এবারের কোরবানিতে সাদিক অ্যাগ্রোর ব্যবসায় ধস

3 months ago 72

ঈদুল আজহায় পশু কোরবানিকে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ জাতের বিদেশি গরু ও বৃহৎ আকারের বিশেষ জাতের নানান পশু আমদানি ও বিক্রি করতো সাদিক অ্যাগ্রো। এক সময়ের প্রভাবশালী ও বিত্তশালী ব্যবসায়ী সাদিক অ্যাগ্রোর চেয়ারম্যান ইমরান হোসেনের ব্যবসায় এবার ধস নেমেছে।

বিগত বছরগুলোতে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করলেও আলোচিত ‘ছাগলকাণ্ডের’ পর বর্তমান সময়ে জৌলুস হারিয়েছে সাদিক অ্যাগ্রো। সেই সময়ে পশু বিক্রি করতে নানান আয়োজন ও ক্রেতাদের আনাগোনায় সাদিক অ্যাগ্রো মুখর থাকলেও এবার তেমন ক্রেতার দেখা মিলেনি। ছিল না আয়োজন করে বিক্রি।

এবারের কোরবানিতে সাদিক অ্যাগ্রোর ব্যবসায় ধস

শুক্রবার (৬ জুন) রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় সাদিক অ্যাগ্রো ঘুরে ক্রেতা সংকটে বেচাবিক্রি না হওয়ার চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এবার তেমন কোনো পশু বিক্রি নেই। নেই ক্রেতাদের আনাগোনাও। খামারের ভেতরে পোষা গরুগুলো বাঁধা। দায়িত্বরত কর্মীদের গরুগুলোর যত্নে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।

খামারটিতে দায়িত্বরত দারোয়ান মো. জালাল বলেন, ‘আমরা আগে হাট বসিয়ে আয়োজন করে যেভাবে গরু বিক্রি করতাম, এ বছর সেসব কোনো আয়োজন নেই। দুই-একজন ক্রেতা এলে ভেতর থেকে গরু পছন্দ করে দাম-দরে মিললে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তেমন বিক্রিও নেই।’

এবারের কোরবানিতে সাদিক অ্যাগ্রোর ব্যবসায় ধস

এবার আয়োজন না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মালিকতো জেলে। ব্যবসা করবে কে?’

যে ছাগলকাণ্ডে এমন ধস যেই ছাগলের বিষয়ে জানতে চাইলে জালাল বলেন, ‘ছাগল অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। বিক্রি হয়নি।’

স্থানীয় এক অটোরিকশা চালক খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর এখানে কোনো হাট বসেনি। আগে সাদিক এগ্রো এখানে গরু বিক্রি করতো। কিন্তু সিটি করপোরেশন উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সব ভেঙে দিয়েছে। তারপর থেকে এখানে সাদিক অ্যাগ্রোর আর তেমন কোনো কিছু নেই।’

এবারের কোরবানিতে সাদিক অ্যাগ্রোর ব্যবসায় ধস

গত বছরের কোরবানি ঈদে সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় ‘উচ্চবংশীয়’ ছাগল কেনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হন মুশফিকুর রহমান ওরফে ইফাত নামের একজন। তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তৎকালীন সদস্য মতিউর রহমানের ছেলে। কিন্তু মতিউর সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ইফাত তার কেউ নয়। পরে জানা যায়, ইফাত মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে।

আরও পড়ুন

এরপর থেকে ইফাতের বিলাসী জীবনযাপনের নানা তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পায়। তার দামি ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন; মতিউর রহমান ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের তথ্য সামনে আসতে শুরু করে।

পরে ওই বছরের ২৩ জুন মতিউরের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২৫ জুন মতিউর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব, মুঠোফোনে আর্থিক সেবার (এমএফএস) হিসাব ও শেয়ারবাজারের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

এবারের কোরবানিতে সাদিক অ্যাগ্রোর ব্যবসায় ধস

ছাগলকাণ্ডের পর সাদিক অ্যাগ্রো খামারের নামও আলোচনায় আসে। বেশি দামে গরুসহ অন্যান্য পশু বিক্রি করে আলোচিত তারা। দেশে নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু আমদানি করেছিল সাদিক অ্যাগ্রো। কাস্টমস বিভাগ বিমানবন্দরে সেই গরু জব্দ করে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর অবশ্য কৌশলে সেই গরু সাদিক অ্যাগ্রোকেই দিয়েছিল। গত বছরের জুলাই মাসে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ছয় কর্মকর্তাকে আসামি করে মামলা করে দুদক।

এদিকে ১৩৩ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে গত ৩ মার্চ সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান হোসেন, তৌহিদুল আলম জেনিথ ও অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। সেদিনই ঢাকার মালিবাগ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

পরদিন ৪ মার্চ সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম টিমের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক একরামুল হাবিব সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ব্রাহামা জাতের গরু আমদানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন ইমরান। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে গরু ও মহিষ আনতেন তিনি। ভুটান ও নেপাল থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে ছোট আকৃতির ভুট্টি গরু বাংলাদেশে আনতেন। পরে এগুলো তিনি উচ্চ মূল্যে বিক্রি করতেন। তিনি প্রতারণার মাধ্যমে দেশীয় গরু ও ছাগলকে বিদেশি ও ‘বংশীয়’ গরু ও ছাগল বলে প্রচার চালিয়ে উচ্চ মূল্যে কোরবানির পশুর হাটে বিক্রি করতেন। এভাবে আয় করা ১২১ কোটি ৩২ লাখ ১৫ হাজার ১৪৪ টাকা তিনি বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন। এ ছাড়া অবৈধ ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জিত ১১ কোটি ৩৬ লাখ ৯১ হাজার ২০০ টাকা ইমরান তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জালালাবাদ মেটাল লিমিটেডের নামে এফডিআর খুলে বিনিয়োগ করেন।

কেআর/এমএমএআর/জেআইএম

Read Entire Article