জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভাগ করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি আলাদা বিভাগ করার অধ্যাদেশ বাতিল এবং চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আন্দোলনের ফলে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা জানতে চেয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে চিঠি দিয়েছে ক্ষতি নির্ণয়ে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি।
আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির আহ্বায়ক অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্মসচিব সৈয়দ রবিউল ইসলাম সই করা এ সংক্রান্ত এটি চিঠি বুধবার (৬ আগস্ট) দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) মহাসচিব আলমগীরের বরাবর পাঠানো হয়েছে।
এরপর এফবিসিসিআই মহাসচিব দেশের সব চেম্বার এবং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বা চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষতির তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।কীভাবে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য দিতে হবে, তার একটি ছক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। এ নির্ধারিত ছকে ২১ আগস্টের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য দিতে বলা হয়েছে।
সৈয়দ রবিউল ইসলামের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগ এবং কর বিভাগের কর্মচারীদের শাটডাউন কর্মসূচি পালনের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির দ্বিতীয় সভা ৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় নির্ধারিত ছকে আর্থিক ক্ষতির তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই নির্ধারিত ছবি অনুযায়ী আর্থিক ক্ষতির তথ্য আগামী ২১ আগস্টের মধ্যে পাঠানোর জন্য চিঠিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এ চিঠিতে পরিপ্রেক্ষিতে এফবিসিসিআই থেকে সব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, সব খাতভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বা চেয়ারম্যান, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বা সাধারণ সম্পদ এবং আমদানি ও রপ্তানিকারক গ্রুপ, সব স্থল বন্দর ও স্থল শুল্ক স্টেশনের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের কাছে ক্ষতির তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এফবিসিসিআই মহাসচিরের সই করা এ চিঠিতে বলা হয়েছে, গত মে-জুন মাসে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাতিলের দাবিতে কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগ এবং আয়কর বিভাগের কর্মচারীরা কর্মবিরতি ও শাটডাউনের ফলে শিল্প, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, বন্দর, আমদানি-রপ্তানি, উৎপাদন, সেবা খাত, লজিস্টিক ও সাপ্লাই চেইন কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়।
বিশেষ করে আমদানিকারকরা শিল্পের কাঁচামাল ও উপকরণ এবং তৈরি পণ্য বন্দর থেকে খালাস করতে পারেনি এবং রপ্তানিকারকরা সময়মতো রপ্তানি করতে পারেনি। অন্যদিকে, সরকারের রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ প্রেক্ষাপটে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি ও রাজস্ব ক্ষতি নিরূপণের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে গঠিত একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। এ কমিটির কার্যক্রম বেগবান, অর্থবহ ও সফল করতে দেশের সব বাণিজ্য সংগঠনের কাছে সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে চিঠিতে।
নির্ধারিত ছকে যে তথ্য দিতে হবে
>> বাণিজ্য সংগঠনের নাম
>> ব্যবসার ধরণ (আমদানিকারক/রপ্তানিকারক/ট্রেডিং/সেবা খাত/অন্যান্য)
>> ক্ষয়ক্ষতির ধরণ/বিবরণ।
>> আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ (লাখ টাকায়)
>> মন্তব্য।
আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ রবিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, কমিটির কাজ হলো কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগ এবং কর বিভাগের কর্মচারীদের শাটডাউন কর্মসূচি পালনের কারণে কি পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে নিরূপণ করা। এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে তথ্য চাওয়া হয়েছে।
এনবিআর দুই ভাগ করে গত মে মাসে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। সেই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তাদের আন্দোলনের মধ্যে সরকার পিছু হটে। ২২ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাদেশে ‘প্রয়োজনীয় সংশোধনী’ আনা হবে। আর সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান কাঠামোতেই চলবে এনবিআরের সব কাজ।
এর মধ্যে সংস্থাটির কর্মীরা নানা অভিযোগ তুলে এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে নতুন করে আন্দোলনে নামেন এবং সংস্থার কার্যালয়ে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন। দাবি আদায়ে ২৮ জুন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন এনবিআর কর্মীরা। তাদের আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়ে আমদানি-রপ্তানিসহ এনবিআরের কার্যক্রম। পরের দিনও কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে সংস্থাটির সেবাকে ‘অত্যাবশ্যকীয়’ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
সংকট নিরসনে সেদিন এনবিআর কর্মীদের অবিলম্বে কর্মস্থলে ফেরার এবং ‘আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি কার্যক্রম’ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়। পরে সংকট সমাধানে পাঁচ উপদেষ্টাকে নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করার কথা জানায় সরকার। পরে ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যস্থতায় আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ শাটডাউন কর্মসূচি তুলে নেয়।
দুইদিনের এ শাটডাউন কর্মসূচির কারণে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা জানতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্মসচিব সৈয়দ রবিউল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৯ জনের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে বিভাগের উপসচিবকে (প্রশাসন-১)। এছাড়া অর্থ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উপসচিব পর্যায়ের একজন করে প্রতিনিধি, এনবিআর, বিজিএমইএ এবং এফবিসিসিআইয়ের একজন করে প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
এ কমিটি গঠনের আদেশে বলা হয়, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগ এবং কর বিভাগের কর্মচারীদের কর্মবিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচি পালনের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে এই আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি করা হল।
কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়, গত ২৮-২৯ জুন ২ দিন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের অফিস বন্ধ থাকায় রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ, দীর্ঘ দুই মাস কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগ এবং কর বিভাগের কর্মচারীদের কর্মসূচি পালনের কারণে সব কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, কাস্টম হাউস, কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট এবং আওতাধীন অধিদপ্তর/পরিদপ্তর/অন্যান্য দপ্তরের [কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট (আপিল) কমিশনারেটসহ] এবং কর অঞ্চলসমূহে রাজস্ব ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ, দীর্ঘ দুই মাসব্যাপী কর্মসূচির কারণে শুল্কায়ন কার্যক্রম এবং সব স্থলবন্দর ও নৌ-বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের ক্ষয়ক্ষতিসহ দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
এমএএস/এমএএইচ/জেআইএম