জীবন পাল
সিলেটে সন্ধ্যার পর বিভিন্ন রাস্তায় বসা পিঠার দোকানে ভিড়ের দৃশ্যটা নতুন নয়। বিভিন্ন রকমের ভর্তা দিয়ে পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। বাসা-বাড়িতে হরেক রকম পিঠার আয়োজন থাকলেও ফুটপাত থাকে ভাপা ও চিতই পিঠার দখলে। শীত কমলেও এসব পিঠার কদর যে একটুও কমেনি, তার প্রমাণ পাওয়া যায় রিকাবিবাজার নজরুল অডিটোরিয়ামের সামনের দৃশ্য দেখে।
একদিকে চুলা থেকে নামছে, অন্যদিকে পিঠাপ্রেমীরা নিয়ে খাচ্ছেন। দোকানদারকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। শীতকালে এশার আজানের আগে পিঠা দোকানের এরকম দৃশ্য যেন চিরচেনা। অনেকে চিতইয়ের সঙ্গে ডিম দিয়ে বানাচ্ছেন ডিম চিতই। তবে সেটি কয়েকজনের কাছে পাওয়া যায়।
২ বছর আগে ভাপা ও চিতই পিঠা ৫ টাকা দিয়ে খাওয়া গেলেও বর্তমানে গুনতে হচ্ছে ১০ টাকা। ভর্তার কারণে ভাপার তুলনায় চিতইয়ের চাহিদা বেশি বলে মন্তব্য করেন ভার্সিটিপড়ুয়া পর্ণা। চিতই খেতে খেতে বান্ধবীর কথায় সহমত পোষণ করেন রাকাও।
পুরোনোর পাশাপাশি এ ব্যবসায় নেমেছেন নতুন অনেকে। ৩০ বছর বয়সী মো. আনোয়ার হোসেন পিঠার মধ্যে একটু ভিন্নতা এনে দেখছেন সফলতার মুখ। চালের গুঁড়ার সঙ্গে ডিম মিশিয়ে পিঠা তৈরি করে তার নাম দিয়েছেন ‘ডিমঝাল’। দাম রাখছেন ২০ টাকা। নভেম্বর থেকে শুরু করা এ ব্যবসায় ভালোই সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান আনোয়ার।
আরও পড়ুন
২ মাসের অভিজ্ঞতা জানালেন তিনি। বলেন, ‘১ কেজি গুঁড়ি দিয়ে শুরু করেছিলাম। প্রথম দিন মাত্র কয়েকটি পিঠা বিক্রি করতে পেরেছিলাম। সবার কাছে পিঠাটি নতুন এবং অপরিচিত ছিল। আস্তে আস্তে পিঠাটি পরিচিত হয়ে উঠছে। এখন প্রতিদিন ৬ কেজি গুঁড়ির পিঠা বানাই। একটা পিঠাও বাড়ি ফিরিয়ে নিতে হচ্ছে না।’
পিঠা খেতে আসা শাওন, অনিক ও বাপ্পু ‘ডিমঝাল’ পিঠা সম্পর্কে বলেন, ‘নতুন আইটেম, খারাপ না। এককথায় ভালো। তবে টেস্টটা ধরে রাখতে হবে। চিতই ও ভাপার সাথে নতুন একটি পিঠা যোগ হলো।’ তাদের মতে, সিলেটে শীতকালীন আরও পিঠা বিক্রির প্রচলন করা দরকার। সেটিকে শুধু মেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার দরকার নেই।
পিঠার দোকানদার মো. বিল্লাল মিয়া (৪৫) বলেন, ‘গত ৪ বছর ধরে এখানে পিঠার ব্যবসা করে আসছি। আসরের পর থেকে শুরু করে রাত ১২টা পর্যন্ত বেচাকেনা চলে। শীত কমলেও শীতকালীন এসব পিঠার প্রতি মানুষের চাহিদা আরও বেড়েছে বলতে হবে।’
শীতকালীন এ ব্যবসা ভাদ্র থেকে শুরু করে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে বলে জানালেন দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসা বিল্লাল। তিনি বলেন, ‘৬ মাস পর এ ব্যবসাকে বিদায় জানিয়ে ঝালমুড়ি ও আচারের মতো পূর্বের ব্যবসায় ফিরে যেতে হয় আমাদের।’
লেখক: ফিচার লেখক।
এসইউ/এমএস