সেনাবাহিনী না থাকলে কাউকে রক্ষা করতে পারতাম না

3 hours ago 10

৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর খুলনা মহানগর এলাকা ও বিভাগের অন্তর্গত ১০ জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের জানমাল রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ওই সময়কার অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে বরাবরের মতো এবারও হিন্দু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে নিপীড়ন-নির্যাতনের চেষ্টা চালায় স্বার্থান্বেষী মহল। পুলিশের কাছ থেকে তখন তেমন কোনো সহযোগিতা মেলেনি। এমনকী স্থানীয় প্রশাসনও ছিল কার্যত নীরব। সেই দুঃসহ সময়ে নিরীহ সংখ্যালঘুদের ডাকে সেনাবাহিনী ছাড়া আর কেউ সাড়া দেয়নি। 

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত সভায় অংশ নিয়ে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা এসব কথা তুলে ধরেন। খুলনা প্রেস ক্লাবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ সভায় অংশ নেন খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার ৫৯টি উপজেলা ও ১১টি পৌরসভার ৯৯ প্রতিনিধি। 

পূজা উদযাপন পরিষদ খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি শ্যামল হালদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় তৃণমূল পর্যায়ের হিন্দুরা তাদের বর্তমান পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন। ৫ আগস্টের পর প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও পৌর এলাকায় কীভাবে হিন্দুদের ওপর হামলা, নির্যাতন হয়েছে তার বিস্তারিত জানান তারা। 

এ সময় মিথ্যা মামলা, হয়রানি নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। পূজা পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে এ-সংক্রান্ত জটিলতার সুরাহা কামনা করেন।

নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে যশোর ও বাগেরহাট জেলার হিন্দু প্রতিনিধিরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা হিন্দুদের প্রতি মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যরা না থাকলে ৫ আগস্টের পর কাউকে রক্ষা করতে পারতাম না। 

পূজা পরিষদের কয়েকটি উপজেলার প্রতিনিধিরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের এলাকার বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের আন্তরিকতার কারণে হিন্দুদের জীবন ও সম্পদ রক্ষা পেয়েছে। এ জন্য তারা বিএনপি ও জামায়াতের সেইসব নেতাকর্মীর প্রতি ধন্যবাদও জানান।

পুরো সময় ধরে সভায় উপস্থিত থেকে তৃণমূল পর্যায়ের হিন্দুদের ভোগান্তি ও হয়রানির কথা শোনেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সভাপতি বাসুদেব ধর, সহসভাপতি মণীন্দ্র কুমার নাথ ও  তাপস পাল, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোপাল দেবনাথ ও শুভাশীষ বিশ্বাস সাধন, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট গোপাল দেবনাথ ও তাপস কুণ্ডু, সহ-প্রচার সম্পাদক অনয় মুখার্জি প্রমুখ। 

সভায় সুব্রত চৌধুরী বলেন, দেশে কোনো পরিবর্তন হলে সবার আগে আঘাত আসে আমাদের (হিন্দুদের) ওপর। যে কোনো কারণে এটার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ কী। একদিকে মার খাচ্ছে, বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে মা-বোনের নিরাপত্তা প্রশ্ন, আর ওপরের দিকে আপনাদের মাইনাস করে দিচ্ছে। এতগুলো এসআই পরীক্ষা দিয়ে পাস করল ট্রেনিং অবস্থায় সারদাতে, তাদের বাদ দিয়ে দিলেন। কি হচ্ছে এগুলো দেশের মধ্যে। পিএসসিতে কোয়ালিফাই করে চাকরিতে জয়েন করবে, বিসিএস পরীক্ষায়, মা-বাবা ও তাদের কত সাধনা। এখন এসে তাদের বাদ দিয়ে দিচ্ছে। সব জায়গায় প্রমোশন বন্ধ হয়ে আছে। এই যে কন্ট্রাক্টএ নিচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় আপনার আমার নাম দেখেছেন। বাংলাদেশে এতগুলো ভিসি নিয়োগ হয়েছে, রেজিস্ট্রার প্রক্টর নিয়োগ হয়েছে আপনাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিগত দিনে আমলে আমাদের বাড়িঘরে কোনো হামলা হলে বলতো বিএনপি-জামায়াত হামলা করেছে। আরে ভাই আমরা জানি তো ২০০১-০৬ সালে বিএনপি-জামায়াতই হামলা করেছে; কিন্তু আওয়ামী লীগ এর একটি ঘটনারও বিচার করেনি। সেদিন আওয়ামী লীগ বিচার করলে এখন এরা এত সাহস পেতো না। 

পূজা পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, আমাদের ওপর প্রতিটি হামলার নথি সংগ্রহ করেন। নিকটের থানায় যান, সেখানে মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আদালতে যান। সেখানেও যদি মামলা না নেয়, আর্মি ক্যাম্পে যান, সেখানে আপনার কথা বলেন। তারপর সেখানেও যদি প্রতিকার না পান কেন্দ্রে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমরা সব ব্যবস্থা করব। ইতোমধ্যে আমরা কয়েকটি স্থানে এভাবে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সহযোগিতা করতে পেরেছি।

Read Entire Article