কখন সরিষার তেল ব্যবহার করবেন, আর কখন অলিভ অয়েল

14 hours ago 3

সানজানা রহমান যুথী

সরিষার তেল ও অলিভ অয়েল দুটোই খুব পরিচিত তেল। প্রতিদিনের রান্না, সালাদ, ভর্তা, রূপচর্চা, চুলের যত্ন - প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন কাজে আমরা এ তেল দুটি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না কোন তেলের উপকার কী।

এ বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন আল্- হায়াত হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কনসালটেন্ট ডায়টেসিয়ান ও পুষ্টিবিদ মোহাম্মদ আরিফ ইকবাল। চলুন জেনে নেওয়া যাক এ বিষয়ে -

১. সরিষার তেল ও অলিভ অয়েলের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কী?

সরিষার তেল তৈরি হয় সরিষা বীজ থেকে, আর অলিভ অয়েল আসে জলপাই ফল থেকে। সরিষার তেলে ওমেগা–৩ ও ওমেগা–৬ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি, আর অলিভ অয়েলে মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে। সরিষার তেল ঘন ও ঝাঁঝালো, উচ্চ তাপে রান্নায় উপযুক্ত। অলিভ অয়েল হালকা খাবার, যেমন - সালাদ ও স্বাস্থ্যকর রান্নায় বেশি ব্যবহার করা হয়।

২. ত্বক ও চুলের যত্নে কোনটি ভালো?

অলিভ অয়েল সরিষার তেলের তুলনায় বেশি কোমল ও নিরাপদ। এতে প্রচুর ভিটামিন ই ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ত্বককে কোমল ও তরুণ রাখে এবং চুলে পুষ্টি যোগায়। সরিষার তেলে থাকা ওমেগা–৩ ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, তবে এর ঝাঁঝের কারণে সংবেদনশীল ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে। তাই ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল, আর চুলে সীমিতভাবে সরিষার তেল ব্যবহার করা ভালো।

৩. রান্নায় প্রতিদিন সরিষার তেল ব্যবহার কতটা উপকারী?

সরিষার তেল পরিমিতভাবে ব্যবহার করলে এটি স্বাস্থ্যকর। এতে থাকা ভিটামিন ই ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষ রক্ষা করে, অ্যালাইল আইসোথায়োসায়ানেট জীবাণুনাশক ও প্রদাহরোধী গুণ রাখে। তবে এতে থাকা এরুসিক অ্যাসিড বেশি খেলে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। তাই একজনের জন্য দৈনিক ২–৩ টেবিল চামচের বেশি খাওয়া ভালো না।

৪. ওজন কমাতে কোন তেল বেশি কার্যকর?

অলিভ অয়েল ওজন কমাতে বেশি সহায়ক। এতে মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে ও চর্বি জমা কমায়। সরিষার তেলও স্বাস্থ্যকর, তবে ক্যালোরি তুলনামূলক বেশি হওয়ায় ওজন কমাতে এটি ধীরগতি আনতে পারে।

৫. সরিষার তেল দীর্ঘদিন খেলে হৃদযন্ত্রে কী প্রভাব পড়ে?

অতিরিক্ত সরিষার তেলে থাকা এরুসিক অ্যাসিড হৃদপেশীতে জমে কার্ডিওমায়োপ্যাথি তৈরি করতে পারে। তবে পরিমিত পরিমাণে (দৈনিক ২–৩ চামচ) গ্রহণ সাধারণত নিরাপদ, বরং এতে থাকা ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

৬. বাজারে পাওয়া তেলগুলোর বিশুদ্ধতা কিভাবে বোঝা যায়?

বিশুদ্ধ সরিষার তেল সাধারণত তীব্র ঘ্রাণযুক্ত ও ফ্রিজে রাখলে হালকা জমে যায়। বিশুদ্ধ অলিভ অয়েল সবুজাভ বা সোনালি রঙের হয় এবং ফলের মতো হালকা ঘ্রাণ থাকে। তবে নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডের পণ্য ও সঠিক লেবেল দেখে কেনা জরুরি।

৭. বাঙালি খাদ্যাভ্যাসে সরিষার তেলের পরিবর্তে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা কতটা উপকারী?
সালাদে সরিষার তেলের বদলে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে খাবার হালকা, স্বাস্থ্যকর ও হার্টবান্ধব হয়। তবে আচারে সরিষার তেলই ভালো, কারণ এতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান আচারের সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ায় ও ঐতিহ্যবাহী স্বাদ বজায় রাখে।

৮. যাদের কোলেস্টেরল, হার্ট ডিজিজ বা উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের জন্য কোন তেল নিরাপদ?

অলিভ অয়েল এ ক্ষেত্রে বেশি নিরাপদ। এতে থাকা মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায় ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রতিদিন ২–৩ টেবিল চামচ যথেষ্ট।

৯. সরিষার তেলের ঝাঁঝালো স্বাদ কি স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে?

না, ঝাঁঝালো ঘ্রাণ সরিষার তেলের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য, যা ক্ষতিকর নয়। এতে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল যৌগের কারণেই এই ঘ্রাণ থাকে।

১০. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কোন তেল কার্যকর?
অলিভ অয়েল বেশি কার্যকর। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল শরীরকে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে। সরিষার তেলও সহায়ক, তবে তুলনামূলকভাবে অলিভ অয়েল বেশি উপকারী ও নিরাপদ।

এএমপি/জেআইএম

Read Entire Article