এনসিসির নাম বদলে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব

2 months ago 6

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের’ (এনসিসি) নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি’ প্রস্তার করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

বুধবার (২৫ জুন) বেলা ১১টার পরে শুরু হওয়া সংলাপে সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির সংশোধিত প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

রাষ্ট্রীয় কার্যাবলীতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনা এবং রাষ্ট্রীয় অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করতে নয় সদস্যের একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল বা এনসিসি গঠনের সুপারিশ রয়েছে সংবিধান সংস্কার কমিশনের। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল বা এনসিসি’ গঠনের এ সুপারিশ করে কমিশন।

সেখানে বলা হয়েছিল, এনসিসিতে থাকবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার, উচ্চকক্ষের স্পিকার, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, বিরোধী দল মনোনীত নিম্নকক্ষের ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দল মনোনীত উচ্চকক্ষের ডেপুটি স্পিকার এবং প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক দলের বাইরে থেকে উভয়কক্ষের কোনো একজন সংসদ সদস্য।

নতুন নাম হিসেবে ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি’ প্রস্তাব করেন কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ। নতুন এ কাঠামো থেকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

সংশোধিত প্রস্তাবে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটির সদস্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রী, নিম্ন ও উচ্চকক্ষের স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, প্রধান বিরোধী দল ব্যতীত অন্যান্য দলগুলোর একজন প্রতিনিধি, রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি (আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন), প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন কর্মকর্তা। এ কমিটির সভার সভাপতিত্ব করবেন নিম্নকক্ষের স্পিকার।

প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ জানান, অ্যার্টনি জেনারেল ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান নিয়োগ নতুন কমিটির হাতে থাকবে না। একই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এ কমিটির কার্যকারিতা থাকবে না।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে এনসিসির মাধ্যমে অ্যার্টনি জেনারেল ও তিন বাহিনী তথা প্রতিরক্ষা বাহিনী নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে।

সকালে শুরু হওয়া বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমির ‘দোয়েল মাল্টিপাস হলে’ এ বৈঠকে দুপুরের খাবার বিরতিতে বের হয়ে কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘এনসিসির নতুন নাম নিয়ে কারো কোনো দ্বিমত নেই। বিএনপি এনসিসি নিয়ে আগেও বিরোধিতা করেছে, এখন নতুন প্রস্তাবের প্রয়োজনীয়তা কি সেটা বলছে।’

আর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এনসিসির নাম পরিবর্তন করে নতুন কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে। এখানে নতুন নাম যেটা ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি’ এটা নিয়ে কারো কোনো দ্বিমত নেই। তবে নতুন নামের এ নিয়োগ কমিটি কোন প্রক্রিয়ায় গঠিত হবে, কাজ কীভাবে করবে সেটা নিয়ে আরও আলোচনা হবে, তখন বলা যাবে ঐকমত্য হয় কি না।

চার মূলনীতির প্রশ্নে বামপন্থিরা ছাড় দেবে না

কমিশনের প্রাথমিক প্রস্তাবে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামজিক সুবিচার ও গণতন্ত্র’ প্রস্তাব করেছিল। নতুন করে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি মূলনীতিতে যুক্ত করার প্রস্তাব করে কমিশন। যা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা আলোচনা করবেন।

বৈঠকের শুরু থেকেই সংবিধানের চার মূলনীতির কোন পরিবর্তন করতে দেওয়া হবে বলে মত দিয়ে আসছে সিপিবি, গণফোরামসহ বাম জোটের নেতারা।

খাবার বিরতিতে গণফোরামের গণফোরাম নির্বাহী সভাপতি এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক বলেন, ‘সংবিধানের মূলনীতি ঠিক রেখে নতুন কোনো বিষয় থাকলে সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সংবিধানের মূলনীতিতে হাত দেওয়া যাবে না, সেটা আমরা বলছি।

‘আর এনসিসির নতুন নাম প্রস্তাব করে গঠন প্রক্রিয়া কিছুটা পরিবর্তন করে তারা প্রস্তাব করেছে। এখন নতুন নাম নিয়ে কারো দ্বিমত নেই, তবে প্রস্তাবিত বিয়ষ নিয়ে আলোচনা হলে বলা যাবে।’

কেএইচ/এমএএইচ/জেআইএম

Read Entire Article