২০২৩ সালের ১৮ আগস্টের কথা। সেদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব রাইকুল হুসাইন পাঠান। এতে শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে পরদিন সকালে তাকে আটক করে খালিয়াজুরী থানার পুলিশ।
আটকের পর রাইকুল ও তার তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। খালিয়াজুরীর মেন্দিপুর ইউনিয়নের সাতগাঁও গ্রামের বাড়িতে ভাঙচুর চালান আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পালিয়ে পালিয়ে বেড়ান পরিবারের সদস্যরা। ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এলোমেলা হয়ে যায় পুরো পরিবার।
এদিকে রিমান্ডে নিয়ে রাইকুলের ওপর নির্যাতন চালান পুলিশ সদস্যরা। একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বারবার আবেদন করেও জামিন পাননি।
এমন অবস্থায় হঠাৎ করে রাইকুলের ছোট ভাই খালিয়াজুরীর মেন্দিপুর ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাকাব পাঠানের কাছে ফোন করে পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবর নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাদের মানসিকভাবে শক্ত থাকতে বলেন তিনি। বলেন, ‘টেনশন করার কিছু নেই। ইনশা আল্লাহ সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।’
সম্প্রতি তারেক রহমানের সেই ফোনের অডিও রেকর্ড পাওয়া গেছে। সেই ফোনালাপ নিচে তুলে ধরা হলো।
তারেক রহমান: আপনি কি পাঠানের ভাই?
রাকাব পাঠান: জ্বি জ্বি, আমি রাইকুল পাঠানের ছোট ভাই।
তারেক রহমান: আচ্ছা আচ্ছা, ছোট ভাই। কী করেন আপনি?
রাকাব পাঠান: আমি ওর সাথে রাজনীতি করতাম। আমি ১ নম্বর মেন্দিপুর ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক।
তারেক রহমান: পাঠানের সাথে এর মধ্যে কি কথা হয়েছে? দেখা হয়েছে?
রাকাব পাঠান: কথা হয়েছে, কথা হয় ১৫ দিন পর পর।
তারেক রহমান: কেমন আছেন পাঠান?
রাকাব পাঠান: এখন বর্তমানে সে জেলে আছে কিন্তু অসুস্থ।
তারেক রহমান: কী হয়েছে?
রাকাব পাঠান: সে মানসিকভাবে দুর্বল। ও তো রিমান্ডে গেছিল। রিমান্ড থেকে আসার পর থেকেই তার শরীর দুর্বল। আমরা ওষুধ দিতে গিয়েছিলাম কিন্তু ওষুধ দিতে দেয় নাই। ওরে হাইকোর্ট পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হইছে। তারপরে আমাদের সোলেমান হাসান রুবেল ভাই মামলাটা দেখতেছেন। অনেক চেষ্টা করতেছেন। ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ভাইও দেখতেছেন। আপনি যদি ভাইজান (জামিনের জন্য) একটু কায়সার কামাল ভাইকে বলে দিতেন, তাহলে মনে হয় হয়ে যেত।
তারেক রহমান: আচ্ছা ঠিক আছে, আমি বলে দিব। মানসিকভাবে অসুস্থ মানে?
রাকাব পাঠান: একটু অসুস্থতা। খাওয়া-দাওয়ার সমস্যার কারণে মাথায় একটু সমস্যা হচ্ছে। পায়খানার রাস্তায় একুট সমস্যা, রক্ত যায়।
তারেক রহমান: ঠিক আছে আমরা দেখব, কী করা যায়। এ সময় পরিবারের সবাইকে শক্ত থাকতে হবে, ঠিক আছে।
রাকাব পাঠান: জ্বি জ্বি, আমরা ঠিক আছি। ওর মামলার পর থেকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমাদের ঘরে ভাঙচুর করা হইছে। আমাদের ফ্যামিলি এলোমেলো হয়ে গেছে। ওরে যে মামলার আসামি করছে, আমাদের তিনো ভাইরে ওই মামলার আসামি করা হইছে। আমাদের ধরতে পারেনি, ওরে ধরে ফেলছে। আমরা তিন ভাই পলাতক আছি। এখনো পলাতক।
তারেক রহমান: আচ্ছা ঠিক আছে। ঠিক আছে আমি দেখি কায়সারের সাথে কথা বলবো, হ্যাঁ। টেনশন করার কিছু নেই। ইনশা আল্লাহ সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
রাকাব পাঠান: আচ্ছা ভাই। এগুলোতে ভয় পাই নাই। সমস্যা নাই। অনেক ভালো লাগতেছে যে আপনার মতো লোকের সাথে আমার মতো সাধারণ লোক কথা বলতে পারছি, এতেই ধন্য।
তারেক রহমান: ঠিক আছে ভাই দোয়া করি। ভালো থেকো সবাই। আস সালামু আলাইকুম।
রাকাব পাঠান: ওলাইকুম আস সালাম।
রাইকুল হুসাইন পাঠানকে গ্রেফতার, রিমান্ডে নির্যাতন ও তারেক রহমানের ফোন করে খোঁজ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেত্রকোনা জেলা সভাপতি মো. সোলায়মান হাসান রুবেল। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের যে কর্মীর ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে ওই ব্যক্তি হচ্ছেন খালিয়াজুরী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব রাইকুল হুসাইন পাঠানের ভাই রাকাব পাঠান।
সোলায়মান হাসান রুবেল বলেন, ২০২৩ সালের আগস্টের মাঝামাঝির দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের কারণে রাইকুল হুসাইন পাঠানকে গ্রেফতার করা হয়। প্রায় এক বছর কারাভোগ করে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর তিনি মুক্তি লাভ করেন। তার খোঁজখবর নিতেই তারেক রহমান ছোট ভাই রাকাব পাঠানকে কল করেন।
কেএইচ/এমএমএআর/এএসএম