কাঁদো নদী কাঁদো: জীবনের শৈল্পিক উপস্থাপন
উম্মে হাবিবা কনা ঘটনা প্রবাহের জটিল আঙ্গিকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ধারণ করেছেন সময়, সমাজ ও জীবনের জটিলতর স্বভাবধর্ম এবং মানুষের অস্তিত্ব-সংগ্রামের টানাপোড়েন ও রূপবৈচিত্র্য। মানুষকে তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করা সহজ কাজ নয়। সে ক্ষেত্রে দেখার চোখটা ভিন্ন হওয়া চাই আর মনোলোকের গভীরতারও প্রয়োজন আছে এতে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ নিজেকে অতিক্রমের ধারাবাহিকতায় তাঁর শেষ এবং চূড়ান্ত ফসল ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাসটি। নদীর প্রতি মানুষের একরাশ ভালোবাসা ও নদীরও অপরিসীম আত্মত্যাগবোধ। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের সাথে চলমান সংকটকে ঘিরে যে রহস্যময়তা, এসব বিষয়ের শৈল্পিক উপস্থাপনই হচ্ছে ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাসটি। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ একজন চমৎকার প্রতিভাবান লেখক। তিনি তাঁর সময়ের লেখনশৈলিকে অতিক্রম করে অন্যধারায় লেখা শুরু করেন। গতানুগতিক লেখায় গদবাধা লেখা না লিখে তিনি পুরো ২০ বছরে তিনটি মাস্টারপিস উপন্যাস লিখেছেন। সেগুলো যথাক্রমে ‘লালসালু’ (১৯৪৮), ‘চাঁদের অমাবস্যা’ (১৯৬২) ও ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ (১৯৬৮)। ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ বইটিতে কুমুরডাঙ্গা গ্রামের লোকেরা হিংসুটে ও যাযাবর প্রকৃতির। এটা মূলত চরের জন্যই। চর পরে আর তাদের জীবন-জীবিকা, বাড়ি
উম্মে হাবিবা কনা
ঘটনা প্রবাহের জটিল আঙ্গিকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ধারণ করেছেন সময়, সমাজ ও জীবনের জটিলতর স্বভাবধর্ম এবং মানুষের অস্তিত্ব-সংগ্রামের টানাপোড়েন ও রূপবৈচিত্র্য। মানুষকে তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করা সহজ কাজ নয়। সে ক্ষেত্রে দেখার চোখটা ভিন্ন হওয়া চাই আর মনোলোকের গভীরতারও প্রয়োজন আছে এতে।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ নিজেকে অতিক্রমের ধারাবাহিকতায় তাঁর শেষ এবং চূড়ান্ত ফসল ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাসটি। নদীর প্রতি মানুষের একরাশ ভালোবাসা ও নদীরও অপরিসীম আত্মত্যাগবোধ। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের সাথে চলমান সংকটকে ঘিরে যে রহস্যময়তা, এসব বিষয়ের শৈল্পিক উপস্থাপনই হচ্ছে ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাসটি।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ একজন চমৎকার প্রতিভাবান লেখক। তিনি তাঁর সময়ের লেখনশৈলিকে অতিক্রম করে অন্যধারায় লেখা শুরু করেন। গতানুগতিক লেখায় গদবাধা লেখা না লিখে তিনি পুরো ২০ বছরে তিনটি মাস্টারপিস উপন্যাস লিখেছেন। সেগুলো যথাক্রমে ‘লালসালু’ (১৯৪৮), ‘চাঁদের অমাবস্যা’ (১৯৬২) ও ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ (১৯৬৮)।
