‘এক যুগের বেশি সময় ধরে ঢাকায় চাকরি করি। প্রতি বছর ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ যাই। যাওয়ার সময় সড়কে যানজট, বাস টিকিট নিয়ে টেনশন করতে হতো। কিন্তু এবার দেখি ভিন্ন চিত্র। বাসা থেকে বের হয়ে দেখি ঢাকা শহরে সড়ক ফাঁকা। মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় নেই। কাউন্টারে গিয়ে টিকিট চাইতেই নির্ধারিত মূল্যে টিকিট পেলাম। কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়নি।’
রোববার (৩০ মার্চ) সকাল ১০টায় রাজধানীর মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে জাগো নিউজকে এসব কথা বলেন ময়মনসিংহগামী যাত্রী সুজাউল ইসলাম। শুধু সুজাউল নন, আজ মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে যারা নিজ নিজ গন্তব্যে বাসে যাচ্ছেন তাদের প্রায় সবাই ঈদযাত্রা নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ রুটে বাস যাত্রী পরিবহন করে। এবার ঈদ মৌসুমেও এসব রুটে যাতায়াতে যাত্রীদের আগাম টিকিট কিনতে হয়নি। টার্মিনালে গেলেই টিকিট পাচ্ছেন যাত্রীরা। আবার কয়েকটি পরিবহনের টিকিটের জন্য খানিকটা সময় লাইনে দাঁড়াতে হলেও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।
মহাখালী বাস টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মহাখালী টার্মিনালে আসছেন ঘরমুখো মানুষ। তারা নিজ নিজ গন্তব্যের বাস কাউন্টারের সামনে গিয়ে নির্দিষ্ট মূল্যে টিকিট কাটছেন। টিকিট কাটতে যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে না। বাসের সব আসনের টিকিট বিক্রি হলে বাস নির্দিষ্ট গন্তব্যের রওনা দিচ্ছে।
পরিবহন চালক এবং যাত্রীরা জানান, আগামীকাল সোমবার দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এবার ঈদে টানা নয় দিনের ছুটি পেয়েছেন সরকারি চাকরিজীবীরা। আবার বেসরকারি চাকরিজীবীরাও তাদের পরিবারের সদস্যদের আগেই গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ফলে টার্মিনালে যাত্রী চাপ কম। সবাই নির্বিঘ্নে ঈদযাত্রা করতে পারছেন।
- আরও পড়ুন
- যাত্রী-যানবাহনের চাপ নেই, গাজীপুরে দুই মহাসড়ক ফাঁকা
- গত ২০ বছরে ঈদযাত্রা এত স্বস্তির হয়নি: পরিবহন উপদেষ্টা
- এবার রেলের কেউ কালোবাজারিতে জড়াতে সাহস পায়নি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ রুটে সবচেয়ে বেশি যাত্রী যাতায়াত করেন। এই রুটে সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করে ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্ট। সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এ পরিবহনের ৪২টি বাস নিজ গন্তব্যে ছেড়ে গেছে।
দেখা যায়, প্রতি ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্টের একটি বাস যাত্রী পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ রুটে নন-এসি বাসে ৩১০ টাকা এবং এসি বাসে ৪০০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। ঈদের আগেও এই রুটে একই ভাড়া ছিল বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা। আর ঈদ উপলক্ষে ভাড়া না বাড়ানোয় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তারা।
ময়মনসিংহ সদরে যাওয়ার জন্য ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্টের এসি বাসের টিকিট কাটেন যাত্রী আবু সাঈদ। আলাপকালে তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ের মতোই কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কেটেছি। টিকিটের মূল্য আগের মতোই রাখছে। তবে এসি বাসের সংখ্যা কম থাকায় আধাঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি। হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস চলে আসবে। আশা করি এবারের ঈদ যাত্রাটা স্বস্তির হবে।
ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্টের স্বত্বাধিকারী ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় এবার যাত্রীরা স্বস্তিতে ঈদযাত্রা করতে পারছেন। মহাখালীসহ ঢাকার সব টার্মিনালগুলোতে বাসের টিকিট কাটা নিয়ে কোনো জটিলতা নেই। পর্যাপ্ত যাত্রী হলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বাস টার্মিনাল ছেড়ে যাচ্ছে। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে কোথাও যানজট নেই।
ঢাকা-বগুড়া-নওগা-ঢাকা রুটে নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করে একতা পরিবহন। সরেজমিনে দেখা যায়, মহাখালী অন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ভবনের ভেতর টিকিট বিক্রি করছেন শহিদুল মিয়া। টিকিট কেটে কাউন্টারের সামনে বাসের অপেক্ষায় করছেন যাত্রীরা। মাহবুব আলম নামে এক যাত্রী জানান, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তার কাছ থেকে ৭০ টাকা বেশি ভাড়া রাখা হয়েছে। এ নিয়ে তেমন আপত্তি নেই। ঈদ মৌসুমে নিরাপদ যাতায়াত মুখ্য।
এমএমএ/বিএ