কমতি নেই জোগানে, ‘আয়ের অর্ধেক ব্যয়ই’ খাবারের পেছনে

23 hours ago 6

খাদ্য উৎপাদন ও মজুতে রেকর্ড সাফল্য অর্জন করলেও বাংলাদেশের মানুষ এখনো পিছিয়ে আছে ক্রয়ক্ষমতা ও নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তায়। গত অর্থবছরে দেশে পাঁচ কোটি টনের বেশি দানাদার খাদ্য উৎপাদনের নতুন মাইলফলক ছোঁয়া গেলেও মূল্যস্ফীতি ও ভেজাল খাদ্যের চাপে সাধারণ মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা এখনো ঝুঁকিতে।

আবার খাদ্য উৎপাদন ও স্থিতিশীলতার মানদণ্ডে বাংলাদেশের কিছুটা উন্নতি হলেও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তায় উন্নতি হচ্ছে না। ফলে এই চার মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে খাদ্যনিরাপত্তার পুরো বিষয়টিতে এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশ।

এ অবস্থায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৬০ শতাংশেরও বেশি পরিবার তাদের মোট আয়ের অন্তত অর্ধেক খাবারের পেছনে ব্যয় করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে খাদ্যের উৎপাদন বাড়লেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না খাদ্যে মূল্যস্ফীতি। আবার অধিক ফলনের ঝোঁকে দেশে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার বাড়ছে, যে কারণে খাদ্যের নিরাপত্তা দিন দিন কমছে। যদিও গত এক বছরে দেশে সরকারি পর্যায়ে খাদ্যের মজুত উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে, যা খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি কমিয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক খাদ্য বিতরণ কার্যক্রমও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে।

দানাদার খাদ্য উৎপাদনে মাইলফলক

কৃষকরা ধীরে ধীরে দেশীয় জাত থেকে সরে এসে উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ বাড়ানোর কারণে প্রথমবারের মতো ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চার কোটি টনের বেশি চাল উৎপাদন করেছে বাংলাদেশ। ওই বছর চার কোটি ছয় লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছিল, যা তার আগের অর্থবছরের তুলনায় চার দশমিক এক শতাংশ বেশি।

আরও পড়ুন
চব্বিশের অস্থিতিশীলতায় ‘তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় বাংলাদেশ’
গুদামে রেকর্ড মজুত, বোরোতে সর্বোচ্চ ধান-চাল সংগ্রহের পথে সরকার
দেশে ধান-চাল কেনার টার্গেট পূরণ হলে আমদানি করা লাগবে না

এদিকে সর্বশেষ গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) উৎপাদন আরও ১৩ লাখ টন বেড়ে ৪ কোটি ১৯ লাখ টন হয়েছে। ওই বছর ২ কোটি ২৬ লাখ টন বোরো, ১ কোটি ৬৫ লাখ টন আমন ও ২৮ লাখ টন আউশ ধান উৎপাদন হয়েছে।

এই অর্থবছরে গম উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ টন আর ভুট্টা ৭৪ লাখ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ দুই ফসলের উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ১১ লাখ টন ও ৬৭ লাখ টন।

ফলে এ তিন ফসল মিলে গত অর্থবছরে দেশে মোট দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৩ লাখ টন। যা আগের অর্থবছরে ছিল ৪ কোটি ৮৭ লাখ টন।

ফলে প্রথমবারের মতো এক অর্থবছরে পাঁচ কোটি টনের বেশি দানাদার খাদ্য উৎপাদন করেছে বাংলাদেশ।

কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে বলেন, মূলত খাদ্য উৎপাদন বাড়াচ্ছে চাল ও ভুট্টা। এ দুই ফসলের ক্ষেত্রে কৃষকরা আধুনিক জাতের চাষাবাদে ঝুঁকেছেন। উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের ফসল চাষ করছেন। দিন দিন কৃষি জমির পরিমাণ কমলেও দুই-তিন ফসলি জমি চাষের কারণে আবাদি জমি বেড়েছে।

