রুমেল আহসান
সূর্য তখন ডুবে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাহাড়ি উপত্যকার শহর। রাত নামে দ্রুত, শহর ঘুমিয়ে পড়ে আগে আগে, তখন জেগে ওঠে অন্যরকম আরেকটি শহর। আমরা হেঁটে এগিয়ে চলছি।
থামেলের পথে-প্রান্তরে বিভিন্ন ধরনের দোকানের দেখা পাওয়া যায়। কেউ শীতের কাপড় বিক্রি করছেন, কেউবা পিতলের সামগ্রী, কেউ আবার হিমালয়ে ট্র্যাক করার সমগ্রী আবার কেউ কেউ বিভিন্ন ধরনের চা।
পর্যটক আকর্ষণে যা কিছু প্রয়োজন সবই পাবেন এই থামেলে। আমরা একটি দোকানে প্রবেশ করলাম। দোকানটিতে বড় আকৃতির গৃহসজ্জাসামগ্রী বিক্রি হয়, সবই পিতলের। কিছু নিকেল করা।
অসাধারণ কারুকাজ। দেখলেই কিনতে মনে চায়। পরের দোকানের দিকে এগোলাম। এবার একটি মেডিটেশন বোল দেখে চোখ আটকে গেল। মেডিটেশন বোলের শব্দ আপনাকে নিয়ে যাবে এক অনন্য ভুবনে।
রাতের গভীরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দিনের থামেলের চিত্র পরিবর্তন হতে হয়। এ এক অন্য থামেল। বিদেশিদের আনাগোনা বাড়ে। পাব ও নাইটক্লাব খুলে যায়। ক্লাবগুলোর বাইরে মানুষের ভিড়। থামেল শহরের পুরোনো অংশ। ঘরবাড়ি অধিকাংশই পুরোনো। আমাদের জমিদার বাড়িগুলোর মতো।
ভবনগুলোর প্রধান দরজা কাঠের, নকশা করা। মনে হয় একেকটি রাজবাড়ির প্রবেশদ্বার। হাঁটতে হাঁটতে ছবি বিক্রির দোকানের সামনে গিয়ে আমরা দাঁড়ালাম। বেশিরভাগ ছবিই হিমালয়, হিমালয়ের পাদদেশে জনজীবন, বুদ্ধদেব ও বুদ্ধচক্রের। হিমালয়ে সূর্যোদয়, পাহাড়ে চমরি গাইয়ের দল, পাহাড়ি পরিশ্রমী মানুষের ঋজু চেহারা, তাদের জীবিকার সুকঠিন সংগ্রামের ছবি।
কাঠমুন্ডুর থামেলে পাব, ডান্সবার, নাইটক্লাবের ছড়াছড়ি। সাহেব-মেমদের আনাগোনা বেশি। জার্মান, সুইডিশ, নরওয়েজিয়ান ভাষাভাষী অনেক বেশি। এলাকাটি অনেক বেশি আলোকজ্জ্বল, গানের জোর আওয়াজ ভেসে আসে বাইরেও। নেই কোনো বিশৃঙ্খলা। যে যার মতো আনন্দ-ফুর্তিতে মেতে আছে।
- আরও পড়ুন
সেন্টমার্টিন যাত্রা: দুর্ভোগ আর উপভোগের দুই কাহন
চলনবিলের হলুদ ফুলে মুগ্ধ পর্যটক, মৌমাছি-পাখিরা
দারিদ্র্য ও অবকাঠামোগতভাবে আমাদের চেয়ে পিছিয়ে পড়া একটি দেশ হলেও নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে আমাদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে তারা। এ শহরে পর্যটকের অভাব নেই। বিশেষ করে থামেলে তো বিদেশিই বেশি। পোশাকও তাদের বিচিত্র।
আমি শুধু ভাবছিলাম প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতবিক্ষত একটি দেশ অথচ সেই দেশের রাজধানীতে নারীরা কত স্বাধীন, কর্মচঞ্চল। রাতের গভীরতা বাড়ছে আর প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাচ্ছে থামেল। পরের দিন নতুন গন্তব্যে যেতে হবে, তাই দেরি না করে আমরা রাত ২টায় ফিরে গেলাম হোটেলে।
থামেলে যা দেখলাম তা আরেকটু বলি। থামেল তার সরু গলির জন্য পরিচিত। যা বিভিন্ন দোকান ও ক্রেতাদের ভিড় জমে থাকে। সাধারণভাবে বিক্রি হওয়া পণ্যের মধ্যে আছে খাদ্য, তাজা শাকসবজি/ফল, পেস্ট্রি, ট্রেকিং গিয়ার, হাঁটার গিয়ার, সঙ্গীত, ডিভিডি, হস্তশিল্প, স্যুভেনির, পশমী আইটেম এবং কাপড়।
ট্রাভেল এজেন্সি, ছোট মুদির দোকান, বাজেট হোটেল, রেস্তোরাঁ, পাব ও ক্লাবগুলোও রাস্তায় সারিবদ্ধ। শত শত পথচারীর পাশাপাশি গাড়ি, সাইকেল রিকশা, দুই চাকার গাড়ি ও ট্যাক্সি এই সরু রাস্তায় চলাচল করে।
থামেলের অনেক রেস্তোরাঁ ঐতিহ্যবাহী ও মহাদেশীয় খাবার পরিবেশন করে। থামেল পর্বতারোহীদের জন্য প্রাক-বেস ক্যাম্প হিসেবেও কাজ করে। এটি মাউন্টেনিয়ারিং গিয়ার শপ, বিদেশী মানি এক্সচেঞ্জ বুথ, মোবাইল ফোনের দোকান ও অসংখ্য ট্রাভেল এজেন্ট ও গেস্ট হাউসের বিস্তৃত পরিসর নিয়ে গর্ব করে।
থামেলকে কাঠমান্ডুর নাইট লাইফের কেন্দ্র হিসেবে ব্যাপকভাবে বিবেচনা করা হয়। এর বিস্তৃত রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে, লাইভ মিউজিক, পর্যটক এবং স্থানীয় উভয়ের জন্যই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
হিমলায় কন্যা নেপাল ভ্রমণে গত ১১ জানুয়ারি দুপুরে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। দীর্ঘ এক সপ্তাহের নেপাল ভ্রমণ করা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখবো জাগো নিউজ ভ্রমণে।
লেখক: সাংবাদিক, ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট।
জেএমএস/জেআইএম