কাউকে তুলে নিয়ে ‌নিরাপত্তা হেফাজতে রাখার আইনি ভিত্তি নেই: টিআইবি

1 month ago 24

শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে নিরাপত্তা হেফাজতের নামে আটকে রাখার আইনি কোনো ভিত্তি নেই বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এটি সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

সোমবার (২৯ জুলাই) এক বিবৃতিতে টিআইবি বলে, ‘আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে প্রাণহানি, বাছবিচারহীন মামলা ও ধরপাকড়ের মতো অধিকার লঙ্ঘনের বিষয় বৈধতা দিতে সরকার, ক্ষমতাসীন দল ও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর অসত্য বয়ানের ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) মিথ্যাচার যে আত্মঘাতী, গণবিরোধী ও নির্মম নাটকীয়তাপূর্ণ তা উপলব্ধি করতে আহ্বান জানাচ্ছি।’

এতে বলা হয়, ‘গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ২০০ মামলায় ২ লাখ ১৩ হাজারের বেশি আসামি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গণগ্রেফতার অভিযান চলছে।’

সংঘর্ষ বা সহিংসতার সঙ্গে দূরতম সম্পর্ক না থাকা সাধারণ মানুষকে হেনস্তাসহ গণগ্রেফতার ও মামলা দায়েরের ঘটনা সংবিধান পরিপন্থি উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সহিংসতায় যুক্তদের খুঁজে বের করতে বিভিন্ন এলাকায় গ্রেফতার অভিযানে শুধুমাত্র সহিংসতায় জড়িতদের জবাবদিহির কথা থাকলেও গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পারছি শিক্ষার্থী, পেশাজীবীসহ সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। সহিংসতার বাইরে থাকা সাধারণ মানুষ এমনকি ১৩ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত বয়সের কিশোরকেও হাতকড়া পরিয়ে আদালতে তোলার ঘটনা ঘটেছে। যা সংবিধানে দেওয়া নাগরিকের অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’

আরও পড়ুন

তিনি বলেন, ‘গ্রেফতারের পর উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা উপেক্ষা করে রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে। এটি মানবাধিকারেরও নির্মম লঙ্ঘন। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের ওপর ন্যস্ত সাংবিধানিক দায়িত্ব ও পেশাগত শপথ আরও একবার মনে করিয়ে দিয়ে বলতে চাই, আইনের রক্ষক হিসেবে নিজেদের পরিচয়ের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা থাকলে আইনের ভক্ষকের পথ থেকে বেরিয়ে এসে সাধারণ নাগরিককে হয়রানি বন্ধ করুন। শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম নিপীড়ন বন্ধ করুন।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘গণমাধ্যম সূত্রে যা জানা যাচ্ছে তাতে এমন মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, আন্দোলনের সমন্বয়কদেরকে মূলত তুলে নিয়ে গিয়ে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। গোয়েন্দা শাখা মিথ্যাচার করছে, জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে এবং নিজেদের পেশাগত দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিচ্ছে। তাছাড়া নিরাপত্তা হেফাজতের কোনো আইনি ভিত্তি নেই। শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে আটকে রাখা সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একইভাবে সমন্বয়কদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা পড়তে বাধ্য করা সংবিধানের ৩৫(৪) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। মূলত, আন্দোলন দমনের নজিরবিহীন বলপ্রয়োগের ঘটনা ঢাকতে এমন অসাংবিধানিক প্রচেষ্টার আশ্রয় নিয়েছে- এমন ধারণা হওয়া মোটেও অমূলক নয়।’

কোটা সংস্কার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে ইন্টারনেট বন্ধসহ বিভিন্ন জবাবদিহিহীন কার্যক্রম বৈধতা দিতে সরকার অসত্য বয়ান সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে বলপ্রয়োগ করে সরকারই রাষ্ট্রীয় সংস্থাসমূহকে ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ করে দিয়ে বিষয়টিকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছে, তা স্পষ্ট। নাগরিকের সংবিধান প্রদত্ত অধিকারকে পদদলিত করে গণগ্রেফতার, নির্বিচার মামলা, ব্লক রেইড, সাধারণ নাগরিককে হয়রানি ও সত্যের অপলাপ বন্ধ করতে হবে।’

এসএম/কেএসআর/এএসএম

Read Entire Article