বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য ৪০ কোটি ১৬ লাখ বই প্রয়োজন। তার মধ্যে এ পর্যন্ত সরকার ছাপতে পেরেছে মাত্র ৪ কোটির মতো বই। বাকি ৩৬ কোটি বই ছাপা শেষ করা দুরূহ। এমন পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসেছে শিক্ষা প্রশাসন।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) হঠাৎ রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কিছু ছাপাখানার মালিকও। জাতীয় স্বার্থে পাঠ্যবই দ্রুত ছাপার কাজ শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয় বৈঠকে। পাঠ্যবই ছাপার কাজ করা কিছু প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর আশ্বাসও।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম। তাছাড়া একজন অতিরিক্ত সচিব, দুজন যুগ্মসচিব, চারজন উপসচিব বৈঠকে অংশ নেন। এনসিটিবির চেয়ারম্যান, সব সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে ছিলেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে জানান, পাঠ্যবই ছাপার কাজে কেন বিলম্ব হচ্ছে, তা ছাপাখানার মালিক ও এনসিটিবির কর্মকর্তাদের কাছে খোলামেলাভাবে জানতে চান সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের। তারা তাদের কথা জানান। তবে ছাপাখানা মালিকদের আচরণে সরকার সন্তুষ্ট নয় বলে জানিয়ে দেন সিনিয়র সচিব।
আরও পড়ুন
- ঢাকার ৫ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন ভবন
- ৪০ কোটি পাঠ্যবইয়ের মধ্যে ছাপা হয়েছে মাত্র ৪ কোটি
- এনসিটিবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিকসহ সব ছুটি বাতিল
ছাপাখানা মালিকরা যদি জাতীয় স্বার্থে বই ছাপার কাজ দ্রুত শেষ না করে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন সিদ্দিক জোবায়ের। তাছাড়া তড়িঘড়ি বই ছাপাতে গিয়ে যাতে কেউ নিম্নমানের কাগজ না দিতে পারে সে ব্যাপারেও মনিটরিং বাড়ানোর নির্দেশনা দেন।
বছরের শুরুতে তিনটি করে বই দেওয়ার পরিকল্পনা
সব বই শেষ করতে অনেক সময় প্রয়োজন। সেজন্য বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সব শিক্ষার্থীর হাতে যাতে অন্তত তিনটি করে বই পৌঁছে দেওয়া যায় সেই ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজকের বৈঠকেও বিষয়টির ওপর জোর দিয়েছেন সিনিয়র সচিব। তিনি শিক্ষা উপদেষ্টার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জোর নির্দেশনা দেন।
বিষয়টি নিয়ে এনসিটিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, বছরের শুরুতে তিনটি করে বই সব শিক্ষার্থীকে দেওয়ার বিষয়টি আমাদেরও পরিকল্পনায় ছিল। সেটাই আজ ছাপাখানা মালিকসহ এনসিটিবির সবাইকে গুরুত্বসহকারে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সিনিয়র সচিব। এটা যাতে বাস্তবায়ন হয় সেটি গুরুত্বসহকারে দেখতে বলেছেন। সবাই এ বিষয়ে একমত হয়েছেন।
এনসিটিবি জানিয়েছে, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় ৪০ কোটি ১৬ লাখ বই ছাপার কাজ চলমান। যার মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের বইয়ের সংখ্যা ১২ কোটি ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৭৫২টি।
ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির অর্থাৎ মাধ্যমিক পর্যায়ের বইয়ের সংখ্যা ২৮ কোটি ৬ লাখ ২২ হাজার ৩৩৭টি। তাছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে ৮ হাজারের বেশি ব্রেইল বই ছাপা হচ্ছে। অন্যদিকে শিক্ষকদের জন্য প্রায় ৪১ লাখ শিক্ষক সহায়িকা দেওয়া হবে।
ছাপাখানার মালিক, মুদ্রণ শিল্প সমিতি ও এনসিটিবি সূত্র জানায়, বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেল পর্যন্ত ৪ কোটিরও কিছু কম সংখ্যক পাঠ্যবই ছাপা ও বাঁধাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখনো ৩৬ কোটির বেশি বই ছাপাতে এবং বাঁধাই করতে হবে। যা শেষ করে বই স্কুলে স্কুলে পৌঁছে দিতে আরও অন্তত দুই মাস সময় প্রয়োজন।
সেই হিসেবে মার্চে আগের শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই দেওয়া সম্ভব হবে না। আর ২ মার্চ থেকে রমজান, ঈদের দীর্ঘ ছুটি শুরু হবে। ছুটি শেষে স্কুল খুলবে ৮ এপ্রিল। তার আগে বই নিয়ে পুরোদমে ক্লাসে বসতে পারবে না শিক্ষার্থীরা। ফলে ওলটপালট হয়ে যাবে শিক্ষাপঞ্জি।
এএএইচ/এমআইএইচএস