কাজে আসছে না প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বসানো ডিজিটাল হাজিরা মেশিন

1 day ago 7

কাজে আসছে না মাদারীপুরের বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হাজিরার জন্য বসানো বায়োমেট্রিক ডিজিটাল হাজিরা মেশিন। দিনের পর দিন ব্যবহার না করায় এগুলো নষ্টের পথে। এতে করে সরকারের লাখ লাখ টাকা গচ্চা যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছয় বছর আগে মাদারীপুরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হাজিরার জন্য বায়োমেট্রিক ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপন করা হয়। মেশিনগুলোতে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ নেই। ফলে কোনো কাজে আসছে না আধুনিক এ যন্ত্রগুলো। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে যন্ত্রগুলো বসানো হয়েছিল।

মাদারীপুর সদর উপজেলার ২০২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জন্য এ হাজিরা মেশিন কেনা হয়েছিল। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে এক একটি মেশিন প্রায় ১৫ হাজার টাকা করে কেনা হয়েছিল। অথচ বায়োমেট্রিক পদ্ধতির এ ডিজিটাল হাজিরা মেশিন বসানোর পর আর কোনো খোঁজ নেয়নি কোম্পানি। ফলে প্রতিটি বিদ্যালয়ের মেশিনগুলো এখন কোনো কাজে আসছে না। কোন বিদ্যালয়ের দেওয়ালে, আবার কোনোটি টিনের বেড়ায় লাগানো হয়। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে মেশিনগুলোর খোঁজ নেই। আর যেগুলো আছে সেগুলো কোনো কাজে আসছে না। ৬ বছর ধরে এভাবে পড়ে আছে বায়োমেট্রিক ডিজিটাল হাজিরা মেশিনগুলো।

কাজে আসছে না প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বসানো ডিজিটাল হাজিরা মেশিন

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়া এলাকার ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পৌর এলাকার রিজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৭৫ নম্বর কলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০১ নম্বর দত্ত কেন্দুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অধিকাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ডিজিটাল হাজিরার মেশিন বসানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো কাজে আসেনি। শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে প্রবেশ ও যাওয়ার জন্য বসানো ডিজিটাল হাজিরার মেশিনগুলোতে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ নেই। অযত্ন, অবহেলার কারণে পুরো প্রকল্প কোনো কাজে আসেনি।

মাদারীপুরের চরমুগরিয়া এলাকার ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের দেওয়ালে মেশিনটি এভাবে পড়ে থাকতে দেখছি। এটি কী কাজের জন্য বা কেন বসিয়েছে তা আমরা বলতে পারবো না।

মাদারীপুরের ১০১ নম্বর দত্ত কেন্দুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রিতা রাণী বলেন, আমার মেয়ে এ স্কুলে পরে। কয়েক বছর আগে বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের হাজিরার জন্য ডিজিটাল মেশিন বসানো হয়েছিল। এটি সরকারের ভালো উদ্যোগ ছিল। কারণ অনেক সময় শিক্ষকরা সময়মতো বিদ্যালয়ে আসে না। দেরি করে এসেও হাজিরা খাতায় সই দেওয়া যায়। কিন্তু ডিজিটাল এ মেশিনগুলো চালু থাকলে, কোন শিক্ষক কোন সময় এসেছেন সেটি দেখা যায়। তাই বাধ্য হয়ে শিক্ষকরা সময়মতো স্কুলে আসতো। এজন্য এ ডিজিটাল হাজিরা মেশিন চালুর দাবি করছি।

মাদারীপুরের রিজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন নাহার বলেন, শিক্ষকদের হাজিরার জন্য বায়োমেট্রিক ডিজিটাল হাজিরা মেশিন বসানোর উদ্যোগ ভালো ছিল। কিন্তু এগুলো বসানো হলেও একটিরও কার্যক্রম আমরা দেখতে পাইনি। এগুলো কখনই ব্যবহার করা হয়নি। ছয় বছর ধরে স্কুলের দেয়ালে এভাবে পরে আছে।

কাজে আসছে না প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বসানো ডিজিটাল হাজিরা মেশিন

নাম না প্রকাশে কয়েকজন শিক্ষক জানান, সরকারি অর্থ লুটপাট করার জন্য এ প্রকল্প করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের নামে লাখ লাখ টাকা গচ্চা গেছে। এ মেশিনগুলো চালু থাকলে সবার জন্য ভালো হতো।

মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরীফ মুহাম্মদ ইমারত হোসেন বলেন, মেশিনগুলো কেন ব্যবহার হচ্ছে না বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি নতুন এসেছি, পুরোনো কাগজপত্র না দেখে বেশিকিছু বলতে পারবো না।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, যন্ত্রগুলো কেনার ব্যাপারে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অনিয়ম ও দুর্নীতি থাকলে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এগুলো শিক্ষকদের হাজিরা নিশ্চিত করার জন্য কেনা হয়েছিল। এটা খুব ভালো উদ্যোগ ছিল।

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/আরএইচ/জিকেএস

Read Entire Article