কনভেনশন হলে কী হচ্ছিল জানা ছিল না: আদালতে সুমাইয়া

1 month ago 11

আদালতের অনুমতি নিয়ে সুমাইয়া তাহমিদ জাফরিন বলেন, ‘আমি আমার স্বামীর সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে কী ধরনের কাজ হচ্ছি তা আমার জানা ছিল না। আমাকে রিমান্ড দিয়েন না স্যার (বিচারক)। আমি কোনো অন্যায় কাজ করিনি।’

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহর আদালতে রিমান্ড শুনানিতে এ কথা বলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণের ঘটনায় রাজধানীর ভাটারা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় গ্রেফতার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন।

এ মামলায় মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনের ৫ ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও অপারেশন ঢাকা ব্লকেডের ম্যানেজমেন্ট সদস্য আদনান বিন আব্দুল্লাহ চৌধুরীর সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এদিন আসামিদের আদালতে হাজির করে সুমাইয়াকে সাতদিন ও আদনানকে দশদিন রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির গুলশান বিভাগের পরিদর্শক মো. জেহাদ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক দিদার ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল কাইয়ুম নয়ন আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।

শুনানিতে তারা বলেন, আসামিরা রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার কে বি কনভেনশন হলে সরকারিবিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক মিটিং করেছেন। আসামিরা কিন্তু বসে নেই। অপারেশন ঢাকা ব্লকেডের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছেন। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষের সঙ্গে আসামি সুমাইয়া এএসপি পরিচয় দিয়ে মিটিং করেছেন। সুমাইয়া ও তার স্বামী মিলে এ চক্রান্ত করছেন। তারা শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য এসব কাজ করেছেন। কেন এতগুলো লোক সমাবেশ করলেন? কেন নিজেকে মিথ্যা পরিচয় দিলেন, তা রাষ্ট্রের জানা দরকার। এজন্য আসামির সর্বোচ্চ রিমান্ডের প্রার্থনা করছি।

আসামি পক্ষের আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহীনসহ আরও কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তারা বলেন, সরকার এতটা ঠুনকো না, যে একটা বৈঠক সরকারের পতন হবে। এত দুর্বল সরকার নয়। আসামি সুমাইয়াকে সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াও গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে এ মামলায় সন্দিহানভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার এজাহারে সুমাইয়ার নাম উল্লেখ নেই। রিমান্ড বিষয়ে মহিলা, শিশুর, অসুস্থ রোগীর শিথিলতা আইনে শিথিলতা রয়েছে। কি কারণে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাও জানেন আসামিরা। প্রয়োজনে তাদের জেলগেট জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। আসামির রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিনের প্রার্থনা করছি।

এরপর আদালতের অনুমতি নিয়ে সুমাইয়া তাহমিদ জাফরিন বলেন, কে বি কনভেনশন হলে এএসপি পরিচয় অন্য কেউ ঢুকেছে। কিন্তু আমার নামে দোষ চাপানো হচ্ছে। কে বি কনভেনশন হলে আগে থেকে সব কিছু অ্যারেঞ্জড করা ছিল। আমি আমার স্বামীর সঙ্গে ওখানে গিয়েছিলাম। ওখানে কী হচ্ছে সে সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। আমাকে রিমান্ড দিয়েন না স্যার (বিচারক)। আমি কোনো অন্যায় কাজ করেনি।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহর আদালত সুমাইয়ার পাঁচদিন ও আদনানের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ৬ আগস্ট চট্রগ্রামের নিজ বাসা থেকে আদনানকে ও মিরপুরের ডিওএইচএসের বাসা থেকে সুমাইয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৮ জুলাই বসুন্ধরাসংলগ্ন কে বি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ একটি গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা মিলে ৩০০-৪০০ জন অংশ নেন। তারা সেখানে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারাদেশ থেকে লোকজন এসে ঢাকায় সমবেত হবেন। তারা ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন।

ওই ঘটনায় গত ১৩ জুলাই রাজধানীর ভাটারা থানার উপপরিদর্শক জ্যোতির্ময় মন্ডল সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করে।

পরের দিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা আহাদুজ্জামান মোল্লার স্ত্রী শামীমা নাসরিন শম্পা ও বরগুনার সোহেল রানার দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

এমআইএন/এমএএইচ/জিকেএস

Read Entire Article