খাদ্যশস্যের মজুত ইতিহাসে সর্বোচ্চ

ভালো উৎপাদনের পরও অন্তর্বর্তী সরকার চাল ও গম আমদানি অব্যাহত রেখেছে। যে কারণে সরকারি পর্যায়ে সবোর্চ্চ মজুত তৈরি হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এখন সরকারের কাছে ১৫ লাখ ৬৭ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ লাখ ৯ হাজার টন চাল, ৪ হাজার টন ধান ও ৫৪ হাজার টন গম।

কমতি নেই জোগানে, ‘আয়ের অর্ধেক ব্যয়ই’ খাবারের পেছনে
চলতি বোরো সংগ্রহ মৌসুমে সর্বোচ্চ ধান-চাল সংগ্রহ করেছে খাদ্য অধিদপ্তর/ফাইল ছবি

এদিকে মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশের খাদ্যশস্যের মজুত এখন ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এটি শেষ ২০২২ সালের অক্টোবর মাসের আগের রেকর্ড ১৪ লাখ ৩৫ হাজার টনকে ছাড়িয়ে গেছে।

এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, বোরোর ভালো উৎপাদন, রেকর্ড পরিমাণ সংগ্রহ এবং বাজারের দামের সঙ্গে সরকারি ক্রয়মূল্যের সামঞ্জস্যের ফলেই এই উল্লেখযোগ্য মজুত সম্ভব হয়েছে।

আরও পড়ুন
দক্ষিণ এশিয়ায় কমবে মূল্যস্ফীতি, তবুও শীর্ষে থাকবে বাংলাদেশ
আগস্টে মূল্যস্ফীতি কমে ৮.২৯ শতাংশ, ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮.৩৬ শতাংশ

মজুত আরও বাড়াতে সরকার ডিসেম্বর মাসের মধ্যে অতিরিক্ত ৫ লাখ টন চাল এবং ৪ লাখ টন গম আমদানির পরিকল্পনা করেছে।

এদিকে এ বছর প্রায় ১৭ লাখ ৩ হাজার টন বোরো সংগ্রহ করে নতুন রেকর্ড করেছে সরকার। ধান সংগ্রহ করেছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার টন। এ কারণেও সরকারের মজুত বেড়েছে।

বছরজুড়ে ভর্তুকির খাদ্য কর্মসূচি

এখন খোলাবাজারে খাদ্যশস্য বিক্রি (ওএমএস), খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি (এফএফপি) এবং স্কুল ফিডিং কর্মসূচির মতো বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের এক কোটির বেশি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

খাদ্য অধিদপ্তর বলছে, বর্তমানে ওএমএস কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশজুড়ে ১ হাজার ৯০২টি কেন্দ্রে ১ কোটি ২২ লাখ পরিবারের কাছে প্রতি মাসে পাঁচ কেজি চাল ৩০ টাকা কেজি দরে ভর্তুকিমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া তালিকাভুক্ত চা বাগানের শ্রমিকদের কাছে মাত্র ১৯ টাকা কেজি দরে গম বিক্রি করা হচ্ছে।

পাশাপাশি, ৫৫ লাখ পরিবার এখন প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছে। আগে এই কর্মসূচি পাঁচ মাস চললেও বাজারে বেশি দামে চাল কিনতে বাধ্য হওয়া পরিবারগুলোর ওপর চাপ কমাতে আগস্ট থেকে তা ছয় মাসে বাড়ানো হয়েছে।

আবার দুস্থ নারীদের জন্য পরিচালিত ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট’ কর্মসূচির আওতায় ১০ লাখ ৪০ হাজার নারী মাসিক ৩০ কেজি চাল পাচ্ছেন।

কমতি নেই জোগানে, ‘আয়ের অর্ধেক ব্যয়ই’ খাবারের পেছনে
সেপ্টেম্বর মাসে দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে/ফাইল ছবি

খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো বাড়ানোর ফলে এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে সুবিধাভোগী মানুষের সংখ্যা বেশি। এ সরকার জনগণের পুষ্টি এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক বাজারের অস্থিরতা ও রাজনৈতিক পালাবদলের চ্যালেঞ্জর পরও বাংলাদেশের খাদ্য ব্যবস্থা স্থিতিশীল ও সহনশীল রয়েছে।

