কবি কাজী নজরুল ইসলামকে অবশেষে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে গেজেট জারির উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য গেজেটের খসড়া অনুমোদনের জন্য বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এতদিন মুখে মুখে প্রেম ও দ্রোহের কবি কাজী নজরুলকে জাতীয় কবির স্বীকৃতি দেওয়া হলেও এর কোনো দালিলিক ভিত্তি ছিল না।
একই সঙ্গে এই স্বীকৃতির পর বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে কাজী নজরুল ইসলামের নাম সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব ও উপদেষ্টা পরিষদে উত্থাপন করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক বসবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, ১৯৮৭ সাল থেকে কাজী নজরুল ইসলামকে দেশের জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হলেও এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি নেই। শুধু কবি কাজী নজরুল ইনস্টিটিউট আইনে জাতীয় কবি হিসেবে কাজী নজরুল ইসলামের নাম লেখা আছে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের রুটিন দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব মো. আতাউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির মর্যাদা সংক্রান্ত খসড়া গেজেট আমরা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছি। কোনো কয়ারি না থাকলে হয়তো এটি অনুমোদন হয়ে যাবে। একই সঙ্গে জাতীয় কবি হিসেবে কাজী নজরুল ইসলামের নাম সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার আরেকটি প্রস্তাবও অনুমোদনের জন্য উঠছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকার নানা সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে সংবিধান সংস্কারেরও উদ্যোগ নিয়েছে। সংস্কার হওয়া সংবিধানে জাতীয় কবি হিসেবে নজরুল ইসলামের নাম অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
কাজী নজরুল ইসলাম বিংশ শতাব্দীর প্রধান বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, সম্পাদক। তার মাত্র ২৩ বছরের সাহিত্যিক জীবনে সৃষ্টির যে প্রাচুর্য তা তুলনাহীন। সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি।
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম।
তার উল্লেখযোগ্য রচনাবলি-রণ সংগীত: চল্ চল্ চল্। ছোট গল্প: ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলি মালা। উপন্যাস: বাঁধন হারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা। কবিতা: প্রলয়োল্লাস, আগমনী, খেয়াপারের তরণী, বিদ্রোহী, কামাল পাশা, খুকী ও কাঠবিড়ালি, লিচু-চোর, খাঁদু-দাদু, আনোয়ার, রণভেরী, কোরবানী ও মোহররম।
কাজী নজরুল ইসলাম জগত্তারিণী স্বর্ণপদক, স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, পদ্মভূষণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধি পেয়েছেন।
১৯৪২ সালে কাজী নজরুল মারাত্মকভাবে স্নায়বিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে পড়লে আকস্মিকভাবে তার সব সক্রিয়তার অবসান হয়। মৃত্যু অবধি সুদীর্ঘ ৩৪ বছর তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালে তাকে সপরিবারে কলকাতা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে। ১৯৭৬ সালে তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। সেই বছরই ২৯ আগস্ট (১২ ভাদ্র, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
আরএমএম/এসআইটি/এএসএম