ঐক্য ও সাম্যের শিক্ষা দেয় হজ 

3 months ago 6

মওলবি আশরাফ

ইসলামের ফরজ বিধান হজ পালনের জন্য প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মুসলমান মক্কায় জমায়েত হন। তাদের চেহারার ধরন বিভিন্ন রকম, শরীরের বর্ণ বিভিন্ন রকম, ভাষা বিভিন্ন রকম, আচরণ-সংস্কৃতি বিভিন্ন রকম, পোশাক বিভিন্ন রকম। ঐক্যের জায়গা একটি—তারা সবাই মুসলমান। তারা সবাই আল্লাহ তাআলার নির্দেশে হজ পালন করতে এসেছেন। বর্ণ, ভাষা ও সংস্কৃতির ভিন্নতা সত্ত্বেও তাদের হৃদয়ের কেবলা এক।

বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা মুসলমানেরা যখন একই স্থানে, একই পোশাকে, একই কার্যধারায় আল্লাহর ইবাদতে রত হয়, সমস্বরে বলে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’ আপনার দরবারে আমরা হাজির হে আল্লাহ! আপনার কোনো শরিক নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও নেয়ামতরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার। আপনার কোনো শরিক নেই। তখন শত ভিন্নতা সত্ত্বেও এক লা শরিক আল্লাহর ওপর ইমান বা বিশ্বাসে সবাই এক হয়ে যায়। তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকে না। তারা সাবাই ভাই ভাই হয়ে যায়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন, বিশ্বাসীরা তো পরস্পরের ভাই। (সুরা হুজুরাত, আয়াত ১০) 

হজের মধ্য দিয়ে আমরা ইসলামের সাম্য ও মানবিক মর্যাদার সৌন্দর্য আবিষ্কার করি। সবাই এক কাতারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে। আলাদা করে চেনা যায় না কে রাজা আর কে প্রজা, কে আমির আর কে ফকির। সবাই একই নিয়মে হজের আমলগুলো পালন করে। কারো জন্য পৃথক জায়গা বা কাতার থাকে না। কেউ বিশেষ কোনো সুবিধা পায় না। 

jagonews24

ইয়োরোপের একজন শ্বেতাঙ্গ মুসলমান, পূর্ব এশিয়ার একজন মঙ্গলোয়েড মুসলমান আর আফ্রিকার একজন কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমান পাশপাশি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে, তাওয়াফ করে, সাঈ করে। তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। আল্লাহর বান্দা হিসেবে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ কে কতটুকু পালন করতে পারছে তাই হয় মূল বিবেচ্য বিষয়। 

আল্লাহ তাআলা যেমন বলেছেন, হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে অধিক তাকওয়ার অধিকারী। আল্লাহ সব কিছু জানেন, সব কিছুর খবর রাখেন। (সুরা হুজরাত, আয়াত ১৩)

বিদায় হজের ভাষণে আল্লাহর রসুল (সা.) বলেছিলেন, অনারবের ওপর আরবের কিংবা আরবের ওপর অনারবের, এবং কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কিংবা শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই—একমাত্র যার তাকওয়া (আল্লাহভীতি) বেশি, সে-ই শ্রেষ্ঠ। মানুষ আদম থেকে, আর আদম মাটি থেকে সৃষ্টি। (যাদুল মাআদ, ৫/১৪৪) 

ওএফএফ/জিকেএস

Read Entire Article