আবহমান গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে বরগুনায় চলছে লোকনাট্য সমারোহ। জেলা প্রশাসন, নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের সহযোগিতায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে মনোমুগ্ধকর সব পরিবেশনা দেখতে বরগুনার টাউনহল মাঠে ভিড় করছেন দূর দুরন্ত থেকে আসা নানা বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুরা।
সকল প্রকার অপসংস্কৃতি দূর করতে এমন উদ্যোগ অব্যাহত থাকার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী ও দর্শকরা।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত বরগুনা শহীদ মিনার সংলগ্ন টাউনহল প্রাঙ্গণে এ লোকনাট্য সমারোহ অনুষ্ঠান চলবে।
তিনদিনব্যাপী এ আয়োজনের মধ্যে হয়লাগান, জারিগান, পালাগান, পুঁথি পাঠ, কবিতা আবৃতিসহ থাকবে আরও নানা ধরনের স্থানীয় পরিবেশনা। প্রতিদিন এসব পরিবেশনা দেখতে বরগুনার টাউনহল মাঠে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই এই উৎসবে অংশগ্রহণ করছে। বিশেষ করে গ্রামীণ পর্যায়ে হারাতে বসা বিভিন্ন লোকসংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে শিশুদের নিয়ে ছুটে আসছেন অভিভাবকরা। আধুনিককতার ছোঁয়ায় অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে বিভিন্ন সময় এমন আয়োজন অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই বলেও জানান তারা।
মীর রিজন মাহমুদ নিলয় নামের এক দর্শক জাগো নিউজকে বলেন, লোকনাট্য উৎসবটি আমাদের সমাজ থেকে প্রায় হারিয়ে গেছে। তারুণ্যের উৎসবের মাধ্যমে লোকনাট্যসহ বিভিন্ন পরিবেশনায় আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা তরুণরা গ্রামীণ সংস্কৃতি সম্পর্কে ও আমাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবো।
লোকনাট্য দেখতে এসে ফৌজিয়া তাসনীন আনিকা জাগো নিউজকে বলেন, এ উৎসবের মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্য আমাদের সংস্কৃতি প্রকাশ পাচ্ছে। আমরা তরুণরা আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য, আমাদের সংস্কৃতি ও আমাদের শেকর ভুলতে বসেছি। এই উৎসবের মাধ্যমে আমরাসহ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ঐতিহ্যকে নতুন করে জানতে পারছি পাশাপাশি অনেক কিছু দেখতে পাচ্ছি। তাই এ ধরনের আয়োজন আশা করছি অব্যাহত থাকবে।
কেন্দ্রীয় খেলাঘর কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য চিত্তরঞ্জন শীল জাগো নিউজকে বলেন, লোকসংস্কৃতির মধ্যে মানুষের প্রাণের স্পন্দন থাকলেও বর্তমানে আমরা এর চর্চা করছি না। সাধারণ মানুষের এমন অনুষ্ঠানগুলোর বেশি করে চর্চা করা উচিত। আমাদের যাত্রা হারিয়ে যাচ্ছে, জারিগান হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় বরগুনায় লোকসংস্কৃতির চর্চা ছিল, বর্তমান সরকার আবার এ সব অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে এবং সাধারণ মানুষ এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে। আমরা বিশ্বাস করি লোকসংস্কৃতির চর্চা অব্যাহত থাকলে মোবাইল সংস্কৃতিসহ অপসংস্কৃতি বন্ধ হবে। মানুষে মানুষে হানাহানি বন্ধ হয়ে যাবে।
লোকনাট্য সমারোহ আয়োজনের বিষয়ে বরগুনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার তানজিলা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সব সময় নানা ধরনের আয়োজন করে থাকে। এরই অংশ হিসেবে বরগুনায় শুরু হয়েছে লোকনাট্য সমারোহ। আমাদের গ্রামীণ পর্যায়ে প্রায় বিলীন হয়ে যাওয়া সংস্কৃতিগুলো মানুষের মাঝে ফিরিয়ে আনতে এ ধরনের আয়োজন ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
লোকনাট্য সমারোহ দেখত এসে বরগুনা জেলার পুলিশ সুপার মো. ইব্রাহিম খলিল জাগো নিউজকে বলেন, আমি এখানে মূলত দর্শক হিসেবে এসেছি। গ্রামীণ বিভিন্ন সংস্কৃতি অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছিল তা ফিরিয়ে আনতেই বাংলাদেশ সরকার এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ছোট সময়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান আমি দেখেছি। পরবর্তীতে চাকরির সুবাদে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় গেলেও এ ধরনের আয়োজন খুব একটা দেখা হয়নি। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে ও বাংলাদেশ শিল্পকলার আয়োজনে এ ধরনের অনুষ্ঠান দেখতে পাচ্ছি। এটি আমাদের লোকসংস্কৃতি ও আমাদের জাতিস্বত্বাকে বাঁচিয়ে রাখবে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এ ধরনের আয়োজনে সকল প্রকার নিরপত্তার ব্যবস্থা থাকবে বলেও জানান তিনি।
নুরুল আহাদ অনিক/এমএসএম