আরিফুল ইসলাম তামিম
কোলাহলমুক্ত নির্জন প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে কার না ভালো লাগে। আর তা যদি হয় কোনো লেকের মাঝখানে তাহলে তো কথাই নেই। এমনই এক নতুন পর্যটন গন্তব্য কাপ্তাইয়ের গরবা গুদি। কাপ্তাই লেকের মাঝখানে টিলার উপর একটি চাকমা পরিবারের মাটির তৈরি ১৮ বছর পুরোনো আদি বসতবাড়িটি এখন হয়ে উঠেছে পর্যটন স্পট। প্রতিদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে গরবা গুদিতে ছুটে আসছেন ভ্রমণপিপাসুরা।
নৈসর্গিক লেকের মাঝে একরাশ মুগ্ধতা নিতে এখানে পর্যটকদের আনাগোনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি ঘরোয়া পরিবেশে পাহাড়ি বৈচিত্র্য খাবার, লেকের পানির মাছ, বিভিন্ন নাস্তা, বারবিকিউ, তাঁবুতে রাত্রিযাপন থেকে শুরু করে কি নেই, সবই আছে এই গরবা গুদিতে।
সম্প্রতি ‘চুমো গরাঙ’ নামে ছন ও বাঁশের তৈরি একটি ছোট্ট ক্যাফেও যুক্ত হয়েছে গরবাতে। যেখানে পাহাড়ের সব ঐতিহ্যবাহী নাস্তা, বিভিন্ন ফল, শুকনো খাবার, চা, চিপস ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে।
প্রচলিত রিসোর্ট কিংবা হোটেলের মতো আধুনিক কিছু নয়, বরং সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে কাপ্তাই লেক ঘেরা গরবা গুদি এখন কাপ্তাই ঘুরতে আসা পর্যটকদের আগ্রহের প্রধান কেন্দ্র। গরবা গুদির পেছনেও আছে এক চাকমা নারী ও তার পরিবারের সংগ্রামী ইতিহাস। গরবা গুদি এখন মূলত একটি চাকমা পরিবারের জীবিকার প্রধান প্রয়াস।
নিলা চাকমা, পড়েছেন চট্টগ্রাম কলেজ থেকে। কাজ করেছেন দৈনিক সুপ্রভাত পত্রিকায়। তবে সাংবাদিকতা ছেড়ে পরিবার ও নিজের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় ভাগ্য বদলের আশায় শহর ছেড়ে নিজ বাড়িতে কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নেন। অক্লান্ত পরিশ্রম আর প্রচেষ্টায় নিজের বসতবাড়িটিকেই সাজিয়ে তোলেন গরবা গুদি নামে। প্রায় ১ বছর আগে এই গরবা গুদি নির্মাণের কাজ শুরু করেন নিলা চাকমা।
নিলা চাকমা জানান, মূলত পরিবার আত্নীয় সবাই মিলে গরবা খোলার সিদ্ধান্ত নেন। যেন শহুরের যান্ত্রিক জীবন ছেড়ে কিছুক্ষণের জন্য মানুষ এখানে প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পায়, নির্মল বাতাসে দোল খেতে পারে, জলকেন্দ্রীক জীবন জীবিকা দেখা, পাখির কিচিরমিচির শব্দ, পাশাপাশি পাহাড়ি নানান খাবার উপভোগ করতে পারে প্রকৃতির মাঝে। এসব চিন্তা করেই আমরা কাজ শুরু করি।
ধীরে ধীরে পরিচিত হয়ে উঠছে গরবা গুদি। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটক আসছে গরবাতে। কাপ্তাই লিচু বাগান থেকে সিএনজি যোগে এসএসডি ঘাটে নেমে ইঞ্জিনচালিত ছোট বোটে চড়ে পৌঁছাতে হবে গরবা গুদিতে। বোটে চড়ে এই স্থানটিতে যেতে কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ জলরাশি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। তাছাড়া গরবা গুদির পরিবেশ আপনাকে মাতিয়ে রাখবে প্রতি মুহূর্ত।
তবে এখানে আসতে হলে আগে থেকে যোগাযোগ করে খাবারের প্রি অর্ডার করে আসতে হয় তবেই রান্না করে আপ্যায়ন করা হয়। আপ্যায়ন কিংবা পরিবেশনায়ও আছে পাহাড়ি ঐতিহ্যর ছোঁয়া। বাঁশ, ছন দিয়ে তৈরি মাচাং ঘরে খাবার পরিবেশন করা হয়। যা আপনাকে অন্যরকম অভিজ্ঞতা এনে দেবে। শুধু তাই নয়, মেজাংয়ের উপর খাবার খেতে দেওয়া হয়। মেজাং মূলত পাহাড়ে বসবাসরতদের একটি ঐতিহ্য। অতীতে পাহাড়ে মানুষ এই মেজাংয়ে কলাপাতা রেখে খাওয়া দাওয়া করতো। অতীতের সেই রীতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে গরবাতে।
গরবা গুদির বিশাল অংশ জুড়ে, আম, লিচুসহ বিভিন্ন ফুল ফলের গাছে ঘেরা যা মৌসুম অনুযায়ী সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। সবুজ গাছগাছালি এই লেকের পরিবেশকে সবসময় শীতল রাখে। গরম কালেও এই স্বচ্ছ পানিতে গোসল করতেও নামে অনেকেই। চোখ জুড়ানো গরবার অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মুদ্ধতা নিতে এই স্থানটিতে পর্যটকদের একবার হলেও যাওয়া উচিত।
লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ (পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম)
কেএসকে/জেআইএম