ককটেল বিস্ফোরণে অপ্রাপ্তবয়স্কদের ব্যবহার করছে নিষিদ্ধ একটি দল

2 hours ago 4

কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি রাজনৈতিক দল রাজধানীতে ককটেল বিস্ফোরণে অপ্রাপ্তবয়স্কদের ব্যবহার করছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।

তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিনে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, হেলমেট ও মাস্ক পরে ভোরবেলা অথবা দিনের ব্যস্ততম সময়ে টার্গেট করা স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি রাজনৈতিক দল। অনেক সময় ককটেল বিস্ফোরণে অপ্রাপ্তবয়স্কদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে।’

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ‘ঢাকা মহানগরীর চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংক্রান্ত’ সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার এসব কথা বলেন।

সাজ্জাত আলী বলেন, ‘কিছুদিন ধরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন অপপ্রচারের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, বিশেষ করে ঢাকা শহরের। গত কয়েকদিনে ঢাকা শহরে ককটেল সদৃশ্য বস্তু নিক্ষেপ এবং বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানোসহ আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করার অপচেষ্টা রয়েছে।’

এ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত ১ থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। গত দুই দিনে নয়টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৭টি মামলা এবং গত ২৪ ঘণ্টায় এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অপচেষ্টা করছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এরই অংশ হিসেবে রাজধানীতে ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। অক্টোবর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ১৪টি ঝটিকা মিছিল করেছে তারা। স্বল্প স্থায়ী এসব মিছিলের ছবি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে।

আরও পড়ুন
দু-একটি মোটরসাইকেল থেকে ককটেল নিক্ষেপ, আতঙ্কের কিছু নেই
আমার ঘুমন্ত ভাইডারে যারা আগুনে পুইড়ালছে, তাগর বিচার করুন
ঢাকায় রাতভর তিন বাস ও এক প্রাইভেটকারে আগুন

তিনি জানান, অক্টোবর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ঝটিকা মিছিল পরিচালনা, অর্থায়ন ও অংশগ্রহণের সঙ্গে জড়িত কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল ও অঙ্গ সংগঠনের ৫৫২ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানান, তাদের অধিকাংশই ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন। অর্থের বিনিময়ে তারা ঢাকায় এসে ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণ করে আবার বাইরে চলে যান।

নগরবাসীকে অনুরোধ জানিয়ে সাজ্জাত আলী বলেন, ‘অপরিচিত কোনো লোককে আপনারা আশ্রয় দেবেন না। মেস, হোটেল ও গেস্ট হাউজে পরিচয়পত্র দেখে বোর্ডার উঠানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করছি। এছাড়া নিজের নামে থাকা মোটরসাইকেল বা যানবাহন অন্য কাজে ব্যবহার অথবা ভাড়া দেওয়ার পূর্বে কোনো দুর্বৃত্তের হাতে চলে যাচ্ছে কি না দৃষ্টি রাখবেন। আপনার এলাকায় আগন্তুক কাউকে দেখলে বা সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখলে তা দ্রুত নিকটস্থ থানায় অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ অবহিত করবেন।’

পরিবহন মালিকদের অনুরোধ জানিয়ে ঢাকার পুলিশপ্রধান বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই যানবাহন অরক্ষিত অবস্থায় রাখবেন না। গত দুই দিনে যেসব বাসে আগুনের ঘটনা ঘটেছে তার অধিকাংশই রাতে রাস্তায় পার্ক করা অবস্থায় ছিল। এসব বাসের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কোনো লোক ছিল না। যদিও পরিবহনশ্রমিক ও মালিকদের অনুরোধ করা হয়েছে, আপনারা বাস পাহাড়া দেওয়ার জন্য লোক রাখবেন।’

তিনি বলেন, ‘যেসব বাসে তিন, চার বা পাঁচজন যাত্রী ছিল সেসব বাস টার্গেট করে আগুন দেওয়া হয়েছে। যাত্রীভর্তি বাসে টার্গেট করা হয়নি। যে ধরনের নাশকতা কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে, আমি মনে করি এই নাশকতা প্রতিহত করবে ঢাকাবাসী। ঢাকাবাসীর কাছে অনুরোধ, তারা প্রতিরোধ সৃষ্টি করুক, পুলিশ সঙ্গে থাকবে।’

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এমন কোনো ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা কোনোভাবে প্রচার করবেন না, যেটা ঢাকাবাসীর কাছে ভুল তথ্য বহন করে।’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নগরবাসীর ভূমিকার গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানে আমরা স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছি। নাশকতার পরিকল্পনাকারীদের একইভাবে সকলে মিলে প্রতিহত করতে হবে।’

সাজ্জাত আলী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘নগরবাসীই আমাদের শক্তি। তাদের সঙ্গে করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ যেকোনো ধরনের নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে সক্ষম। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সক্রিয় রয়েছেন। অতএব নাশকতাকারীদের বিচ্ছিন্ন কর্মকাণ্ডে অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) মো. সরওয়ার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. মাসুদ করিম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলামসহ ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

টিটি/একিউএফ/এমএস

Read Entire Article