কাদামাটি মাড়িয়ে যেতে হয় স্কুলে, ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থী
ফরিদপুরের সদরপুরে পদ্মা আর খাল, কাদা-পানি পেরিয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে পৌঁছান চরের শিক্ষকরা। দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩২ জন শিক্ষক বছরের পর বছর দুর্ভোগ নিয়েই স্কুলে পৌঁছান। এছাড়া এমন দুর্ভোগের কারণে প্রতিনিয়তই ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরাঞ্চলের বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে নদী পাড়ি দিতে হয় প্রায় এক ঘণ্টার মতো। বিভিন্ন সময় ঝড়-বৃষ্টি, নদীর তীব্র স্রোত, নৌযানের অভাব-সব মিলিয়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। চরাঞ্চলে রাস্তা-ঘাট না থাকায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে হয়। শুধু পদ্মা নদী নয়, পথে রয়েছে আরও দুটি খাল, যেখানে নৌকা চালিয়ে অথবা বাঁশের সাঁকো পাড়ি দিতে হয়। উপজেলা প্রশাসন বলছে, শিক্ষকরা বিদ্যালয়গুলোতে যায় না। শিক্ষকদের উপস্থিতি একেবারেই কম। ফলে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীরা ঝড়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে গিয়েছে। বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষগুলো ফাঁকা পড়ে থাকে। গরু-ছাগল বিচরণ করে। যেখানে পাঁচশ শিক্ষার্থী ছিল সেখানে এখন একশোর মতো শিক্ষার্থী আছে। ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানান, কখনো কখনো সাঁতার কেটেও স্কুলে যেতে হয় তাদের। এত ঝুঁকি নিয়েও তাদের জন্য
ফরিদপুরের সদরপুরে পদ্মা আর খাল, কাদা-পানি পেরিয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে পৌঁছান চরের শিক্ষকরা। দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩২ জন শিক্ষক বছরের পর বছর দুর্ভোগ নিয়েই স্কুলে পৌঁছান। এছাড়া এমন দুর্ভোগের কারণে প্রতিনিয়তই ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরাঞ্চলের বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে নদী পাড়ি দিতে হয় প্রায় এক ঘণ্টার মতো। বিভিন্ন সময় ঝড়-বৃষ্টি, নদীর তীব্র স্রোত, নৌযানের অভাব-সব মিলিয়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। চরাঞ্চলে রাস্তা-ঘাট না থাকায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে হয়। শুধু পদ্মা নদী নয়, পথে রয়েছে আরও দুটি খাল, যেখানে নৌকা চালিয়ে অথবা বাঁশের সাঁকো পাড়ি দিতে হয়।
উপজেলা প্রশাসন বলছে, শিক্ষকরা বিদ্যালয়গুলোতে যায় না। শিক্ষকদের উপস্থিতি একেবারেই কম। ফলে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীরা ঝড়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে গিয়েছে। বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষগুলো ফাঁকা পড়ে থাকে। গরু-ছাগল বিচরণ করে। যেখানে পাঁচশ শিক্ষার্থী ছিল সেখানে এখন একশোর মতো শিক্ষার্থী আছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানান, কখনো কখনো সাঁতার কেটেও স্কুলে যেতে হয় তাদের। এত ঝুঁকি নিয়েও তাদের জন্য কোনো ভাতা নেই। দুর্গম চরে আবাসনের সুযোগ নেই বলে প্রতিদিনই তাদের এমন কষ্টসাধ্য যাতায়াত করতে হয়। এতে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়তে হচ্ছে তাদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চরের ১০টি স্কুলের ৩২ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও ভবিষ্যৎ গড়তে প্রতিদিন নিদারুণ কষ্টভোগ করছেন। প্রতিদিন তাদের নদী, খাল আর কাদামাটি পেরিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। অনেক সময় ঝড়-বৃষ্টি বা নৌকা সংকটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথ চলতে হয় তাদের। সরকারের উচিত তাদের বিষয়টি বিবেচনা করে বিশেষ সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা।
কটিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চলে রাস্তা-ঘাট নেই। প্রতিদিন ১০-১২ কিলোমিটার পথ হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। পদ্মা পাড়ি দিয়ে দুই-তিনটি খাল নৌকায় পার হতে হয়। ছোট বাচ্চাদের কথা ভেবে সব কষ্ট সহ্য করি। কিন্তু এই দুর্গম এলাকায় শিক্ষকদের জন্য বিশেষ ভাতা ও বদলি প্রক্রিয়া সহজ করা উচিত। এভাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করা খুব কঠিন।
মোজাফফরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুমি ইসলাম বলেন, এক ঘণ্টা পদ্মা পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয়। ঝড়-বৃষ্টি আর নদীর স্রোত আমাদের নিত্যসঙ্গী। দুর্গম চরের খালগুলোতে নৌকা না পেলে কাদামাটি পেরিয়ে হেঁটে যেতে হয়। তবু নিয়মিত ক্লাস নেওয়ার চেষ্টা করি।
সদরপুর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুনুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় এক ঘণ্টার নদীপথ, তীব্র স্রোত আর নৌযানের সংকটে শিক্ষকরা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী-খাল পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যান। সড়ক-ঘাট না থাকায় মাইলের পর মাইল পথ হাঁটতে হয়। তবে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে নিয়মিত না যাওয়ার অভিযোগও সত্য।
তিনি আরও বলেন, কয়েকটি অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তপূর্বক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষকদের দাবি চর-ঝুুঁকি ভাতা। যদিও পার্শ্ববর্তী চরভদ্রাসন এলাকায় চর ভাতা আছে কিন্তু সদরপুরে চর এলাকার শিক্ষকদের কোনো চর ভাতা নেই। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানিয়েছি এবং প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য এ বিষয়ে কাজ করছি।
সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, দুর্গম চর এলাকায় যাতায়াত কষ্ট সাধ্য, এটা ঠিক। আমি নিজে কয়েকবার বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করেছি। নিয়মিত খোঁজ খবরও নিয়ে থাকি। কিন্তু শিক্ষকরা বিদ্যালয়গুলোতে যায় না বললেই চলে। শিক্ষকদের উপস্থিতি একেবারেই কম। ফলে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কমে গিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু তারা সরকারি চাকরি করেন, সেহেতু চাকরি ও শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে কষ্ট হলেও তাদের স্কুলে যাওয়া উচিৎ। শিক্ষকরা মাঝে মধ্যে হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর করেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এন কে বি নয়ন/এনএইচআর
What's Your Reaction?