চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম উত্তর ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণসহ চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধীদের একাংশ। সমাবেশ থেকে তারা গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাদের বিচার দাবি করে।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রামের লালদিঘী থেকে সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর বিক্ষোভ মিছিল প্রেসক্লাব হয়ে জামালখান চত্বরে জমায়েত হয়ে সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, শাপলা চত্তরের হত্যাকাণ্ডের বিচার ও বিডিআর হত্যাকাণ্ডসহ ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমলে সংগঠিত গুম-খুন-ধর্ষণসহ সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সম্মেলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রিদুয়ান সিদ্দিকী, সিয়াম ইলাহী বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন আহ্বায়ক কমিটির (দক্ষিণ জেলা) যুগ্ম আহ্বায়ক জোবায়েরুল আলম মানিক, সাইফুর রহমান রুদ্র ছাড়াও নতুন কমিটির অনেকেই বক্তব্য দেন।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, কেন্দ্র থেকে চাঁদাবাজি ও ডটগ্যাং সদস্যনির্ভর অযাচিত একটি কমিটি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর চট্টগ্রাম উত্তর ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায়। বীর চট্টলার ছাত্র জনতা এমন অযাচিত পকেট কমিটি কোনোদিন মেনে নেবে না। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা কমিটি বাতিলের ব্যবস্থা না নিলে রাজপথেই এর সমাধান হবে।
বক্তারা আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগের কর্মীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে। এর নেপথ্যে কারা সেটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। জুলাই বিপ্লবের সম্মুখ যোদ্ধাদের অবমুল্যায়ন করে মাইম্যান কমিটি বীর চট্টলা মেনে নেবে না।’
বক্তারা বলেন, জুলাই আগস্টের হত্যাযজ্ঞ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সংস্কারের দোহাই দিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। সন্ত্রাসী সংগঠন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না। ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডারদের গ্রেপ্তারে প্রশাসনের অনীহা প্রকাশ পাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজ হতে হবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার করা। এ ছাড়া পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা রেজিমে শাপলা হত্যাকাণ্ড ও পিলখানা হত্যাকাণ্ড ফ্যাসিস্ট রেজিমের গোড়াপত্তন হওয়ার অন্যতম কারণ। নির্বাচনের আগেই উক্ত হত্যাকাণ্ডসমূহের বিচারসহ সকল গুম-খুন-ধর্ষণসহ সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানান বক্তারা।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমন্বয়ক এজিএম বাপ্পী, নাফিজা সুলতানা অমি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান মুজাহিদ, মহানগর ও উপজেলা প্রতিনিধি অর্ক সাইফুল ইসলাম, নাফিজ ইমন, ইমরান হোসেন, হ্নদয় চৌধুরী, বেলাল হোসেন প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যদের দলভুক্ত করার অভিযোগ উঠার পর চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীরা দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। সক্রিয় শিক্ষার্থীদের বৃহৎ অংশটি সমন্বয়ক রাসেল আহমেদের অনুসারী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন গঠিত তিন কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন ও সড়ক অবরোধ করেছিল শিক্ষার্থীদের এক অংশ। আজকের বড় শোডাউন করে কমিটি বাতিলের দাবি জানালো কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রাসেল আহমেদের অনুসারীরা।