স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবার জাহান কিনছে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি)। নিজস্ব অর্থায়নে দুটি জাহাজ কিনতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি-এর সঙ্গে চুক্তি করেছে বিএসইসি। আধুনিক বাল্ক ক্যারিয়ার এই জাহাজ দুটির নাম হবে ‘বাংলার প্রগতি’ ও ‘বাংলার নবযাত্রা’।
চলতি বছরেই জাহাজ দুটি বিএসসি-কে হস্তান্তর করা হবে। জাহাজ দুটি কিনতে ব্যয হচ্ছে ৭ কোটি ৬৬ লাখ ৯৮ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৯৩৫ কোটি টাকা। জাহাজ দুটি থেকে বছরে ১৫০ কোটি টাকা আয় হবে বলে আশা করছে বিএসইসি।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাহাজ দুটি কেনার চুক্তি সই হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিএসসির বহরে যুক্ত হতে যাওয়া জাহাজগুলোতে জ্বালানি খরচ হ্রাস ও পরিচালন দক্ষতা বেশি। প্রধান ইঞ্জিন থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গমন কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, যা পরিবেশ দুষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়। নকশা ও প্রযুক্তিগত সমাধানগুলো জ্বালানি সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশগত মানদণ্ডসম্মত এবং আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সংস্থার নির্ধারিত সর্বশেষ পরিবেশগত মানদণ্ড পূরণ করে।
জাহাজে উচ্চমানের ইউরোপীয় ও জাপানি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। জার্মান লাইসেন্সে জাহাজগুলো চীনে উৎপাদন করা হয়েছে। স্পেনের পাম্প ও নরওয়ের কম্প্রেসার ব্যবহার করা হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রথম জাহাজ অক্টোবর ২০২৫ এবং দ্বিতীয় জাহাজ ডিসেম্বর ২০২৫-এ বিএসসিকে হস্তান্তর করা হবে- বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম বিএসসির নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ কেনা হচ্ছে। নিঃসন্দেহে দেশের শিপিং ইন্ডাস্ট্রিতে এটি একটি যুগান্তকারী মাইলফলক। নতুন দুই জাহাজ বিএসসিতে যুক্ত হলে বছরে ১৫০ কোটি টাকা আয় বাড়বে। বিএসসির নিজস্ব পরিবহন সক্ষমতা প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ডিডব্লিউটি বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের সমুদ্র বাণিজ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হবে। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব গ্রিন শিপিংয়ের সম্মান অর্জন করবে।
বিএসসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বিএসসির জন্য আরও তিনটি জাহাজ কেনার বিষয় প্রক্রিয়াধীন। সব মিলিয়ে বর্তমান সরকারের সময়ে বিএসসির জন্য পাঁচটি জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন এই জাহাজগুলো যুক্ত হলে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন কেবল আয়ের দিক থেকেই লাভবান হবে না, বরং আন্তর্জাতিক মেরিটাইম বাজারে ‘গ্রিন শিপিং নেশন’ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান আরও মজবুত হবে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ কেনা সম্পর্কিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সুপারিশ গত ১৭ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন দেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি জুন ২০২৫ থেকে জুন ২০২৭ পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য এর ডিপিপি গত ৩ জুন অনুমোদিত হয়। অনুমোদন অনুযায়ী এর প্রাক্কলিত ব্যয় ১ হাজার ১৬২ কোটি ৯৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা। জাহাজ কেনার জন্য চলতি বছরের ৪ জুন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়।
প্রতিটি জাহাজের একক মূল্য ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৯ হাজার মার্কিন ডলার। দুটি জাহাজের মোট সমন্বয় করা ও সুপারিশ করা মূল্য ৭ কোটি ৬৬ লাখ ৯৮ হাজার ডলার। এটি দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য ৮ কোটি ৪ লাখ ডলার’র ৪.৬০ শতাংশ কম।
গত ৫৪ বছরে কেন বিএসইসি জাহাজ কিনেনি, এখনে কি কোনো অবহেলা ছিলো, নাকি সক্ষমতার অভাব ছিলো? সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, একটি কোম্পানি চালানোর জন্য যে ম্যানেজমেন্ট দরকার, সেই ম্যানেজমেন্ট গড়ে উঠেনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তো হয়নিই, তারপর এখানে নানা ধরনের দুর্নীতি। বিএসসি এক সময় দুর্নীতির আখড়া হিসেবে পরিচিত ছিলো।
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে বিএসসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, জাহাজ দুটি কিনতে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা লাগবে। আমরা আশা করছি জাহাজ দুটি ঠিকমতো ভাড়া হলে বছরে ১৫০ কোটি টাকা নিট মুনাফা আসবে।
এমএএস/এমএসএম