আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগের কথা। ১৮৭৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারিতে খুলনার সর্ব দক্ষিণে কয়রা উপজেলার ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের কোলঘেঁষা অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের শেখ সরদার পাড়া গ্রামে এক বিস্ময়কর কাব্য প্রতিভার জন্ম হয়। কিংবদন্তিতুল্য এই কবির নাম এবাদুল্লাহ।
স্বল্প শিক্ষিত এই কবির কাব্য সুষমা, ছন্দ-লালিত্য, অনুপম উপমা ও উৎপ্রেক্ষা অলংকার পাঠক মনকে মুগ্ধ করে তুলেছিল। প্রবাদ প্রবচনের মতো মানুষের মুখে প্রচলন ছিল কবি এবাদুল্লাহর কবিতা। দক্ষিণের সীমানা পেরিয়ে ভারতের ২৪ পরগনায় কবির পরিচিতি ছিল সমানভাবে।
তৎকালীন সামাজিক অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল, সভা সমাবেশে এমনকি বিবাহ অনুষ্ঠানে তার কবিতা পড়ে পরস্পর মালাবদল হতো। তৎকালীন সময়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন জনপদে জন্ম নেওয়া এই বিরল প্রতিভা সম্পন্ন কবির- ঝরাফুল, কাওসার, মালঞ্চ, মুক্তাহার ও জরুরি নসিহত নামে ৫টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল।
সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে দরিদ্র এ কবির মুক্তা সদৃশ মূল্যবান বইগুলো কালের গহ্বরে প্রায় সম্পূর্ণ হারাতে বসেছিল। এই অমর কবি জীবদ্দশায় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দেশের আপামর মানুষের কাছে তার কাব্য সুষমা তুলে ধরতে পারেননি।
শত বছর পর তার হারিয়ে যাওয়া দুষ্প্রাপ্য ৫টি কাব্যগ্রন্থ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছেন এতদঞ্চলের আর একজন খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক ও গবেষক আ ব ম আব্দুল মালেক। সালেহিয়া লাইব্রেরির সহায়তায় অবসর প্রাপ্ত এই অধ্যাপক ‘কবি এবাদুল্লাহ ও তার কাব্যসমগ্র’ নামক বইটি সংকলন ও সম্পাদনা করে একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে।
কবি এবাদুল্লাহ দক্ষিণ বঙ্গের একজন খ্যাতনামা সাহিত্যিক। তার ছন্দের জাদুতে সমসাময়িক কবিদের তিনি আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন। তিনি একজন সাধক ও ধর্মানুরাগী ছিলেন।
সম্প্রতি উত্তর বেদকাশীর ঐতিহাসিক কাছারি বাড়ির বৃক্ষমেলা মঞ্চে ওই গ্রন্থখানার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সাহিত্যিক ও গবেষক আ ব ম আব্দুল মালেক ‘কয়রা উপজেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য মাওলানা হাবিবুল্লাহর জীবনী’সহ একাধিক গ্রন্থ রচনা করে মানুষের সুনাম কুড়িয়েছেন।
কাব্যগ্রন্থসমূহের সংকলক আ ব ম আব্দুল মালেক বলেন, কবি এবাদুল্লাহ ছিলেন দক্ষিণের সাহিত্য জ্যোতি। আমার সাহিত্যকর্ম আজ সার্থক হয়েছে। আমি কবি এবাদুল্লাহর মতো অমর কবির সাহিত্যকর্ম তুলে ধরতে পেরেছি।