নির্বাচন নিয়ে নানা অনিয়ম, অযাচিত হস্তক্ষেপ চলছে প্রথম থেকেই। কাউন্সিলরশিপ নিয়েও প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় ‘মন্ত্রী পরিষদ’ বিভাগ থেকেও জেলা ও বিভাগের প্রশাসকদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়ার ঘটনার অভিযোগ উঠেছে।
সেই সাথে বিসিবি, এনএসসি ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের পরিস্কার নির্দেশনা দেয়া হয় যে, কোনোভাবেই যাতে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলোর অ্যাডহক কমিটির বাইরে কাউকে কাউন্সিলরশিপ দেয়া না হয়।
প্রসঙ্গতঃ বিসিবির গঠনতন্ত্রের ৯.১ ধারায় অ্যাডহক কমিটিরই অস্তিত্ব নেই। তাই তামিম ইকবালের নেতৃত্বে ৪৮ ঘণ্টা আগে ‘বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় এবং ক্লাবের সকল পর্যায়ের ক্রিকেট খেলোয়াড় ও সংগঠকবৃন্দ’র ব্যানারে এর তীব্র প্রতিবাদ করা হয়।
আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বিসিবির এবারের নির্বাচনে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ তামিম ইকবাল, ইশরাক হোসেন, রফিকুল ইসলাম বাবু, রেদোয়ান বিন ফুয়াদ, সিরাজউদ্দীন মোহাম্মদ আলমগীর, ইসরাফিল খসরু প্রমূখ সংগঠকরা ঝাঁঝালো কণ্ঠে আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন, যদি কাউন্সিলরশিপ প্রদানে অনিয়ম, অযাচিত হস্তক্ষেপ অব্যাহত থাকে, তাহলে তা মেনে নেয়া হবে না। তখন তারা আইনের আশ্রয় নেবেন এবং প্রয়োজনে বিসিবি ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয়া হবে।
ওই আল্টিমেটামের প্রেক্ষিতে কি কাউন্সিলরশিপ প্রদানে সৃষ্ট অনিয়ম ও অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ হয় কি না? সেটাই ছিল দেখার; কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল কিছুই হয়নি। নবগঠিত জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার মধ্য থেকেই শেষ পর্যন্ত ৬৪ জেলা ও ৭ বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলরশিপ প্রদান করা হয়েছে।
তার মানে গত ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যে সব জেলা ও বিভাগ থেকে কাউন্সিলরশিপ প্রদান করা হয়েছিল, তা বাতিল হয়ে গেছে। বলে রাখা ১৭ সেপ্টেম্বর জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে কাউন্সিলরশিপ পাওয়ার পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে এক চিঠি দিয়ে অ্যাডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলরশিপ প্রদানের আবেদন করেন।
সেই চিঠি মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে সকল জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসকদের হাতে চলে যায়। যার প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনাররা কাউন্সিলরশিপ পরিবর্তন করে নিজ নিজ জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্যদের মধ্য থেকেই কাউন্সিলরশিপ প্রদান করেছেন।
তবে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে- নরসিংদী, সিলেট, নওগা, বগুড়া, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ ৬ জেলার কাউন্সিলরশিপ খালি আছে। ওই ৬ জেলার কোন কাউন্সিলরশিপ দেয়া হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ওই জেলাগুলোর ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্যর বাইরে বিএনপি পন্থী ডাকসাইটে ক্রিকেট সংগঠকদের তীব্র বিরোধিতার মুখে ওই জেলা প্রশাসকরা অ্যাডহক কমিটির সদস্যদের কারো নাম কাউন্সিলর হিসেবে বিসিবিতে এখনো জমা দেননি বা দিতে পারেননি।
নির্বাচন কমিশন থেকে তার কোন ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা ওই জেলাগুলোর ডিসিরা কাউন্সিলরদের নাম জমা দেয়নি। পাশাপাশি ঢাকার ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ নিয়েও আছে বিরাট শুভঙ্করের ফাঁকি।
ভোটার তালিকায় ২ নম্বর ক্যাটাগরি মানে ঢাকার প্রিমিয়ার, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ লিগের ক্লাবগুলোর মধ্যে থেকে ৭৬ জন কাউন্সিলর থাকার কথা। তবে সেখানে নাম আছে কেবল ৬১ জনের। নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগে যে ১৮টি ক্লাবের বিপক্ষে দুদকের তদন্ত চলছে, সেই ক্লাবগুলির মধ্যে ১৫টি ক্লাবের নাম কাউন্সিলর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়।
কিন্তু বিসিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘যেহেতু দুর্নীতি দমন কমিশনের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযোগির বিষয়ে প্রকাশ্য তদন্তের সুপারিশ করিয়াছেম তাই ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে ও জাতীয় স্বার্থে উক্ত নির্বাচন কমিশন ১৫টি ক্লাবকে বাইরে রেখে ৬১ ক্লাব নিয়ে ক্যাটেগরি-২ এর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।’
এদিকে গতকাল ২২ সেপ্টেম্বর বোর্ডে জমা পড়লেও আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা নাগাদ কাউন্সিলর তালিকা ঘোষণা করেছে বিসিবি।
এআরবি/আইএইচএস