কাজ নয়, টাকা দিয়ে কাজের ভান ধরছেন চীনের বেকার তরুণ-তরুণী

1 month ago 13

চীনে বেকার তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এক অদ্ভুত প্রবণতা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তাদের মধ্যে টাকা দিয়ে অফিসে গিয়ে চাকরি করার ভান করার এক নতুন চল শুরু হয়েছে। আর এ ধরনের সেবা দেওয়া কোম্পানির সংখ্যা চীনজুড়ে দ্রুত বাড়ছে।

চীনের ধীরগতির অর্থনীতি ও চাকরির বাজারে যুব বেকারত্ব এখনো ১৪ শতাংশের বেশি। সময়মতো বাস্তব চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ায় অনেকে ঘরে বসে থাকার চেয়ে নকল অফিসে গিয়ে সময় কাটানো পছন্দ করছেন।

নিউজিল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ড. ক্রিশ্চিয়ান ইয়াও বলেন, অর্থনৈতিক রূপান্তর ও শিক্ষার সঙ্গে চাকরির বাজারের অমিলের কারণে এ ধরনের নকল অফিস তরুণদের জন্য এক ধরনের অন্তর্বর্তী সমাধান হয়ে উঠেছে।

জার্মানির ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর সোশ্যাল অ্যানথ্রোপোলজির পরিচালক ড. বিয়াও শিয়াং মনে করেন, এই প্রবণতা তরুণদের ‘হতাশা ও অসহায়ত্ব’ থেকে জন্ম নিয়েছে। এটি মূলত মূলধারার সমাজ থেকে কিছুটা দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা।

এমন অফিস এখন চীনের শেনজেন, সাংহাই, নানজিং, উহান, চেংদু ও কুনমিংসহ বড় শহরগুলোতে দেখা যাচ্ছে। সেগুলো দেখতে আসল অফিসের মতো আছে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মিটিং রুম, টি রুম এমনকি, অনেক কোম্পানি লাঞ্চ ও স্ন্যাকসও দেয়। অংশগ্রহণকারীরা চাইলে এসব নকল অফিসে বসে চাকরি খোঁজা, নিজস্ব স্টার্টআপের পরিকল্পনা বা ছোটখাটো কাজ করতে পারেন। দৈনিক ফি সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ ইউয়ানের মধ্যে হয়ে থাকে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা।

ডংগুয়ান শহরে ৩০ বছর বয়সী শুই ঝৌ একসময় খাবারের ব্যবসা করতেন, কিন্তু ২০২৪ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছরের এপ্রিলে তিনি প্রতিদিন ৩০ ইয়ুয়ান (প্রায় ৪.২০ মার্কিন ডলার) দিয়ে ‘প্রিটেন্ড টু ওয়ার্ক কোম্পানি’ নামের এক নকল অফিসে যাওয়া শুরু করেন। সেখানে তার মতো আরও পাঁচজন ‘সহকর্মী’ আছেন। ঝৌ বলেন, মনে হয় আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করছি- এতে ভালো লাগে।

ঝৌ সোশ্যাল মিডিয়া সাইট শিয়াওহংশুতে এই অফিসের বিজ্ঞাপন দেখে যোগ দেন। তার মতে, অফিসের পরিবেশ তার আত্মনিয়ন্ত্রণ বাড়ায়। তিনি প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে আসেন, কখনো কখনো রাত ১১টা পর্যন্ত থাকেন। সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডা, খেলা বা একসঙ্গে রাতের খাবার খাওয়াও তার ভালো লাগে।

এখন ঝৌ নিজের সময়ের বড় অংশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) শেখায় ব্যয় করছেন, কারণ অনেক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এআই দক্ষতা চাওয়া হচ্ছে। তার বিশ্বাস, এসব দক্ষতা অর্জন করলে পূর্ণকালীন চাকরি পাওয়া সহজ হবে।

সাংহাইয়ে ২৩ বছর বয়সী শিয়াওওয়েন তাংও এ বছর এক মাসের জন্য এমন একটি নকল অফিসে জায়গা ভাড়া নিয়েছিলেন। গত বছর স্নাতক হওয়ার পরও তিনি পূর্ণকালীন চাকরি পাননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, স্নাতকের এক বছরের মধ্যে চাকরির চুক্তি বা ইন্টার্নশিপের প্রমাণ না দিলে ডিপ্লোমা মেলে না। তাই তিনি অফিসে বসে অনলাইন উপন্যাস লিখে কিছু আয় করলেও সেটিকে ইন্টার্নশিপ প্রমাণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান।

ডংগুয়ানের প্রিটেন্ড টু ওয়ার্ক কোম্পানির মালিক ৩০ বছর বয়সী ফেইইউ (ছদ্মনাম)। তার ভাষায়, আমি আসলে কর্মস্থল বিক্রি করছি না, বিক্রি করছি ‘অপদার্থ নই’ এই মর্যাদাবোধ। কোভিডের সময় নিজের খুচরা ব্যবসা বন্ধ হয়ে বেকার হওয়ার পর তিনি হতাশায় ভুগছিলেন। এই এপ্রিল মাসে কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেন, আর এক মাসের মধ্যে সব ওয়ার্কস্টেশন পূর্ণ হয়ে যায়। বর্তমানে ৪০ শতাংশ গ্রাহক নতুন স্নাতক, যারা ইন্টার্নশিপের প্রমাণের জন্য এখানে আসে। বাকিরা মূলত ফ্রিল্যান্সার ও ডিজিটাল নোম্যাড।

ফেইইউ বলেন, দীর্ঘমেয়াদে এটি লাভজনক নাও হতে পারে; তবে তিনি এটিকে এক ধরনের সামাজিক পরীক্ষা মনে করেন। মিথ্যা দিয়ে মর্যাদা টিকিয়ে রাখা হলেও, কিছু মানুষ এখানে সত্যিকারের পথ খুঁজে পায়।

সূত্র: বিবিসি

এসএএইচ

Read Entire Article