এদিকে মন্ত্রণালয় বলছে, গত অর্থবছর বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে সাড়ে ৩৩ লাখ টন খাদ্য বিতরণ করেছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছর ৩৬ লাখ ৬১ হাজার টন খাদ্য বিতরণ করা হবে।

এরপরও খাদ্য কেনার সক্ষমতায় পিছিয়ে সাধারণ মানুষ

দেশে যখন খাদ্যের জোগানের কোনো কমতি নেই বলে দাবি সরকারের, ঠিক তখনই সরকারি আরেক সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৬০ শতাংশেরও বেশি পরিবার তাদের মোট আয়ের অন্তত অর্ধেক খাবারের পেছনে ব্যয় করছে।

তাদের মধ্যে প্রতি ১০টি পরিবারের একটি খাবারের পেছনে ব্যয় করে আয়ের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি। এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, খাদ্য ব্যয় মেটাতে পরিবারগুলোর আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।

রামপুরার জামতলা এলাকায় জাগো নিউজের কথা হয় খাদ্য কিনতে কষ্টে থাকা বেশকিছু মানুষের সঙ্গে। ময়না আক্তার নামের একজন জানান, তিনি বাসাবাড়িতে কাজ করে মাসে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা আয় করেন। তার পরিবারের জন্য প্রতি মাসে ৪০ কেজি চাল কিনতে হয় প্রায় আড়াই হাজার টাকায়। এছাড়া আটা-ময়দা, তেল, চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার ও মাছ-মাংসের বাজারের পেছনে তার খরচ হয় আয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বা পাঁচ হাজার টাকার বেশি।

আরও পড়ুন
বিশ্ব খাদ্য দিবস আজ
বিএসটিআইর অযৌক্তিক সার্টিফিকেশন মার্ক ফি, ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান জাগো নিউজকে বলেন, প্রচুর মানুষ এখন খাদ্যসূচকে উন্নতির বদলে ঝুঁকির মধ্যে আছেন। উচ্চ মূল্যস্ফীতি স্থায়ী হয়েছে, ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এর ফলে প্রোটিন ও পুষ্টি গ্রহণ কমে গেছে।

খাদ্যে মূল্যস্ফীতি কেমন?

বিবিএসের হিসাব অনুসারে, গত সেপ্টেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ওই সময় আগের চেয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে।

মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধি বা আয় বৃদ্ধি কম হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ে। খাদ্যের ক্ষেত্রে সেটা সামঞ্জস্য করা সবচেয়ে কঠিন। যে কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়লে চড়ম বিপদে পড়েন নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।

তবে মাসের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। সেই তুলনায় এখন অবস্থা অনেকটা ভালো। অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নেয়। এর কিছুটা সুফল মিলছে।

নিরাপদ খাদ্য আরেক বড় সমস্যা

উৎপাদন বাড়ছে, কম-বেশি দামে মানুষ খাদ্য কিনছে। কষ্ট হচ্ছে, কখনো সরকারের মাধ্যমে ভূর্তকী মূল্যে খাদ্য মিলছে। তবে দেশে খাদ্য নিরাপত্তরা সবচেয়ে বড় সমস্যা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত হওয়া।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে ক্যানসার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

অন্যদিকে অনিরাপদ খাদ্যের কারণে মানুষের ব্যয় বাড়ছে, ভালো খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যখাতে অতিরিক্ত খরচ এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস—এই বিষয়গুলো ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করছে।

এদিকে গত আগস্টে জাতিসংঘের পাঁচটি সংস্থার (এফএও, ইফাদ, ডব্লিউএফপি, ডব্লিউএইচও ও ইউনিসেফ) যৌথভাবে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস ২০২৫’ এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) পৃথক প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

ওই প্রতিবেদন অনুসারে, শুধু খাদ্য সংকটেই নয়, স্বাস্থ্যকর বা সুষম খাদ্য গ্রহণের দিক থেকে পিছিয়ে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে গত সাত বছরে অনেকটা উন্নতি হলেও এখনো দেশের ৭ কোটি ৭১ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পায় না। দেশের ১০ শতাংশের বেশি মানুষ অপুষ্টির শিকার।

