কঠিন সময়ের গল্প, অন্য এক ‘কঠিন সময়ে’

3 months ago 30

গল্প বলা যতটা সহজ, লেখাটা তারচেয়ে কঠিন। তবে সেই গল্পকে পর্দায় তুলে ধরা বোধহয় সবচেয়ে কঠিন। পিপলু আর খান সেটা অবলীলায় করে ফেললেন! সেও কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে। কঠিন সময়ে, কঠিন গল্পের এক কঠিন কাজ ‘জয়া আর শারমিন’ মুক্তি পেয়েছে অন্য রকম এক ‘কঠিন সময়ে’।

কোভিডে মানুষ ছিল ঘরবন্দী। তখনকার জীপনযাপন এমন ছিল যেন, ঘরের বাইরে অপেক্ষা করছে মৃত্যু। এ রকম সময়ে কেমন কেটেছে একজন তারকার? একজন সাধারণ মানুষের মতো তিনিও মৃত্যুভয়ে ভীত সময় পার করছিলেন! তারকাকে ঘিরে থাকা মানুষগুলি তখন তার পাশে নেই। একজন রূপবতী-গুণবতী অভিনেত্রীর আশপাশে থাকতে চাওয়া মানুষগুলো তারই মতো মৃত্যুভয়ে দূরে, বহু দূরে গা ঢাকা দিয়েছে। অভিনেত্রীর সঙ্গী তার গৃহপরিচারিকা! একমাত্র বন্ধু। এরচেয়ে কঠিন বাস্তবতা কখনও আসেনি জয়ার জীবনে।

উল্টো ঘটনা ঘটেছে শারমিনের জীবনে। জয়ার মতো ব্যস্ত একজন অভিনেত্রীকে খুব কাছ থেকে, নিবিড়ভাবে পেয়েছেন তিনি। তার সঙ্গে খুনসুটি, লুডু খেলা, রান্নার সুযোগ পাওয়া শারমিনের জীবনের অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা। স্বাভাবিক সময়ে শারমিনের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে হয়তো কখনও তাকিয়ে দেখারও সময় জয়ার হয়নি। এমনকি বহু দূর থেকে তারকা জয়াকে যেভাবে দেখেছে তার অনুরাগীরা, কাছ থেকে তাকে দেখে বিস্ময় জেগেছে শারমিনের। তিনি দেখেছেন, তারকা জয়াও আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো মৃত্যুভয়ে ভীত থাকেন, চিৎকার করেন, রাগে ফুঁসে ওঠেন। কোন অনুরাগী মেনে নেবে এমন তারকাকে?

কঠিন সময়ের গল্প, অন্য এক ‘কঠিন সময়ে’

‘জয়া আর শারমিন’ একটা সিনেমা। আবার বলা যায় একটা দৃশ্যমান দিনলিপি। সেখানে অভিনয় করেছেন তিন মাধ্যমের তিন শিল্পী—বড় পর্দার জয়া আহসান, মঞ্চের মহসিনা আক্তার ও টেলিভিশনের তানজিম সাইয়ারা তটিনী। কোভিডকালে প্রসার লাভ করা এফ কমার্স উদ্যোক্তা তরুণীদের প্রতিনিধি হিসেবে পাওয়া যায় তটিনীকে। এমনকি ওই সময়কার বিষণ্নতার বলি হওয়াদের একজন হিসেবে তাকে তুলে ধরেন নির্মাতা। প্রযোজনা টিমের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোভিড-১৯ চলাকালে এই ছবির দৃশ্যধারণ করা হয়। ঝুঁকি নিয়ে সীমিত পরিসরে করা কাজটি মুক্তি পেল পাঁচ বছর পর।

নির্মাতা হিসেবে পিপলু আর খান উক্তীর্ণ হয়েছেন বিপুল নম্বর পেয়ে। তার সিনেমা ইন্দ্রিয়ের জন্য আরামদায়ক। দর্শকের চোখের জন্য আরামদায়ক দৃশ্য, কানের জন্য শ্রুতিনন্দন আবহসংগীত বাছাই করায় তিনি এরই মধ্যে ‘ওস্তাদ’ বনে গেছেন। সেই ছাপ পাওয়া গেছে ‘জয়া আর শারমিন’-এও। মৃত্যুর মতো বিমর্ষ ঘরদোর, জানালা, কড়াই, টেবিল-চেয়ারের সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন নানান সিনেমাটিক উপাদান, যেমন, জয়ার টাইপরাইটার। এসব দৃশ্য, জয়া ও শারমিনের সংলাপ দর্শককে নিয়ে যাবে কোভিডকালে। বাইরে থেকে আসা দুঃসংবাদগুলো তাদের জীবনে নিঃশব্দে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা ও ভয় ঢুকিয়ে দিচ্ছিল। স্মৃতি উসকে দিতে দিতে এভাবে দেখানো হয়েছে অসহায় তারকার দিনযাপন।

ছবিতে ‘জয়া’ হয়ে উঠতে জয়া আহসানকে খুব কষ্ট করতে হয়নি। তবে ‘শারমিন’ হয়ে উঠতে হয়েছে মহসিনা আক্তারকে। মাত্র চার প্রেক্ষাগৃহে এখনও চলছে ‘জয়া আর শারমিন’। মহামারি চলাকালে তারকাজীবনের চালচিত্র বড়পর্দায় দেখতে হলে দর্শককে একবার যেতেই হবে হলে।

এমআই/আরএমডি/এমএস

Read Entire Article