এনা গ্রুপের অবৈধ ভবন, জানে না কর্তৃপক্ষ

2 days ago 4

রাজশাহী জেলা পরিষদের জায়গায় অবৈধ ভবন তৈরি করেছিল রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। আর অবৈধ সেই ভবনটি এখন জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয় করতে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে ওই ভবনে বিএনপির সাইনবোর্ডও টাঙানো হয়েছে। প্রস্তুতি চলছে ভবনে ওঠার। কিন্তু জেলা পরিষদের জায়গায় আওয়ামী লীগের সাবেক এ এমপির ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ হলেও বিষয়টি জানাই নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর সোনাদিঘির পাড়ে ২০০৯ সাল থেকে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সঙ্গে একটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবন করেছে এনা প্রোপার্টিজ। ভবনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিটি সেন্টার’। সিটি করপোরেশনের জায়গাতেই নির্মাণাধীন ভবনটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। সিটি সেন্টারের ঠিক উত্তরের দেয়াল ঘেঁষেই জেলা পরিষদের অধীন ছিল রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইনস্টিটিউট। কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন এ ফাঁকা স্থানটিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

সিটি সেন্টারের নকশার বাইরে এসে সার্ভে ইনস্টিটিউটের জমিতে ইউটিলিটি সার্ভিসের জন্য জেলা পরিষদের জায়গা দখল করে দোতলা একটি ভবন নির্মাণ করে এনা প্রোপার্টিজ। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সুবাদে এনা প্রোপার্টিজ এ ভবন নির্মাণ করলেও সেদিকে কেউ নজর দেয়নি। এখন এ ভবনের দোতলায় জেলা ও মহানগর বিএনপির প্রধান কার্যালয় লেখা সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ‘ভবনের মাথায় সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। এতে লেখা আছে ‘প্রধান কার্যালয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, রাজশাহী জেলা ও মহানগর’। ভবনে প্রবেশের ফটক তৈরি করার জন্য ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি কাজ করছেন। আর দলের কয়েকজন ছেলে সেখানে জটলা করছেন। কে এই ভবন ভাড়া নিয়েছেন, জানতে চাইলে তারা বলেন, মামুন ভাই (রাজশাহী নগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ)।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী নগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ কালবেলাকে জানান, ‘এনা প্রোপার্টিজের আঞ্চলিক পরিচালক আমার বন্ধু। তার কাছ থেকেই ভবনটি কার্যালয় করার জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তবে ভাড়া কত হবে, তা এখনো ঠিক করা হয়নি। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে এ চুক্তি কার্যকর হবে।’

জেলা পরিষদের জমিতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ভবনে কার্যালয় করার বিষয়ে তিনি জানান, ‘আমরা শুধু ভাড়াটে। যেদিন ভবন ছেড়ে দেওয়ার কথা উঠবে সেদিনই তা ছেড়ে দিয়ে চলে যাব। বিষয়টি মোটেই আমাদের নয়।’

রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ বি এম শরিফ উদ্দীন জানান, ‘সিটি সেন্টার নির্মাণের সময় পেছনের দোতলা ভবনটি করা হলেও জায়গাটি আসলে জেলা পরিষদের। ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান এনা প্রপার্টিজ তাদের কর্মচারী ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী রাখার জন্য ভবনটি নির্মাণ করে। তৎকালীন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সহায়তায় এনা প্রপার্টিজ জেলা পরিষদের ওই জায়গায় ভবনটি নির্মাণ করে। ওই ভবনের জায়গা যেহেতু সিটি করপোরেশনের নয়, তাই ভবনটিতে সিটি করপোরেশনের কোনো অংশও নেই।’

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রেজা হাসান জানান, ‘আসলে ভবনটি জেলা পরিষদের জায়গায় নাকি সিটি করপোরেশনের মধ্যে সেটি আসলে ওইভাবে জানা নেই। সার্ভেয়ার নিয়ে এসে পরিমাপ করে বিষয়টি কনফার্ম হওয়া যাবে যে আসলে জায়গাটি কাদের। সিটি সেন্টার করার সময় তারা (এনা গ্রুপ) ওই জায়গাটি এমনিতেই ব্যবহার করতো। পরে দেখা গেছে, সেখানে তারা দোতলা একটি ভবন তুলে ফেলেছে।’ 

তবে বিষয়টি খুব দ্রুতই সমাধান হবে জানান তিনি।  

এনা প্রোপার্টিজের রাজশাহী আঞ্চলিক পরিচালক সারওয়ার জাহান জানান, ‘বিএনপির মহানগর সদস্য সচিব আমার বন্ধু। একদিন আলাপচারিতায় বিএনপির কার্যালয় করার জন্য দোতলার ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ বর্গফুটের ফ্লোরটি ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তারা সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে। এখনো ভাড়া ঠিক করা হয়নি। তারা অস্থায়ীভাবে উঠছে। বেশি দিন থাকবে না। 

জেলা পরিষদের জায়গা দখল করে ওই ভবন নির্মাণের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

Read Entire Article