‘কাঁদো নদী কাঁদো’ বইটিতে কুমুরডাঙ্গা গ্রামের লোকেরা হিংসুটে ও যাযাবর প্রকৃতির। এটা মূলত চরের জন্যই। চর পরে আর তাদের জীবন-জীবিকা, বাড়ি-ঘর-কর্ম বদলাতে হয়। এতে তারা হয়ে ওঠে সময়ের সাথে হিংস্র-শক্তিশালী-কর্মঠ আর কুসংস্কারচ্ছন্ন। স্থানীয় হিন্দু জমিদার শোষণ করতে থাকে তাদের। যখন প্রথম উদ্বোধন হয় স্টিমার ঘাটের, জমিদারকে দাওয়াত না দেওয়ায় তারা লাঠিয়াল বাহিনী এনে ঝামেলা করে। এ ছাড়া নানাভাবে ক্ষতি করতে থাকে, কষ্ট দিতে থাকে কুমুরডাঙ্গাবাসীকে।
নদীভাঙন ও চরের ফলে বাস্তুচ্যুত হয়ে মানুষের জীবন কতটা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে; ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ বইটিতে সেসবের বর্ণনা রয়েছে। গ্রামের সহজ-সরল মানুষের সংগ্রামময় জীবন; তাদের সংকট, এ অঞ্চলের জীবনকাহিনি, নদী-নির্ভর পেশা, মাছধরা তাদের জীবনকে যন্ত্রণায় বিষাদময় করে তুলেছে। প্রকৃতি কখনো মা হয়ে স্নেহ, ভালোবাসা আর সুখ দিয়েছে, কখনো কেড়ে নিয়েছে সব নিষ্ঠুরের মতো।
আরও পড়ুন
গাভী বিত্তান্ত: প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয়ের মনস্তাত্ত্বিক দলিল
দেশে বিদেশে: মানুষ যেখানে মানচিত্রের চেয়ে বড়
এখানে আমরা শুরুতেই দেখতে পাই কুমুরডাঙ্গা গ্রামে চর পরেছে, এমন রব ওঠে শহরে। যার কারণে বাঁকাল নদীতে স্টিমার চলাচল বন্ধ করার কথা চলছে। উকিল কফিল উদ্দিন অনেক চেষ্টা করেন, মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে চর পরেনি, পরলেও অল্প পরেছে। যে কারণে স্টিমার চলাচল বন্ধ হতে পারে না। নিশ্চয়ই স্টিমার চলাচল আবার স্বাভাবিক হবে। তিনি তার মেয়ের বাড়িতে যাবেন স্টিমারে চড়ে। এসব আপনমনে ভাবতে থাকেন কফিল উদ্দিন।
বইটিতে মুহাম্মদ মুস্তফার বাবা খেদমতুল্লাহ প্রথমে সহজ-সরল থাকলেও নদী ও নদীকেন্দ্রীক মানুষের জন্য নিজেকে পরিবর্তন করে লোভী ও অসৎ হয়ে যায়। তিনি তার স্ত্রী আমেনা ও ছেলে মুস্তফাকে অনেক মারধর করতো সামান্য কারণে। তবে ছেলেকে অনেক পড়াশোনা করিয়ে উকিল বানানোর স্বপ্ন দেখতো। পরবর্তীতে বড় হয়ে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে মুস্তফা উকিল হয়। তার ফুফাতো বোনের সাথে বাবা বিয়ে ঠিক করলেও অন্যজনকে বিয়ে করায় ফুফাতো বোন গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। এরপর এই আত্মহত্যার রেশ ধরে মুস্তফা নিজেকে দায়ী করতে থাকে পুরো উপন্যাসজুড়ে। সবশেষে সে-ও আত্মহত্যা করলে উপন্যাসটি শেষ হয়ে যায়।
বইটি যখন প্রথম পড়া শুরু করি, দেখা যায় স্টিমারে চল্লিশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বিভিন্ন বিষয়ে একটার পর একটা আলোচনা করে চলেছেন। ভেবেছিলাম বইটি পড়ে বিরক্ত হবো। কিন্তু এখানে নদীকেন্দ্রীক কয়েকজনের জীবনকাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। যা পড়ে অনেক বিষয় মন কেড়েছে, ক্ষত তৈরি করেছে। আশা করি বইটি আপনাদেরও ভালো লাগবে।
বই: কাঁদো নদী কাঁদো
লেখক: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
প্রকাশনী: দূরবীণ
প্রচ্ছদ: আইয়ুব আল আমিন
মূল্য: ২০০ টাকা।
এসইউ
What's Your Reaction?