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে দেশে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। এ সংস্থাটির তথ্যও বলছে, ক্রমেই দেশে অনিরাপদ খাদ্য বাড়ছে।

আরও পড়ুন
বোরো মৌসুমে সর্বোচ্চ ধান-চাল সংগ্রহ সরকারের
আমরা ১৭ কোটি মানুষকে খাওয়াচ্ছি, আশ্রয় দিয়েছি ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এক হাজার ৭৩১টি খাবারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছিল বিএফএসএ। ওই সময় অনিরাপদ খাদ্য শনাক্ত হয় ১৯৬টি, যা মোট নমুনার ১১ শতাংশ। ২০২৩-২৪ সালে সেটা বেড়ে হয় ১৫ শতাংশ। ওই সময় এক হাজার ৩৮১টি নমুনা পরীক্ষা করে অনিরাপদ খাদ্য মেলে ২১৬টি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে নমুনা সংগ্রহ করা হয় এক হাজার ৭০টি, আদর্শমান উত্তীর্ণ হতে পারেনি ৯১টি, যা ৯ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বাধিক দুই হাজার ৩৫৪টি নমুনা সংগ্রহ করার বিপরীতে অনিরাপদ বিবেচিত হয় ২৬৮টি, যা ছিল ১১ শতাংশ।

অন্যদিকে বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফের তথ্য বলছে, ভেজাল ও দূষিত খাদ্য মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি ক্রমেই বাড়িয়ে তুলছে। দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ খাদ্যে ভেজাল রয়েছে। এই ভেজাল খাদ্য ৩৩ শতাংশ বয়স্ক মানুষ ও ৪০ শতাংশ শিশুর অসুস্থতার কারণ।

সংস্থাটির এক নিবন্ধ বলছে, বাজারের ৬০ শতাংশ শাক-সবজিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ও ৬৭ শতাংশ বোতলজাত সয়াবিন তেলে ট্রান্সফ্যাট এবং অধিকাংশ জেলার মাটিতে প্রয়োজনীয় জৈব উপাদানের অভাবের কারণে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. আলী আব্বাস মোহাম্মদ খোরশেদ জাগো নিউজকে বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, আবার উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়ের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। অতি মাত্রায় উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে মাত্রারিক্ত সার ও কিটনাশকের ব্যবহার খাবারকে অনিরাপদ করছে। এছাড়া অজ্ঞতা ও সচেতনতার কারণে যেমন কৃষকদের কাছে খাদ্য নিরাপদ থাকছে না, তেমনি কেনার পর খাবার খাওয়ার আগ পর্যন্ত খাদ্য নিরাপদ রাখার দায়িত্ব ভোক্তার, সেখানেও কিন্তু খাবার অনিরাপদ হচ্ছে। তাই এখানে উৎপাদক, বিপণনকর্মী ভোক্তাসহ সব অংশীদারের দায়িত্ব নিতে হবে।

এসব বিষয়ে এর আগে বিএফএসএ চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) জাকারিয়া বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা যত বড় কাজ, সে তুলনায় আমাদের যাত্রা খুব অল্প সময়ের। এ সংস্থার জনবল ও ল্যাবের ঘাটতি রয়েছে। যেখানে দেশের খাদ্য স্থাপনা দ্রুত বাড়ছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের (এফপিএমইউ) মহাপরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, দেশে খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই। পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত আছে। কিন্তু আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা ও ভৌগোলিক খাদ্য উৎপাদনের কিছু ঝুঁকি রয়েছে। নিরাপদ খাদ্য এখনো চ্যালেঞ্জ আমাদের জন্য। যা নিয়ে সরকার কাজ করছে।

তিনি বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন সময় অনিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করছেন মুনাফার জন্য। সেভাবে তাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়েও তদারকি করা যাচ্ছে না। আবার সাধারণ মানুষের সচেতনতারও অভাব রয়েছে।

এনএইচ/ইএ/জেআইএম

Read Entire Article