নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সানারপাড় এলাকায় আন্দোলনের সময় বিএনপির মিছিলে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের বর্বর হামলার শিকার হন লক্ষ্মীপুরের যুবদল নেতা আব্দুল মান্নান ছুট্টু। সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াছিন মিয়াসহ তার লোকজনের ৪২ কোপ পড়ে ছুট্টু শরীরে। তার বাম হাতের একটি আঙুল ও ডান পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়। মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে সেই কোপের চিহ্নই প্রমাণ করে ঘটনার ভয়াবহতা।
সম্প্রতি শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে থাকা ছুট্টুকে নিয়ে ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে ছুট্টু নিজেই বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির কাছে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়া দাবি জানান। ভিডিওটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপি নেতা এ্যানি চৌধুরীর নজরে পড়ে। এতে তারেক রহমানের নির্দেশে ছুট্টুর চিকিৎসার দায়িত্বভার নেন এ্যানি চৌধুরী। প্রথমে তিনি মোবাইলফোনে ভিডিও কলে কথা বলে এই আশ্বাস দিয়েছিলেন।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ্যানি চৌধুরী লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের মুসলিমাবাদ গ্রামে ছুট্টুর বাড়িতে যান। সেখানে তিনি ছুট্টুর চিকিৎসার দায়িত্ব, ঘর নির্মাণসহ তার ছেলের পড়ালেখার দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এসময় ছুট্টুর কথা শোনেন এবং তার ভাই ইব্রাহিম ও গিয়াস উদ্দিনসহ স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন এ্যানি চৌধুরী। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াছিন মিয়াসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দেন তিনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপি, চন্দ্রগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি এম বেল্লাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এম ইউছুফ ভূঁইয়া, জেলা কৃষক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি বদরুল ইসলাম শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল প্রমুখ।
এ্যানি চৌধুরীকে ছুট্টু জানান, হাজিরপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় ছিলেন। এলাকায় থাকতে না পেরে সিদ্ধিরগঞ্জে সানারপাড় এলাকায় ভাইয়ের বাসায় গিয়ে অবস্থান নেন। ২০১৬ সালে বিএনপির মিছিলে গেলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়াসহ তার লোকজন তাকে আটক করেন। সেখানে প্রথমে তার হাতের আঙুল কেটে দেন। একে একে তার শরীরে উপর্যুপরি কুপিয়ে মৃত ভেবে ফেলে যান তারা।
শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ছুট্টুর চিকিৎসার ভার আমি নিয়েছি। এরইমধ্যে পিজি হাসপাতাল ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে কথা বলেছি। তাকে উন্নত চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করা হবে। তাকে একটি ঘর করে দেওয়া হবে। তার ছেলের পড়ালেখার দায়িত্বও আমি নিয়েছি। তার আর আমাদের একই দাবি, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
স্থানীয়রা জানান, ছুট্টু মুসলিমাবাদ গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে। তার একটি সুন্দর সংসার ছিল। হামলার পর তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। প্রথমদিকে তার স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান পাশে থাকলেও পরবর্তী সময়ে স্ত্রী অন্যত্র চলে যান। সন্তানের দায়িত্বও আর নেননি। সন্তান এখন এতিমখানায় বড় হচ্ছে। পরে তাকে দেখাশোনার জন্য গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তি ও এক চাচাতো ভাইকে মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতনে রেখেছেন তার ভাইয়েরা। তিনি এখনো নিজে খাবার খেতে পারেন না, হাতে তুলে দিতে হয়। কারণ হাতের আঙুলগুলো মুষ্ঠিবদ্ধ করার শক্তি তার নেই। একা উঠে দাঁড়াতেও পারেন না তিনি।
ছুুট্টুর ভাই বিল্লাল হোসেন বলেন, ছুট্টু তিন মাস ইউরোপ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। ছয় মাস ওই হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছেন। তার চিকিৎসায় ৪২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এরপর বাড়িতে এনেও তাকে বেডে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আরেক ভাই গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে ছুট্টু স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারবে না। তখন চিকিৎসকরা বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। আর্থিক সংকট আর আওয়ামী লীগের লোকজনের কারণে আমরা তা পারিনি। মামলা করতে গেলেও আওয়ামী লীগের লোকজনের ভয়ে পুলিশ মামলা নেয়নি।’
কাজল কায়েস/এসআর/জিকেএস