ষড়যন্ত্র করে সেনা হত্যার পরিস্থিতি তৈরি করেন তাপসসহ আ.লীগ নেতারা

1 day ago 6

শেখ ফজলে নূর তাপসসহ অন্য আওয়ামী লীগ নেতারা তৎকালীন বিডিআরের কিছু সদস্যের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ দেওয়া জবানবন্দিতে এ কথা বলেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ৪৬তম সাক্ষী হিসেবে এ জবানবন্দি দেন মাহমুদুর।

মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে মামুন এ মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। সোমবার তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। অপর দুই আসামি হাসিনা ও আসাদুজ্জামান পলাতক আছেন।

ট্রাইব্যুনালে মাহমুদুর বলেন, জুলাই বিপ্লবে বাংলাদেশের ইতিহাসে নিকৃষ্টতম এক ফ্যাসিস্ট শাসকের পতন হয়েছে। এ ফ্যাসিবাদের সৃষ্টি হয়েছিল ‘ম্যাটিকুলাস প্ল্যানিংয়ের’ মাধ্যমে। সেই পরিকল্পনায় বাংলাদেশের রাজনীতিবিদের সঙ্গে একটি বিদেশি শক্তি জড়িত ছিল।

মাহমুদুর জবানবন্দিতে বলেন, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বুঝতে পেরেছিলেন, বাংলাদেশে একটি ফ্যাসিস্ট শাসন কায়েম করতে হলে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে দুর্বল করা আবশ্যক। কারণ, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর মোরাল (মনোবল) যদি উচ্চ থাকে, তাহলে তারা কোনো অবস্থাতেই একটি বিদেশি শক্তির ইঙ্গিতে দেশে কোনো পুতুল সরকারকে মেনে নেবে না। সুতরাং শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হওয়ার মাত্র দুই মাসের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল।

এ পরিকল্পনায় শেখ পরিবারের সদস্য ও শেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সাবেক সংসদ সদস্য তাপস সরাসরি জড়িত ছিলেন। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে থেকে বিডিআরের কিছু সদস্যের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে তাপসসহ অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতা বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পরিস্থিতি তৈরি করেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে তাপসের জড়িত থাকার সব প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাকে কখনো বিচারে মুখোমুখি করা হয়নি, যোগ করেন মাহমুদুর।

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে শেখ হাসিনার সেনাবাহিনীর প্রতি এক ধরনের ঘৃণা ছিল। শেখ হাসিনার সেনাবাহিনীবিদ্বেষ বাকশালের পতনের সময় থেকে শুরু হয়েছিল। সেই সময় সেনাবাহিনীর একাংশ, যারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাদের বিদ্রোহে একদলীয় বাকশাল শাসনের পতন হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে শেখ মুজিবের মধ্যেও সেনাবিদ্বেষ ছিল।

অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের ‘বাংলাদেশ: আ লিগ্যাসি অব ব্লাড’ বইয়ের প্রসঙ্গ জবানবন্দিতে টানেন মাহমুদুর। তিনি বলেন, এ সাংবাদিক (মাসকারেনহাস) শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত বন্ধু ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান মাসকারেনহাসকে বলেছিলেন, তিনি বাংলাদেশে পাকিস্তানের মতো একটি দানব সেনাবাহিনী সৃষ্টি করতে চান না। এ পারিবারিক সেনাবিদ্বেষের কারণে শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন সেনাবাহিনীর মেরুদণ্ড ও মোরাল সম্পূর্ণরূপে ভেঙে যাক।

এফএইচ/একিউএফ/এমএস

Read Entire Article