তৌফিক সুলতান
গাজীপুর জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী জনপদ কাপাসিয়া। এ অঞ্চলের রাজনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সমৃদ্ধ হলেও উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কাপাসিয়া এখনো অনেক পিছিয়ে। শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় এখানকার তরুণরা কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত। ফলে তারা রাজধানীমুখী হচ্ছেন কিংবা প্রবাসে পাড়ি দিচ্ছেন। অথচ কাপাসিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদ-নদী ও ঐতিহাসিক স্থাপনাকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা হলে বেকারত্ব দূরীকরণের একটি বড় সমাধান সম্ভব।
ঐতিহাসিকভাবে কাপাসিয়া সমৃদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত গজারি গড়, জমিদার বাড়ি, পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মন্দির শুধু ইতিহাসের সাক্ষ্যই বহন করছে না বরং পর্যটনের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয় হতে পারে। এসব ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাকে সংরক্ষণ করে জাদুঘর, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কিংবা পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলা হলে স্থানীয় মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। পর্যটকেরা স্থানগুলো ঘুরতে এলে স্থানীয় গাইড, দোকানদার, রেস্টুরেন্ট মালিক, এমনকি পরিবহন ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবেন।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকেও কাপাসিয়া অসাধারণ। শীতলক্ষ্যা নদীসহ অসংখ্য খাল-বিল ও জলাশয় কাপাসিয়ার প্রধান সম্পদ। নদীগুলোকে কেন্দ্র করে নৌভ্রমণ, রিসোর্ট, ওয়াটার স্পোর্টস কিংবা ইকো-ট্যুরিজম চালু করা সম্ভব। নদীর ধারে ছোট কটেজ, রিসোর্ট, স্থানীয় খাবারের দোকান ও বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠলে শুধু স্থানীয় কর্মসংস্থানই বাড়বে না, বাইরের পর্যটকেরাও এখানে ভিড় করবেন। ফলে কাপাসিয়ার অর্থনীতি হবে গতিশীল, বেকার তরুণরা পাবেন নতুন আশার আলো।
পর্যটন শিল্প গড়ে উঠলে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সরাসরি হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর গাইড ও হস্তশিল্প ব্যবসায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে পরোক্ষভাবে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত শাক-সবজি, ফল, মাছ পর্যটকদের জন্য সরবরাহ করতে পারবেন। এতে কৃষিরও উন্নতি ঘটবে। পর্যটন শিল্প তাই শুধু কর্মসংস্থান নয় বরং সামগ্রিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির একটি হাতিয়ার হতে পারে।
আরও পড়ুন
সুন্দরবন ভ্রমণে যা যা দেখবেন
প্রকৃতির ক্যানভাসে আঁকা মধুপুর
শিক্ষিত তরুণেরা পর্যটন শিল্প থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারেন। পর্যটন ব্যবস্থাপনা, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, আতিথেয়তা, ভাষা শিক্ষা ও ট্যুর গাইডিংয়ের মতো দক্ষতা অর্জন করে তারা সহজেই চাকরির পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন। অনেকে ছোট পর্যটন ব্যবসা, ফুড কর্নার কিংবা গেস্ট হাউজ নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারেন।
তবে এ সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। প্রথমত, উন্নত অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। সড়ক, সেতু ও যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত না হলে পর্যটকেরা আগ্রহী হবেন না। দ্বিতীয়ত, ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোকে সংরক্ষণ ও সংস্কার করতে হবে। তৃতীয়ত, তরুণদের পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কাপাসিয়ার সৌন্দর্য ও ইতিহাসকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচার করা।
বেকারত্ব শুধু অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যাও বটে। যখন যুব সমাজ কর্মসংস্থানহীন হয়ে পড়ে, তখন তারা হতাশা, অপরাধ বা মাদকের দিকে ঝুঁকতে পারেন। পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা গেলে কাপাসিয়ার তরুণেরা নতুন দিগন্তের সন্ধান পাবেন। গজারি গড়, ঐতিহাসিক স্থাপনা, শীতলক্ষ্যা নদী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে যদি পর্যটন কেন্দ্রিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়, তবে কাপাসিয়া হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন নগরী। এর ফলে সম্ভব হবে কাপাসিয়ার বেকারত্ব দূরীকরণ এবং সামগ্রিক উন্নয়ন।
লেখক: প্রভাষক, ব্রেভ জুবিলেন্ট স্কলার্স অব মনোহরদী মডেল কলেজ, নরসিংদী।
এসইউ/জেআইএম