কনজারভেটিভদের এমন ভরাডুবির কারণ কী?

3 months ago 25

যুক্তরাজ্যে গত ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ পার্টি পরপর চারটি নির্বাচনে জিতে বিজয়ের যে ধারা তৈরি করেছিল, তার নাটকীয় সমাপ্তি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে। এবারের নির্বাচনে রীতিমতো ভরাডুবি হয়েছে টোরিদের। এই ঘটনায় দলটির নেতা, কর্মী, সমর্থক- সবাই প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন এবং তারা এখনো বিষয়টিতে ধাতস্থ হওয়ার চেষ্টা করছেন।

প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, বিরোধী দল লেবার পার্টি ৪১১ আসনে জয় পেয়েছে। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি জিতেছে ১১৯ আসনে। আর ৭১ আসনে জয় পেয়ে তৃতীয় হয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি।

কিন্তু কেন? কী ভুল ছিল কনজারভেটিভদের কৌশল ও নেতৃত্বে? এ নিয়ে চলছে নানা আলাপ-আলোচনা।

অনেকে মনে করেন, লেবার পার্টি যেসব নীতি ঘোষণা করেছিল, সেগুলো কনজারভেটিভদের চেয়ে খুব বেশি আলাদা নয়। তবে নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কারা বেশি দক্ষ হবে, সেটাই চিন্তা করেছেন ভোটাররা।

দলের মধ্যে বিভাজন

গত ১০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টি থেকে পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ব্রেক্সিট ইস্যু থেকে শুরু করে কোভিড মহামারি, সেই সঙ্গে একাধিক নেতৃত্বের মধ্যে প্রতিযোগিতা- এসব কারণে দলের ভেতর মতাদর্শগত বিভক্তি দেখা দিয়েছিল।

বিরোধী দলের দিকে নজর না দিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির নেতারা একে অপরকে টেনে নামানোর জন্য বেশি শক্তি ব্যয় করেছেন। তারা নিজেদের মধ্যে দূরত্ব এবং ভুল বোঝাবুঝি দূর করার চেষ্টা করেননি।

দলকে ঘিরে নানা কেলেঙ্কারির অভিযোগ সামনে আসছিল। এসব ঘটনা ঠিকমতো সমাধান না করে ক্ষণস্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছিল। যেমন- কোভিড লকডাউনের সময় পার্টি করা, যৌন অসদাচরণের অভিযোগ এবং মিনি বাজেট, যার ফলে সুদের হার বেড়েছিল।

নিঃসন্দেহে এসব পরিবর্তনের ইচ্ছা টোরিদের মধ্যে ছিল। তবে জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়া, যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার (এনএইচএস) অবনতি এবং অবৈধ অভিবাসন বন্ধে কনজারভেটিভ পার্টি ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেছেন ভোটাররা।

ডানপন্থিদের উত্থান

আটবারের চেষ্টায় প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন ডানপন্থি রিফর্ম ইউকে পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজ। তার নির্বাচনে ফিরে আসার বিষয়টি কনজারভেটিভ পার্টির জন্য এক ধরনের কাঁটা তৈরি করেছিল।

কিছু ডানপন্থি ভোটার রিফর্ম ইউকে পার্টির দিকে ঝুঁকেছিলেন। তারা চান, যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি আরও কঠোর হোক এবং আয়কর কমিয়ে আনা হোক।

আবার, বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথাবার্তার কারণে কিছু মধ্যপন্থিও টোরিদের সঙ্গ ত্যাগ করেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে পরাজয় কি অনিবার্য ছিল? যদিও বেশিরভাগ টোরিই নির্বাচনের ফলাফলকে ‘অপ্রত্যাশিত নয়’ বলেছেন। তবে কেউ কেউ মনে করেন, এই ভরাডুবি কিছুটা হলেও কমানো যেতো।

ঋষি সুনাকের গাফিলতি ছিল?

কনজারভেটিভ পার্টির ভরাডুবির জন্য প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের গাফিলতির অভিযোগ এড়ানো যায় না। যেমন- তিনি গত ৬ জুন ডি-ডে (নরম্যান্ডি অবতরণ, যেটিকে সংক্ষেপে ডি-ডে বলে। ডি-ডে ছিল নাৎসি বাহিনীর প্রথম বড় কোনো পরাজয়) স্মরণের দিন তাড়াতাড়ি চলে যান।

যদিও বরিস জনসনও প্রচুর গাফিলতি করেছিলেন। জনসনের কিছু ভক্ত মনে করেন, ঋষি সুনাক ভোটারদের কাছে ততটা আকর্ষণীয় ছিলেন না।

সেইসঙ্গে, সুনাক কেন জুলাই মাসে নির্বাচনের ডাক দিয়েছিলেন, তা নিয়ে এখনো কারও কারও মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে।

কনজারভেটিভ পার্টির প্রচার গুরু আইজ্যাক লেভিডো মনে করেন, নির্বাচনের তারিখ আরও পিছিয়ে দিলই হয়তো দলের জন্য ভালো হতো।

কারণ, সরকার যেসব নীতি গ্রহণ করেছিল সেগুলোর দৃশ্যমান প্রভাব দেখার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করা দরকার ছিল। বিশেষ করে, অবৈধ অভিবাসীদের রুয়ান্ডায় পাঠানো এবং সুদের হার কমানোর নীতি। এসব নীতির ইতিবাচক ফলাফল দেখার জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন লেভিডো।

কনজারভেটিভদের গ্রহণ করা নীতিগুলো যে কাজ করছিল না, তা বুঝতে পেরেছিলেন ভোটাররা। এটি সামলাতে ভোটারদের সামনে কোনো অকাট্য যুক্তি-প্রমাণ হাজির করতে পারেনি কনজারভেটিভ পার্টি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা
কেএএ/

Read Entire Article