কর্মকর্তাদের টাকায় কেনা যন্ত্রে চলে পরীক্ষা, ফি আদায় ইচ্ছেমতো

1 hour ago 3

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে টিকিট বাণিজ্যসহ রোগ নির্ণয় পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বহির্বিভাগে চিকিৎসক দেখাতে রোগীপ্রতি টিকিটের মূল্য তিন টাকা নির্ধারিত হলেও আদায় করা হচ্ছে ৫-১০ টাকা।

শুধু তাই নয়, কয়েকজন কর্মকর্তার টাকায় কেনা ডায়াগনস্টিক টুলস দিয়ে করা হয় রোগীদের বেশ কিছু পরীক্ষা। এতে রসিদ ছাড়াই হাতিয়ে নেওয়া হয় ইচ্ছমতো টাকা। অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে প্রতিবাদ করলে দুর্ব্যবহারের শিকার হচ্ছেন রোগীরা। তবে এসব বিষয়ে অবগত নন বলে দাবি করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শামসুন নাহার।

সরেজমিনে বহির্বিভাগে কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, ফার্মাসিস্ট আতিকা আঞ্জুম চৌধুরী টিকিট বিক্রি করছেন। তিনি প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন। কেউ দুই টাকা দিলে না নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন। পরে রোগীরা বাধ্য হয়ে তার চাহিদামতো টাকা দিচ্ছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে আড়াই শতাধিক রোগী টিকিট কেটে চিকিৎসক দেখান। মাসে এর পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে সাত হাজার। আর বছরে টিকিট কাটা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯০ হাজার। সে হিসেবে রোগীপ্রতি ২-৭ টাকা বেশি নিলে টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ২-৬ লাখ টাকা।

উপজেলার বাঁশবাড়ী থেকে আসা রোগী হোসনে আরা বলেন, ‌‘কাউন্টারে এসে টিকিট চাইলে পাঁচ টাকা দাবি করেন কাউন্টারে থাকা আতিকা আঞ্জুম। তিন টাকার কথা বললে তিনি আমাকে লাইনের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখেন। বলেন, বেশি কথা বললে টিকিট দেবো না। পরে বাধ্য হয়ে পাঁচ টাকাই দিয়েছি।’

শহরের নতুন বাবুপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফিরোজা আক্তার। তিনি বলেন, গাইনি সমস্যা নিয়ে তিনি গত সপ্তাহে হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওই চিকিৎসকের ব্যবহার ও পরিবেশ দেখে তার সমস্যার কথা খুলে বলতে পারেননি। পরে তিনি সেবা না নিয়ে ফিরে যান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা আতিকা আঞ্জুম চৌধুরী বলেন, ‘হাসপাতালে লোকবল সংকট। কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই কাউন্টারে বসেছি। বাড়তি কাজ করি। হাত ধোয়ার সাবান, ঝাড়ু, টাওয়েল কেনার টাকা অফিস থেকে দেওয়া হয় না। এসব কারণে বাড়তি কিছু টাকা নেওয়া হয়। এটি অফিসের সবাই জানেন।’

হাসপাতালের রোগ নির্ণয়ক কর্মকর্তা আল-আমিন ও সিনিয়র স্টাফ নার্স অমিতাভ রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের কেনা নিম্নমানের যন্ত্রপাতি দিয়ে বেশ কিছু পরীক্ষা করানো হয়। এজন্য রসিদ ছাড়াই ইচ্ছেমতো ফি নেন তারা।

এ বিষয়ে আল-আমিন ও অমিতাভ রায় বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রক্ত, ডায়াবেটিস, আরবিএস, এফবিএস ও প্রস্রাব পরীক্ষার জন্য কোনো যন্ত্রপাতি আসছে না। রোগীর সেবার কথা চিন্তা করে আমরা বাইরে থেকে এসব ডায়াগনস্টিক টুলস কিনে এনে পরীক্ষা করছি। এতে যা লাভ আসে মিলে-মিশে ভাগ করে নিই। তবে এসময় তিনি ফি আদায়ের রসিদ দেখাতে পারেননি।

তবে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রটি নিজের অধীনে কি-না জানেন না বলে দাবি করেন সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শামসুন নাহার। তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। পরে অধীনস্থ কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করলে তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

নীলফামারী সিভিল সার্জন আব্দুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে জানান, তিনি যোগদানের পর খুব একটা সেখানে যাননি। ব্যস্ততার কারণে এসব কিছু তার আড়ালে থেকে গেছে।

তিনি আরও বলেন, এসব বিষয় তাকেই (শামসুন নাহার) দেখা উচিত ছিল। তিনি দায় এড়াতে পারেন না। এ বিষয়ে তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।

আমিরুল হক/এসআর/এমএস

Read Entire Article