কাঠগড়ায় প্রশাসন, বহাল তবিয়তে কোম্পানীগঞ্জের ওসি

3 weeks ago 12

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদা পাথর লুটপাটের ঘটনায় সমালোচনার মুখে অবশেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহারকে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু এতো আলোচনা-সমালোচনার মুখেও বহাল তবিয়তে আছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান।

আগে থেকেই সাদা পাথরসহ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পাথর কোয়ারী থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ ছিলেন ওসি। সর্বশেষ সাদা পাথর লুটপাটের ঘটনায় ফের আলোচনায় আসেন কোম্পানীগঞ্জের ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান।

এদিকে সাদা পাথর লুটপাটের পর যৌথবাহিনীর অভিযানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাথর উদ্ধার অভিযানেও পুলিশের উপস্থিতি খুব একটা ছিল না। এমনকি সোমবার বদলির আদেশ পাওয়া সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার সম্প্রতি রাতের বেলা সাদা পাথরের পরিস্থিতি পরিদর্শনে যাওয়ার জন্য পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও পাননি। শেষ পর্যন্ত আনসার সদস্যদের নিয়ে সাদা পাথরে যান ইউএনও।

অবশ্য বদলি হওয়ার আগে ওসির সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখতে এই বিষয়টি ইউএনও আজিজুন্নাহার স্বীকার করেননি। তবে জেলা প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ বিষয়টি জাগো নিউজকে জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, সাদা পাথর লুটের বিষয়ে সবাই এক তরফাভাবে জেলা প্রশাসনকে দায়ী করছে। কিন্তু স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনসহ অন্যান্য বাহিনীর নাকের ডগায় এসব ধ্বংসযজ্ঞ চললেও তারা নীরব দর্শক ছিলেন। এমনকি পাথর উদ্ধার অভিযানে যৌথবাহিনী থাকার কথা থাকলেও সবার উপস্থিতি নেই। এসব বিষয় ভাবতে হবে। সাদা পাথরের কেন এই অবস্থা? কারা এসবের নেপথ্যে? এসব বিষয় উঠে আসা প্রয়োজন।

সাদা পাথর লুটপাটের পর গত বুধবার সন্ধ্যায় সিলেট সার্কিট হাউজে জরুরি বৈঠকে বসে জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন। বৈঠকের পর রাত ১২টা থেকে পাথর উদ্ধার অভিযানে নামে যৌথবাহিনী। রাতভর সিলেটের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ পাথর উদ্ধার করা হয়। সোমবারও বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

এসব অভিযানে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যদের দেখা গেছে। কিন্তু পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি একেবারেই ছিল না। এমনকি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার পাশেই যৌথবাহিনী চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান পরিচালনা করলেও সেখানেও পুলিশের উপস্থিতি ছিল না।

সিলেট জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, সাদা পাথর লুটপাটের পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। এখানে অনেকগুলো বিষয় জড়িত। কিন্তু এককভাবে দায়ী করা হচ্ছে প্রশাসনকে। অথচ জেলা প্রশাসন তার কার্যক্রম ঠিকই পরিচালনা করেছে। কিন্তু অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতা সে তুলনায় ছিল না।

তিনি বলেন, প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক যৌথবাহিনীর অভিযানে পুলিশ থাকার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশ অংশ নেয়নি। যখন ট্রাকে করে দেদারসে পাথর লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তখনও সকল বাহিনী নীরব ছিল।

হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বুধবার (১২ আগস্ট) রাতে কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও লুটপাটের ঘটনায় সাদা পাথর পরিদর্শনে যাওয়ার সময় পুলিশের সহযোগিতা চান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশ না পেয়ে ঝুঁকি নিয়েই তিনি আনসার সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান।

প্রশাসনের এই কর্মকর্তা বলেন, অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের অভিযোগে জেলা প্রশাসন ১২টি অভিযান চালিয়ে ২৯১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে। কিন্তু গ্রেফতার করা হয়েছে কয়জনকে?

পুলিশের সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার পাশ কাটিয়ে বলেন, পুলিশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। যখনই তাদের সহযোগিতা চেয়েছি, পেয়েছি।

পরে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বক্তব্যের বরাত দিয়ে আবার প্রশ্নটি করলে তিনি বলেন, আসলে সেদিন সিলেটে মিটিং শেষে কোম্পানীগঞ্জ ফেরার সময় ডিসি স্যার বলেছিলেন ঘটনাস্থল দেখে যাওয়ার জন্য। তাই গিয়েছিলাম। তখন আমার সঙ্গে আনসার ছিল।

সূত্র বলছে, ‘সাদা পাথর লুটপাটের আগে ভোলাগঞ্জের রেলওয়ে রোপওয়ে বাঙ্কার এলাকায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করা হয়। তখনও ইউএনও এবং থানার ওসিকে ‘ম্যানেজ’ করেই সব করা হতো। যে কারণে ইউএনও-ওসির মধ্যে বেশ সখ্যতা রয়েছে। এজন্য ইউএনও আজিজুন্নাহার বিষয়টি এড়িয়ে যান।’

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রশাসন যখন পুলিশ চেয়েছে, তখনই পুলিশ পাঠানো হয়েছে। কোনো সময় পুলিশ যেতে একটু সময় লেগেছে। কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ঘাটতি নেই।

কোম্পানীগঞ্জের ইউএনওর বিষয়টি তিনি অবগত নন জানিয়ে বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের কোনো দূরত্ব নেই। আমরা সব সময় একসঙ্গে কাজ করি।

জেলা প্রশাসনের মামলার আসামি গ্রেফতারের বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো বেশিরভাগ জামিনযোগ্য। আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে নেয়।

কোম্পানীগঞ্জের ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এফএ/এমএস

Read Entire Article