কর্মীদের দিয়ে উপদেষ্টা আসিফকে আক্রমণ ও অপমান করাতে পারেন না

3 months ago 49

নগর ভবন ‘ব্লকেড’ কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন নিজের কর্মীদের দিয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে আক্রমণ, অপমান ও গালিগালাজ করাতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

ইশরাক হোসেনের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, স্থানীয় কিছু কর্মীদের মাধ্যমে তিনি আসিফ মাহমুদকে এভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করাতে পারেন না, অপমানিত করাতে পারেন না, গালিগালাজ করাতে পারেন না, বাবা-মা তুলে কথা বলাতে পারেন না। এটা কখনোই রাজনৈতিক শিষ্টাচারপন্থি না। পরোক্ষভাবে এই দায় তার ওপরেও বর্তায়।

সোমবার (১৯ মে) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা বলেন। সারজিসের পোস্টটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘ইশরাক ভাইকে আমি চিনতাম সাদেক হোসেন খোকার ছেলে হিসেবে। যেদিন হাসিনার পুলিশের হাত থেকে বুক চিতিয়ে নিজের কর্মীকে ছিনিয়ে আনলেন সেদিন থেকে ইশরাক ভাইকে আমি তার পরিচয়ে চিনি, রাজনীতিবিদ হিসেবে চিনি।

তার সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে। গতানুগতিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কিংবা বাংলাদেশের পার্সপেকটিভে বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলের অন্য দশজন নেতার মতো গতানুগতিক চিন্তাধারার মনে হয়নি।

আরও পড়ুন

তিনি অনেক ক্ষেত্রেই সত্যটাকে অকপটে স্বীকার করেছেন, ইভেন সেটা দলের বক্তব্যের সঙ্গে না মিললেও। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে এই প্রজন্মের যারা আছেন তাদের থেকে সময়ের, জনগণের এবং আমাদের প্রত্যাশাটা অন্যদের তুলনায় বেশি। ইশরাক ভাই তাদের মধ্যে অন্যতম।

বিএনপি তাদের জায়গা থেকে অসংখ্যবার বলেছে এবং এটাই সত্য যে বিগত তিনটা জাতীয় নির্বাচন এবং অন্য স্থানীয় নির্বাচনগুলো ছিল একপাক্ষিক, প্রশ্নবিদ্ধ এবং অবৈধ। যে নির্বাচন অবৈধ, সেই নির্বাচনের মেয়র আমি কিভাবে হতে চাই? সেটা কিভাবে বৈধ হয়? তাহলে তো সেই নির্বাচনকে আমি বৈধতা দিয়ে দিচ্ছি।

তাহলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে শুধু ইশরাক ভাই কেন, সব জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন, ওয়ার্ড এবং সংসদীয় আসনে সবাইকে তাদের জায়গা ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। মেয়র হয়ে সাময়িক ক্ষমতার ব্যবহার করা, সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা; এসবের দিকে তাকিয়ে সামান্য কয়েক দিনের জন্য একটা চেয়ারে বসে অবৈধ নির্বাচনগুলোকে ইশরাক ভাই যদি বৈধতা দেন তাহলে এটি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে একটি কালো দাগ হয়ে থাকবে।

আমি বিশ্বাস করি তিনি তার গ্রহণযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তায় এই মাইলস্টোনগুলো ধীরে ধীরে অর্জন করে নিতে পারবেন। কিন্তু সাময়িক প্রাপ্তির আশায় অবৈধ নির্বাচনের সো-কল্ড বৈধ মেয়র হিসেবে বসে তিনি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এত বড় একটি দাগ লাগাবেন কি না সেই সিদ্ধান্ত তাকেই নেওয়া উচিত।

একটি বিষয় বিচারাধীন প্রক্রিয়ায় থাকাকালীন স্থানীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে নগর ভবনের সামনে এর চেয়ে কয়েকগুণ বড় বিক্ষোভ কিংবা অবস্থান কর্মসূচি এখন যেমন করছেন, আগামীতেও তিনি করতে পারবেন। সেই তুমুল জনপ্রিয়তা তার আছে। কিন্তু এই জনপ্রিয়তাকে তিনি অপরাধের বৈধতা উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারেন না। তার সঙ্গে এটা যায় না।

আরও পড়ুন

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের কথা চিন্তা করে না হোক, অভ্যুত্থানের সামনের সারির আপসহীন একজন নেতৃত্ব ও যোদ্ধার কথা চিন্তা করে হলেও তার স্থানীয় কিছু কর্মীর মাধ্যমে তিনি আসিফ মাহমুদকে এভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করাতে পারেন না, অপমানিত করাতে পারেন না, গালিগালাজ করাতে পারেন না, বাবা-মা তুলে কথা বলাতে পারেন না। এটা কখনোই রাজনৈতিক শিষ্টাচারপন্থি না। পরোক্ষভাবে এই দায় তার ওপরেও বর্তায়।

যারা আগামী প্রজন্মকে পথ দেখাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি তারাই যদি বিগত অবৈধ নির্বাচনগুলোকে বৈধতা দেওয়ার জন্য নিজেদের সক্ষমতার অপব্যবহার করে তাহলে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিক্রমায় ঐতিহাসিক দায় তৈরি করবে। ইশরাক ভাই সেই দায় সারাজীবনের জন্য বহন করবেন কি না সেই সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে।

আমরা তাকে ব্যক্তিত্বের আনকম্প্রোমাইজ জায়গা থেকে যে উচ্চতায় প্রত্যাশা করি, এসব গতানুগতিক কালচার পলিটিক্সের কারণে সেটা তিনি নির্দ্বিধায় হারাবেন।

রাজনৈতিক দীর্ঘ পথচলার প্রারম্ভেই ক্ষমতার সঙ্গে নীতির নেগোসিয়েশন সাদেক হোসেন খোকার উত্তরসূরীর মানায় না, ইশরাক ভাইয়ের মানায় না।’

এমকেআর/এমএস

Read Entire Article