এবার আসাদকে ফেরাতে রাশিয়াকে শর্ত দিল সিরিয়া
সিরিয়ায় সামরিক ঘাঁটি রাখার শর্ত হিসেবে বাশার আল-আসাদকে ফেরত পাঠানোর দাবির বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে রাশিয়া।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভকে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা এ নিয়ে প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর দেননি। এর একদিন আগে, একটি উচ্চপর্যায়ের রুশ প্রতিনিধিদল সিরিয়ার নতুন কার্যনির্বাহী নেতা আহমেদ আল-শারার সঙ্গে বৈঠক করে।
এর আগে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ মিত্র বাশার আল-আসাদ গত ডিসেম্বর মাসে বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বে এক আকস্মিক অভিযানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে মস্কোতে পালিয়ে যান। এর মাধ্যমে সিরিয়ায় আল-আসাদ পরিবারের পাঁচ দশকের শাসনের অবসান ঘটে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। আল-আসাদের পতন রাশিয়ার জন্য বড় ধাক্কা, কারণ সিরিয়ায় তাদের সামরিক ঘাঁটিগুলো কেবল তার শাসন টিকিয়ে রাখার জন্যই নয়, বরং বৈশ্বিক শক্তি প্রদর্শনের জন্যও ব্যবহৃত হতো।
মস্কোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা বিষয়ক বিশেষ দূত এবং উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বগদানভের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সিরিয়ায় ‘খোলামেলা’ আলোচনা করেছে। রাশিয়া সেখানে তার তারতুস নৌঘাঁটি ও খামেইমিম বিমানঘাঁটি ধরে রাখতে চায়।
বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর বিনিময়ে আহমেদ আল-শারা বাশার আল-আসাদকে সিরিয়ায় ফেরত পাঠানো এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু প্রতিবেদনগুলোর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, তিনি (আল-শারা) রাশিয়ার প্রতি আস্থা পুনর্গঠনের জন্য ‘ক্ষতিপূরণ, পুনর্নির্মাণ ও পুনরুদ্ধারের মতো কার্যকর পদক্ষেপ’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সিরিয়ার প্রশাসন জানায়, সম্পর্ক পুনঃস্থাপন নিশ্চিত করতে অতীতের ভুলগুলোর নিরসন, সিরিয়ার জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান এবং তাদের স্বার্থ রক্ষা করা প্রয়োজন।
শর্তের বিষয়ে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈঠকে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও জানিয়েছে, মস্কো সিরীয় আরব প্রজাতন্ত্রের ঐক্য, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই সফরকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলে বর্ণনা করে বলেন, সিরীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্থায়ী সংলাপে বসা ও সেটি চালিয়ে যাওয়া জরুরি।
প্রসঙ্গত, সিরিয়ার ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের লাতাকিয়া প্রদেশে অবস্থিত রুশ সামরিক ঘাঁটিগুলো মস্কোর বৈশ্বিক কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এগুলো শুধু আল-আসাদ সরকারকে সমর্থন দেওয়ার কেন্দ্র হিসেবেই নয়, বরং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও আফ্রিকায় রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
তারতুস ও খামেইমিম ঘাঁটিই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে মস্কোর একমাত্র সামরিক ঘাঁটি। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুই পক্ষের মধ্যে ‘খোলামেলা আলোচনা’ হয়েছে এবং তারা ‘প্রাসঙ্গিক চুক্তি’ করতে আরও যোগাযোগ চালিয়ে যাবে। তবে সামরিক ঘাঁটিগুলোর বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।
একটি সিরীয় সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, রাশিয়া তাদের ‘ভুল’ স্বীকার করতে রাজি হয়নি এবং আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়েই একমাত্র সমঝোতা হয়েছে।