানসহ সব ধরনের বকেয়া রাজস্ব আদায়ের বিবরণী হলফনামা আকারে হাইকোর্টে দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
‘কিন্তু রাজস্ব বোর্ড হাইকোর্টের আদেশ প্রতিপালন করেনি যা আদালত অবমাননার শামিল। ফলে রায় প্রতিপালন না করায় এনবিআরের চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার অভিযোগে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।’
এর আগে ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল হাইকোর্ট প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এনবিআরসহ সব বিবাদীকে গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজনসহ সব অনলাইন কোম্পানির কাছ থেকে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ট্যাক্স ও ভ্যাট আদায়ের নির্দেশ দেন। উক্ত অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বেশকিছু অনলাইন কোম্পানি ভ্যাট দেওয়া শুরু করে। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে কিছু নির্দেশনাসহ রায় ঘোষণা করেন আদালত।
জানা গেছে, গত ৫ জুন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউসারসহ সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন আইনজীবী জনস্বার্থে ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি রিট করেন। ওই রিটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, গুগল, ফেসবুক, ইয়াহুসহ মোট ১২ জনকে বিবাদী করা হয়।
এফএইচ/জেডএইচ/এমএস